সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১


অভিবাসী : সাকিনা আক্তার


প্রকাশিত:
৩১ জানুয়ারী ২০২৩ ০২:৪৯

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ০৩:০৫

 

বাঁশির সুরে মোহমুগ্ধতায় হারিয়ে গেলাম সুরের মূর্ছনায়। বাঁশি হাতে ফাবিহাকে দেখছিলাম অপলক।
ফাবিহা আর রাশনানের মিষ্টি কন্ঠে ছড়িয়ে পড়ল অভূতপূর্ব এক আবেদন "আমি বাংলায় গান গাই"। বর্ণে, গন্ধে, ছন্দে, গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছো দোলা রঙেতে রাঙিয়া রাঙাইলে মোরে, এ যেন শুধু গান নয়, আসলেই নাড়িয়ে দিয়ে গেল মনের গহীনে।
দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ এই নবীন তারুণ্যে ভরা হৃদয। "ও আমার দেশের মাটি তোমার তরে ঠেকাই মাথা" এই গানে ফাবিহা এবং নীলাদ্রি আবেগপ্রবণ করে তুলেছিল দর্শকদের।
ব্যাংকসটাউন ব্র্যান ব্রাউন থিয়েটার এ কানায় কানায় পরিপূর্ণ দর্শকদের অনেক প্রত্যাশা আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে। ২৯ শে জানুয়ারি ২০২৩, ঠিক ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হলো, রাত সাড়ে নয়টায় সমাপ্তি। মাঝে ২০ মিনিটের বিরতি ছিল। শুরুতেই অনুষ্ঠানটির সাবলীল সঞ্চালনায় ছিলেন নির্মল চক্রবর্তী।

নীলাদ্রি, হিমাদ্রী, ফাবিহা, ফারিন, রাশনান, নিওশা, অভিজিৎ দাঁ টানা তিন ঘন্টা সুরের ইন্দ্রজালে আবিষ্ট করে রেখেছিল সবাইকে।
অভিজিৎ দাঁ তবলা, অক্টোপ্যাড, কাজন বাজিয়ে গানের সাথে যোগ করেছেন ভিন্নমাত্রা।
সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিমাদ্রী, ওর ড্রামস বাজানোর পারদর্শিতায় মনে হচ্ছিল যেন খুব অভিজ্ঞ কেউ ছন্দের খেলায় মেতে উঠেছে।

নীলাদ্রি, ফাবিহা, ফারিন, রাশনান, নিওশা পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে কিবোর্ড, পিয়ানো, গিটার, অন্যান্য যন্ত্র গুলো বাজাচ্ছিল চেয়ার-সিটিং এর মতই ঘুরেফিরে সবাই মিলে। বিভিন্ন যন্ত্রে ওদের দখল অত্যাশ্চর্যজনক। নীলাদ্রি দোতারা বাজনা ছিল হৃদয় কাঁড়া "ও বেহুলা, দুঃখিনী বাংলা " গানের সাথে। একাধারে নজরুল সংগীত উচাটন মন ঘরে রয় না, ও চাঁদ সামলে রাখো জোছনাকে, গজল সবকিছুই যেন নীলাদ্রির অন্তস্থলে মিশে আছে। "ফিরিয়ে দাও" মাইলসের সেই বিখ্যাত গান এমন দক্ষ ভাবে গাইলো যা অনেকক্ষণ পর্যন্ত তালির রেশে ধরেছিল।
রাশনানের "দিন যায় কথা থাকে " গানের শেষে মুখরিত তালির সাথে সাথে শুনেছি চিৎকার করে দর্শকদের বলতে "বাঘের বাচ্চা"। "বেকারার কারকে হাম" গানটা গাইবার সময় মিষ্টি মিষ্টি হাসি রাশনান কে দর্শক আকৃষ্ট করেছে প্রবল ভাবে। আবার জেমসের গাওয়া "ভিগি ভিগি " গান শুনে বুঝতে পেরেছি কতখানি ভার্সিটালাইজ এই ক্ষুদে শিল্পী।
ফাবিহা চমৎকৃত করেছে "বিমূর্ত এই রাত্রি আমার মৌনতার সুতোয় বোনা একটি রঙ্গিন চাদর" এই গানে। "আমি যে তোমার শুধু যে তোমার", স্তব্ধতা নেমে এসেছিল ছন্দের দোলায়।

পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল জাদুকরি চমক।

নিওশা আকৃষ্ট করেছে সালসায় "ডান্স উইথ মি"। ফারিন এর ফ্যান্টম অফ দা অপেরা শুনে জেগে উঠেছিল পুরো হল। ওয়েলকাম টু হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া আরো সব জনপ্রিয় গান দর্শকম মাতিয়েছে ভিন্ন আমেজে। বলিষ্ঠ কন্ঠ, প্রফেশনাল পারফর্মেন্স কনফিউজড করছিল দর্শকদের ওদের বয়স নিয়ে! ফারিনের জ্যাজ সঙ্গীত আর ফিউশন মিলে এক নতুন ধরন এবং ধারণার সৃষ্টি করেছে। এ যেন অন্য কোন ভুবনের বাসিন্দা এরা।

প্রতিটা গানে ছিল নিত্যনতুন ছোঁয়া। রাশনানের আয়নাতে ওই মুখ দেখবে যখন, শুরু হলো সিনেমাটিক আকর্ষণীয়তায়।
"মাঝ রাতে চাঁদ যদি আলো না বিলায়" এই গানটি দ্বৈত কন্ঠে ফাবিহা এবং ওর বাবা ডঃ সাব্বির সিদ্দিক, তাৎক্ষণিকভাবে গেয়ে মায়াময় করে তোলেন পুরো পরিবেশ। সিডনির ইতিহাসে এই প্রথম আমি এত ইন্টারেক্টিভ দর্শক দেখেছি। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে এই অনুষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে এবং দর্শকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আয়োজকদের পক্ষ থেকে ডঃ সাব্বির সিদ্দিক এবং নিশাত সিদ্দিক।
"কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই" সমবেত কন্ঠে পুরো হল গুনগুনিয়ে ওঠে। আমার নিজস্ব ধারনা মতে, এই অনুষ্ঠান ছিল এযাবৎকালে আমার দেখা সর্ব শ্রেষ্ঠ আয়োজন। পরিবার মানুষের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এটাই প্রমাণ করলো আবারও এই নতুন প্রজন্ম। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে ছোটবেলার ভিডিও গুলো ছিল আনন্দময়।
আজকের অনুষ্ঠানের সবচাইতে বড় বিশেষত্ব ছিল এটা একটি পারিবারিক পরিবেশনা।

আশার আলো জ্বলে উঠলো অগণিত নক্ষত্রের মত, শুদ্ধ সংগীত হারিয়ে যাবে না। অসুর কে করবে এরা নিধন। স্বদেশ এবং বিদেশের প্রতি রয়েছে আকুন্ঠ ভালোবাসা। তাইতো ওদের দলের নাম "ডিয়াস্পরা (অভিবাসী)। শুদ্ধ সাংস্কৃতির চর্চা এবং আন্দোলনে নেমেছে যেন এই প্রাণ। গানেই মিশে আছে ওদের প্রত্যয়;
"হাজার সূর্য চোখের তারায় আমরা যে পথ চলি সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনাতে নজরুল"।
একটা সময় খুব হতাশা গ্রাস করছিল। আজ যেন কেটে গেল সব অমানিশা।
বজ্র কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে,
যতই আসুক বিঘ্ন-বিপদ, হাওয়া হোক্ প্রতিকূল
এক হাতে বাজে অগ্নিবীণা, কন্ঠে গীতাঞ্জলি।

ভালো শিল্পী হওয়ার প্রথম শর্ত ভালো মানুষ হওয়া, খুব কাছে থেকে জানি জন্য দেখতে পেয়েছি সেই আলোকরশ্মি। আমাদের কমিউনিটির সৌভাগ্য, গর্বময় এই প্রজন্ম আমাদের।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top