সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

শেষ পর্ব: দ্যা এন্ড অব দ্যা জার্নি


প্রকাশিত:
৩১ মার্চ ২০২০ ২০:১৬

আপডেট:
৬ এপ্রিল ২০২০ ২০:০৬

আহসান হাবীব

নিউইয়র্কে আমাদের শেষ দিনে লেনিনের নেতৃত্বে আমরা রওনা হলাম জোন্স বীচে। দেড় ঘন্টা দূরে এই বীচ। আমি ভাবলাম যে বীচই হোক, যেয়ে একটা দুটো ছবি তুলে এসে বলব আটলান্টিক ওশেনে ছবি তুলেছি (পরে অফিসে মানিককে দিয়ে ফটোশপে হালকা কিছু কাজ করতে হবে হয়ত)। কি আশ্চর্য! গিয়ে দেখি ওটা সত্যিই আটলান্টিক ওশেন। নর্থ আটলান্টিক ওশেন! কিন্তু বীচে প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস, সমুদ্রের পানি আরো ঠান্ডা। আমাদের দল এখন আরো ভারী। লেনিনের বাচ্চারা আছে, সাথে লেনিনের বন্ধু মিচেল আর তার স্ত্রী। তাদের দুই ছেলে-মেয়েও এসেছে। সবার সঙ্গে পরিচয় হল। তবে একসময় মেঘ সরে গিয়ে রোদ উঠল। তখন বেশ আরাম লাগলো। অনেকগুলো ফোল্ডিং চেয়ার নেয়া হয়েছিল। যদিও একটু পর পর বাতাসে হাল্কা ফোল্ডিং চেয়ারগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ওখানে বসেই আমরা খাওয়া দাওয়া করলাম। ফ্রাইড রাইস, চিকেন, পুডিং পিঠা আর কোক।

এক সময় ফিরে চললাম। পথে মিচেলদের বাসায় নামা হল। চমৎকার বাসা, পিছনে বিশাল জায়গা। মিচেলের স্ত্রী নাসরীন মুহুর্তে চমৎকার সব খাবার টেবিলে হাজির করলেন। কোনটা রেখে কোনটা খাই। আমার অবশ্য সবচেয়ে ভাল লাগলো হালিম। সব শেষে চা খেয়ে এবার বিদায়ের পালা। শর্ট ব্রেকে চমৎকার খাওয়া দাওয়া সেরে বিদায় নিয়ে আমরা রওনা হলাম আমাদের উডসাইডের বাসার দিকে। শেষ রাতটাও এখানে থাকার কথা। কারণ সেভাবেই পেমেন্ট করা আছে। কিন্তু নিউইয়র্কের কুইন্স ভিলেজে থাকে রীতার এক কাজিন Tipul। Tipul এর বউ হ্যাপি ঘন ঘন ফোন করতে লাগলো। তাদের বাসায় আজ রাতটা থাকতেই হবে আমাদের, নইলে ইত্যাদী ইত্যাদী...। শেষ পর্যন্ত লেনিন আর তার স্ত্রী স্বর্ণার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উডসাইডের পাট চুকিয়ে বেশ অনেক রাতেই কুইন্স ভিলেজে গেলাম আমরা (অবশ্য তার আগেই তারা দুজন আমাদেরকে নিয়ে গিয়েছিল আমেরিকার বিখ্যাত স্টারবাকসে কফি খাওয়াতে।) Tipul এসে গাড়িতে করে নিয়ে গেল তার বাসায়। তাদেরও এক ছেলে, এক মেয়ে।

