সিডনী মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩১


বিএনপিতে ব্যবসায়ী মনোনয়নপ্রত্যাশীই বেশি


প্রকাশিত:
৩০ এপ্রিল ২০১৮ ২৩:৫৩

আপডেট:
১৪ মে ২০২৪ ০৩:৩৪

বিএনপিতে ব্যবসায়ী মনোনয়নপ্রত্যাশীই বেশি

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় থাকলেও প্রচারণায় থেমে নেই দলটির ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা। 'সরকারি রোষানলের ভয়ে' প্রকাশ্যে তাদের অনেকে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি না হলেও 'কৌশলে' নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা। নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে লবিংও করছেন দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে। দলটির বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ব্যবসায়ীই বেশি এবং তাদের সংখ্যা এবার আগেরবারকেও ছাড়িয়ে যাবে। নবম সংসদে বিএনপি থেকে সবচেয়ে বেশি ৭৩ শতাংশ ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।





হেভিওয়েট ব্যবসায়ী নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর এবার নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে রাজধানী ঢাকার গুলশান-বনানী, মোহাম্মদপুর অথবা তেজগাঁও আসন থেকে। এ আসনগুলোতে মিন্টুর জন্মস্থান নোয়াখালী অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রাধান্য থাকায় তিনি যে কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টু সমকালকে বলেন, দলের  হাইকমান্ড চাইলে তিনি নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।





দল নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও প্রার্থী হবেন। চট্টগ্রাম চেম্বারের এই সাবেক সভাপতি চাইছেন বন্দর এলাকা থেকে নির্বাচন করতে। 





দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মুন্নু গ্রুপের আফরোজা খান রিতা মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর আসন থেকে নির্বাচন করবেন। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী আসন থেকে।





চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ইসলাম গ্রুপের মঈনুল ইসলাম শান্তও মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি নেতাকর্মীদেরও তিনি সংগঠিত করছেন বলে জানান তার অনুসারীরা।





চট্টগ্রামের রাইজিং গ্রুপ ও দলের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী এখন কারাগারে থাকলেও তিনি চট্টগ্রামের একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন।





চৈতী গ্রুপ ও দলের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম (চৈতী কালাম) নির্বাচন করবেন কুমিল্লার লাকসাম থেকে। সাহাবুদ্দিন মেডিকেল গ্রুপের মো. সাহাবুদ্দিন রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে ২০০৮ সালে নির্বাচন করেছিলেন। আগামী নির্বাচনেও এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পঁচা গ্রুপের শরীফুল আলম কিশোরগঞ্জের ভৈরব-কুলিয়ারচর থেকে নির্বাচন করবেন। 





ব্যবসায়ী ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাকে তার নিজ এলাকা ফেনী-২ অথবা ঢাকার যে কোনো একটি আসনে প্রার্থী করতে পারে বিএনপি। তাবিথ জানান, দলের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে তার প্রার্থী হওয়া।





বিএনপির এই পদধারী নেতাদের পাশাপাশি সমর্থক ব্যবসায়ীদের অনেকেও চাইছেন দল থেকে মনোনয়ন পেতে। ড্যাবস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এম এ হান্নান মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসন থেকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাকে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে দলের অভ্যন্তরীণ জটিলতায় তখন তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। তার পরও তিনি নিজের অর্থায়নে এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও অনুদান দিয়ে আসছেন তিনি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী। 





এবিএন গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাদাত আহমেদ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে দীর্ঘ পাঁচ মাস তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাঁচ মাস পর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক দেখায়। এরপর টানা ১১ দিনের রিমান্ড ও দুই মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। তার নামে মামলাও দেওয়া হয়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই নেতা চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। নেতাকর্মীদের পাশে নিঃস্বার্থভাবে দাঁড়ানোর কারণে তরুণ এ নেতার সুনামও রয়েছে। রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও আন্দোলনকেন্দ্রিক ভূমিকার কারণে এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে তার।





এফবিসিসিআইর যুব বাণিজ্য উন্নয়নবিষয়ক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নবিষয়ক সাবেক কো-চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন সাদী ঢাকা-১৮ আসনের জন্য কাজ করছেন। তরুণ এ ব্যবসায়ী ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের নির্দেশনায় এলাকার নেতাকর্মীদের একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। বিএনপির সব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেই আলাদা ইমেজ গড়ে ওঠায় আগামী নির্বাচনে তিনি ভালো ফল নিয়ে আসতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা। এই ব্যবসায়ী নেতা সমকালকে জানান, দলের চেয়ারপারসনের কারামুক্তি এবং নির্বাচনে তার অংশগ্রহণই বর্তমানে তাদের মূল লক্ষ্য। নিজেদের প্রার্থিতা নিয়ে তিনি বিচলিত নন। এসব মাথায় রেখেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। 





চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (জেলা সদর) আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক ও জেলা চেম্বারের ব্যবসায়ী নেতা আবদুল ওয়াহেদ। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর বিএনপির আসন। এ আসনে একই পরিবারের দুই ভাই এতদিন একবার বিএনপি তো আরেকবার আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নির্যাতন-দুর্নীতিতে মানুষ অতিষ্ঠ। এসব কারণে আগামী নির্বাচনে জনগণ নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছে। তিনি দাবি করেন, তার প্রতি স্থানীয়দের সমর্থন রয়েছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে দলের এ ঘাঁটি থেকে জয়ী হওয়ার আশা করেন তিনি।





এফবিসিসিআইর পরিচালক ও প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু মোতালেব পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী নেতা। তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সহসভাপতি। এফবিসিসিআইর বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ীরা তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। ঢাকা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এই নেতা পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকা থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। আবু মোতালেব বলেন, আগের নির্বাচনেও তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তখন নাসির উদ্দীন পিন্টুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পিন্টুর মৃত্যুর পর তিনি এই আসনে বিএনপিকে সুসংগঠিত রেখেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের নানা সমস্যায় নিয়েও কাজ করছেন তিনি। পুরান ঢাকার লালবাগ, চকবাজার, বংশালসহ ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের নিয়ে তিনি ভ্যাট আন্দোলন ও পুরনো জেলখানায় ছাত্রাবাস না করার আন্দোলন করে সফল হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিজয়ী হওয়ার আশা করেন তিনি।





গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনায়ন প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ী নেতা আমিনুল হক। এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক ও নাটোর চেম্বারের সভাপতি তিনি। এ ছাড়া তিনি নাটোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আমিনুল হক জানান, স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে তার যোগাযোগ রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিতও পেয়েছেন তিনি হাইকমান্ড থেকে। জয়ী হলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন বলে জানান তিনি। 





মেট্রো গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মেট্রো হোমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফখরুল ইসলাম বিএনপির প্রার্থী হতে চান নোয়াখালী-৫ আসন থেকে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন তিনি। দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী এবার তাকেই প্রার্থী হিসেবে চান বলে দাবি করেন তিনি। আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনায়ন পেয়ে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী এই নেতা মনে করেন, ভোটাররা তাকেই নির্বাচিত করবেন। দল মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। 





টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো তার এলাকায় সপ্তাহের চার-পাঁচ দিন নিরবিচ্ছন্ন কাজ করছেন। শুধু গণসংযোগই নয়, এলাকার নেতাকর্মীদের ঐক্য ধরে রাখতেও কাজ করছেন তিনি। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সমকালকে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলে যুক্ত হয়ে রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি নেন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনে তিনি দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশনায় মাঠে ছিলেন। কালিহাতী এলাকার জনগণ ও নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের এই দুর্দিনেও তিনি কাজ করছেন। তার প্রত্যাশা, দল নিশ্চয়ই এসবের মূল্যায়ন করবে।





সাকুরা স্টিলস গ্রুপের ইবরাহিম আহমেদ রিপন ঢাকা-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 





কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী মফিজুর রহমান মনোনয়ন চাইছেন নোয়াখালী-২ আসনের। এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন এই ব্যবসায়ী। তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচিত সেনবাগ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। ওই সময় তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।





এস এ খালেক গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও সাইফ সিদ্দিক সাজু ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য এস এ খালেকের সন্তান।





তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। সমকালকে তিনি জানান, মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করতে চান তিনি। এলাকায় কল্যাণমূলক কাজ এবং বিভিন্ন সময়ে সততার সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী তিনি। 





মুন্সীগঞ্জ-১ (সিরাজদীখান ও শ্রীনগর) থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন আল মুসলিম গার্মেন্টসের এমডি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। সমকালকে তিনি বলেন, এ আসনে আগে দলের প্রার্থী ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম। এখন তিনি অসুস্থ। নির্বাচন করবেন না। এ আসনে তাই বিএনপি থেকে সঠিক প্রার্থী খুঁজে নেওয়ার বিকল্প নেই। তার মতে, মুন্সীগঞ্জ বিএনপির ঘাঁটি। মনোনয়ন পেলে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী তিনি। 





বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির নির্বাচন করবেন নারায়নগঞ্জ-১ আসন থেকে। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কাজী মনির উদ্দিন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আড়াইহাজার থেকে ধানের শীষের মনোনয়ন চাইবেন। ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল আলম সনু মনোনয়ন চাইছেন রাজশাহী-৫ আসন থেকে। তিনি কৃষক দলের নির্বাহী সদস্য।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top