মেয়ে ইবতিদা সম্প্রতি একটি কম্পিটিশনে নিউ ইয়র্কের সেরা গ্রাফিক ডিজাইনারের পুরষ্কার পেয়েছে। আর ছেলে ইয়াশরিফ পরদিন কি একটা অ্যাওয়ার্ড আনতে যাচ্ছে ম্যানহাটনে, সেও কম্পিউটার বিষয়ক একটি কম্পিটিশনে কি একটা পুরষ্কার পেয়েছে। মোট কথা দুজনেই বেশ মেধাবী। ইয়াশরিফ ঘুমায় তিনকোণা বালিশে আর চালায় চারকোণা চাকার সাইকেল! শুনতে খুব আশ্চর্য লাগছে কিন্তু আসলেও তাই। তিনকোণা বালিশের সুবিধা হচ্ছে দেয়ালের সঙ্গে খাপে খাপ লেগে যায়, বালিশ ঘুমন্ত অবস্থায় এদিক ওদিক সরে যাবার কোন সম্ভবনা নেই। আর চারকোণা চাকার সাইকেল সে মাঝে মাঝে এখানকার একটা সায়েন্স মিউজিয়ামে গিয়ে চালায়। কার্টুনে দেখেছি এমন চারকোণা চাকার সাইকেল, এখন দেখছি বাস্তবেও আছে। কিন্তু চালানোর রাস্তাটা সম্পূর্ণ আলাদা। আমি ছবি দেখলাম ইয়াশরিফ এরকম একটা রাস্তায় দিব্যি চারকোণা চাকার সাইকেল চালাচ্ছে। এবং সে জানালো এই সাইকেল নরমাল সাইকেলের মতই চালাতে। শুধু এই সাইকেলের রাস্তা অন্যরকম, গোল গোল সিলিন্ডারের মত অদ্ভুত!

সে রাতে দ্রুতই ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন ঘুম থেকে উঠে শুনি নিউইয়র্ক এর সেরা গ্রাফিক ডিজাইনারের অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ইবতিদা ঘোষণা দিয়েছে সে আমাদের বিশেষ দুটো জায়গা দেখাতে চায়, একটা হচ্ছে “ডাম্বো” আর আরেকটা “দ্যা ভেসেল”। এ দুটো জায়গায় যেতে হবে সাবওয়েতে করে। ইবতিদার মা বলল এটা সম্ভব নয় কারণ আমাদের ফিরে আসতে হবে তিনটার মধ্যে। কারণ ৯ টায় আমাদের ফ্লাইট আর রাস্তায় ট্রাফিক হওয়ার সম্ভাবনা। আমি সবসময় এয়ারপোর্টে একটু আগে যাবার পক্ষপাতি। কিন্তু সে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিল এটা। এখন তার চ্যালেঞ্জ রক্ষা করতে আমরা তিনজন তার সঙ্গে রওনা হলাম। দু তিনবার সাবওয়ের ট্রেন বদলে সত্যি সত্যি একটা চমৎকার জায়গায় হাজির হলাম আমরা। এখানে তিনটা বিখ্যাত ব্রিজ এক সঙ্গে দেখা যায় একটা হচ্ছে ব্রুকলিন ব্রিজ, একটা ম্যানহাটন ব্রিজ আর আরেকটা কুইনস-বোরো ব্রিজ। এই জায়টাকেই এক সঙ্গে বলে ডাম্বো। এরপর আবার দু তিনবার ট্রেন বদলে গেলাম আরেকটা জায়গায়, যার নাম দেওয়া হয়েছে ভেসেল। এটাও চমৎকার! এখানকার স্থাপনা গুলো সব ভয়ঙ্কর রকমের আধুনিক! পাশে একটা বিশাল শপিং মলও আছে। এবার ফিরে চললাম, কারণ সময় হয়ে গেছে। আমার ভয় হল টাইমলি ফিরে যেতে পারবতো! কিন্তু স্মার্র্ট মেয়ে ইবতিদা এক সময় আমাদের হাজির করল তাদের বাসায়, right টাইমে। দ্রুত খেয়ে দেয়ে বিদায় নিয়ে আমরা রওনা হলাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।

এবার এয়ারপোর্টে চেকিং এ বিশাল লাইন। ঘন্টা খানেক লাগিয়ে লাইন শেষ করে তবে চেকিং হল। চেকিংয়ে ধরা খেলাম। রীতার ব্যাগ আটকে দিয়েছে। সন্দেহ জনক কিছু পাওয়া গেছে। আমি ততক্ষণে ভাবতে শুরু করেছি আমি আর রীতা আমেরিকার জেলে আটকা। এখানে কে আসবে আমাদের উদ্ধার করতে! এষার কি হবে! অবশেষে পাওয়া গেল রীতার ব্যাগে সেই সন্দেহ জনক জিনিষটি। একটা পানির বোতলে আটলান্টিক ওশেনের সাদা বালি আর কিছু পাথর। আমি ততক্ষণে নিশ্চিত, পরিবেশ বিঘ্নিত করার আইনে এখন এফবিআইকে ফোন দেয়া হবে। আমরা নিউ ইয়র্কের কোনো একটা জেলে ঢুকতে যাচ্ছি। গুগোল সার্চ দিয়ে নিউ ইয়র্কের জেলখানা দেখতে শুরু করলাম, কোনটা আমাদের জন্য বেটার হবে...। দুজন অফিসার দেখলাম বোতলটা নেড়ে চেড়ে গম্ভীর মুখে কথা বলছে। একবার আমাদের দিকে কড়া চোখে তাকালো বলে মনে হল। তারপর কি মনে করে বোতলটা রীতার ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেরৎ দিল। ওহ কি শান্তি এ যাত্রায় জেলে ঢুকতে হল না!

প্লেন একটু ডিলে ছিল, রাত সোয়া দশটার দিকে ফ্লাই করল। প্লেন দেরী করার কারণ হিসেবে পাইলট বলল অন্যান্য জায়গায় আবহাওয়া খারাপ বলে অনেক প্লেন দেরী করে ছাড়ছে। তাই আমাদেরটাও দেরী হচ্ছে। ওদিকে ক্লেমসনে থান্ডার স্টর্ম হচ্ছে। প্লেন নামতে পারবেতো নাকি আবার নর্থ কেরোলিনায় নামাবে আগের মত?

কিন্তু না রাত সাড়ে বারোটায় আমরা গ্রীনভিল এয়ারপোর্টে নামলাম। এই এয়ারপোর্টে আমরা এই নিয়ে ছয়বার যাতায়াত করেছি। এয়ারপোর্টের সব কিছু মুখস্ত হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। এষা উবার ডাকলো। বৃদ্ধ চালক বেশ মাই ডিয়ার টাইপ। তার কথা বলল, তার পরিবারের কথা বলল। আমরাও আমাদের দেশের কথা বললাম। বুড়ো চালকরা একটু কথা বলতে পছন্দ করে। গভীর রাতে বৃষ্টির মধ্যে এষার বাসায় এসে পৌঁছালাম।

বিদায় নিউ ইয়র্ক । বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। কারণ ক্লেমসনের বাসে উঠলেই টের পাচ্ছি, বাস ড্রাইভাররা পর্যন্ত আমাদের চিনে ফেলেছে। দেখলেই বলে “হ্যালো মাম এন্ড ড্যাড...”, তার চোখেও মনে হয় বিস্ময়। এতদিন ধরে আছি! ২২ তারিখে ছিল ক্লেমসনের স্টুডেন্ট সেন্টার হেনড্রিকসে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশানের (BAC) বিশেষ প্রোগাম (হেনড্রিকস হচ্ছে এখানকার TSC টাইপ)। সেখানে প্রধান অতিথি (!) আমি। আর সাথে উন্মাদের কার্টুন প্রদর্শনী। বেশ কিছু কার্টুন নিয়ে গিয়েছিলাম, কিছু ওখানে প্রিন্ট করা হল। প্রথম বক্তব্য রাখলেন এখানে ম্যাথমেটিকসের প্রফেসর তৌফিক স্যার, তিনি সম্ভবত ব্যাক এর উপদেষ্টা। ব্যাক এর প্রেসিডেন্ট ফারহানও বক্তব্য রাখলো... সব শেষে আমি। বাঙালী দর্শকরা আমাদের কার্টুনিস্টদের আঁকা কার্টুন দেখল, উপভোগ করল বলেই মনে হল। মাঝখানে পিৎজা খাওয়ার পর্বও ছিল, গানও হল। দুজন ভাল গায়ক ছিলেন একজনের গান আগেই শুনেছি, কোবরা আপু আর আরেকজন কাইফু। সব মিলিয়ে বেশ ভালই প্রোগাম হল। সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম, আবার কবে কখন দেখা হয় কে জানে।

... আমার আমেরিকার গল্প এখানেই সমাপ্ত। ক’দিন পর ফিরে যাব দেশে। আমার মেয়েটাকে একা রেখে যেতে হবে। এমন এক সময় তাকে ক্লেমসনে রেখে যাচ্ছি যখন এখানে একজন ভয়ঙ্কর “আর্মড রবার” ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত কয়েকটা হামলা করেছে সে। এখানকার পুলিশ জনগণকে এলার্ট করেছে এই বলে (প্রত্যেকের কাছে মেসেজ এসেছে), বেশী রাতে কারো বাইরে থাকা যাবে না, তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে বা কোন বাড়িতে সে হামলা করলে তার সাথে কোনো রকম আর্গুমেন্টে যাওয়া যাবে না... ইত্যাদী ইত্যাদী। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে স্থানীয় পুলিশ। ফেসবুকে ছবি দিয়েছে তার, মুখ ঢাকা কালো কাপড়ে, হাতে সিলভার কালারের হ্যান্ড-গান! হাত দেখে বোঝা যাচ্ছে সে একজন আফ্রিকান আমেরিকান।

তবে এই দু মাস আমার মেয়ের সঙ্গে আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে ঘুরে যা বুঝেছি তা হল, সে আমার মায়ের মতই একজন টাফ লেডি হয়ে উঠেছে। আমার মা কেমন ছিলেন? তাকে নিয়ে একটা গল্প বলি বরং... ১৯৭২ সাল তখন, আমরা ঢাকায়। খুবই হতদরিদ্র অবস্থা! আমি স্কুলে ভর্তি হই নি। নয়া পল্টনের ছোট্ট একটা বাসায় কোনরকমে আমাদের অনিশ্চিত দিন চলছে। একদিন মাকে বললাম “আম্মা আমি স্কুলে ভর্তি হব না?” মার মুখে তখন খুব একটা হাসি দেখা যেত না। বললেন “কাছাকাছি কোন স্কুল আছে কিনা খুঁজে বের কর।” আমি একটা স্কুল খুঁজে পেলাম, সেগুন বাগিচা হাই স্কুল। মা বললেন “এবার যাও হেড মাস্টারকে গিয়ে বল তুমি স্কুলে ভর্তি হতে চাও”। আমি হতভম্ব, বললাম “আমি একা যাব?” মা বললেন, “হ্যাঁ এখন থেকে তোমাদের সবাইকে একা একাই সব কিছু করতে হবে।”

সত্যি সত্যি পরদিন সেই স্কুলের হেড মাস্টারের রুমে ঢুকে সাহস করে বললাম “স্যার আমি এই স্কুলে ভর্তি হতে চাই।” হেড স্যার খুব অবাক হলেন বলে মনে হল। বললেন “তোমার বাবা কোথায়?” বললাম, “আমার বাবাকে পাকিস্তানী মিলিটারীরা মেরে ফেলেছে।” হেড স্যার চুপ করে গেলেন একটু, বললেন “আগের স্কুলের ট্রান্সফার সার্টিফিকেট আছে?” আমি বললাম “আমাদের বাড়ি লুট হয়ে গেছে কিচ্ছু নেই!” স্যার আরেকটুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বললেন “কাল এসো ঠিক নয়টায়, তোমাকে একটা পরীক্ষা দিতে হবে।

পরদিন পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হলাম। সেভেনে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল, অটো প্রমোশন পেয়ে স্যার আমাকে ক্লাস এইটে ভর্তি করিয়ে নিলেন (সেবার সবাইকে যুদ্ধের জন্য অটো প্রমোশন দেয়া হয়)। ফিরে এসে মাকে খুশির খবরটা দিলাম। মা কঠিন মুখেই বললেন “এখন থেকে একা একা সব করবে ... মনে করবে তোমার পাশে কেউ নেই!” আমার মেয়েও একা একাই করছে সব কিছু। তার চোখে মুখে আমার হারিয়ে যাওয়া মায়ের সেই দৃঢ়তা দেখি। আমার মা কি তাকে দেখে? নিশ্চয়ই দেখে।... গড ব্লেস মাই চাইল্ড!

বিদায় ক্লেমসন... সাউথ ক্যারোলিনা। বিদায় নেটিভ ল্যান্ড আমেরিকা!

পুনঃ এই ভ্রমণ কাহিনী ফেসবুকে লেখার সময় অনেকেই লাইক দিয়ে, কমেন্ট করে আমাকে লিখতে উৎসাহিত করেছেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। দেশের কিছু অনলাইন পত্রিকা লেখাগুলো প্রকাশ করার আগ্রহ দেখিয়েছিল। দুঃখিত যে তাদের প্রস্তাবে রাজী হইনি, তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। তবে অস্ট্রেলিয়ার একটি অনলাইন বাংলা পত্রিকাকে (প্রভাত ফেরী) অনুমতি দিয়েছি অন্য একটি কারণে (ওদের লোগোটি আমাদের করা)। আমার প্রিয় কিছু প্রকাশনী এই লেখাগুলো নিয়ে বই প্রকাশের আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পুনঃ পুনঃ আর যারা আমাদের আমেরিকার ৬টা স্টেট ঘুরিয়ে দেখিয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা!

 

লেখকঃ কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top