সিডনী শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন মিশনে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য


প্রকাশিত:
১২ জুন ২০২৩ ২২:১৩

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ১৮:৩৬

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে স্বাগত জানিয়েছেন। সাত মাস আগে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটিই সুনাকের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। এ কারণে তার এ সফরের প্রতি গণমাধ্যমের বিশেষ নজর ছিল। দুই নেতার মধ্যে রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তবে তারা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা, সাপ্লাই চেইন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ইস্যুগুলোতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়ে আলাপ করেন।

সুনাক ও বাইডেনের মধ্যে এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। তবে চলতি বছর গোড়ার দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার সানডিয়াগোর স্টানফোর্ড ইউনিভর্সিটির এক অনুষ্ঠানে দুই নেতার মধ্যে একবার সাক্ষাত্ হয়েছিল। এছাড়া গতমাসে জাপানে জি-৭ সম্মেলনেও তাদের মধ্যে সাক্ষাত্ হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মধ্যে বরাবরই একটি ‘বিশেষ সম্পর্ক’ রয়েছে। তারা এই সম্পর্ককে উপভোগও করে এসেছে। তবে সম্প্রতি দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যথেষ্ট উষ্ণ ছিল না বলে ধারণা করা যায়। বাইডেন হোয়াইট হাউজে প্রবেশের সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বরিস জনসন। বাইডেন তার সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নের উদ্যোগ নেন, কিন্তু সেটি সফল হয়নি। করোনা মহামারি চলাকালে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টি আয়োজনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে আটকে যান জনসন। শেষ পর্যন্ত তাকে পদত্যাগ করতে হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী হন লিজ স্ট্রাস। তিনি অবশ্য অল্প সময়ই ঐ পদে থাকেন। তবে তার সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো উন্নয়ন তো হয়ইনি বরং সম্পর্কে দূরত্ব যেন আরো বেড়েছিল। তাছাড়া ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গেও স্ট্রাসের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে পড়েছিল।

আশা করা হচ্ছে, সুনাক পুরোনো মিত্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে স্বাভাবিক করবেন। দুই দেশই মনে করে, বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের অপরিহার্যতা এড়াতে নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নাই। বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুনাক বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে যেভাবে আমাদের দুই দেশের সেনাবাহিনীর সম্মিলিত উপস্থিতি শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সুসংহত করে, তেমনি বাণিজ্য ক্ষেত্রেও যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি সেটি প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় আমরা সুবিধা করতে পারবো’। বৈঠকের একদিন আগে বুধবার সুনাক বলেন, লন্ডন চলতি বছর আরো পরের দিকে এ আই’র (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ওপর প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে ইচ্ছুক। উল্লেখ্য, বিষয়টি নিয়ে গত মাসেই মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন প্রণেতারা আলোচনা করেছেন। তবে এতে ব্রিটেনের কোনো প্রতিনিধি ছিল না। ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) ইউরোপের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্রিটেন একরকম অনুপস্থিতই ছিল। তবে এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এই উদ্দেশ্যেই তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন। তিনি জানিয়েছেন, চীনকে ঐ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। কারণ এ আই’র নেতৃত্ব পশ্চিমা দেশগুলোর নেতৃত্বে থাকতে হবে।

সুনাক ও বাইডেনের আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যে অবধারিতভাবে ইউক্রেন যুদ্ধ ছিল। বিশেষ করে অতিসম্প্রতি রুশ বাহিনীর ইউক্রেনের নোভা কাখোকভা বাঁধ ধ্বংসের বিষয়টি তাদের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। ঐ বাঁধ ধ্বংসের ফলে হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে একরের পর একর কৃষিজমি। পরিবেশের ক্ষতি ছাড়াও ইউক্রেনবাসীর জন্য এটি নতুন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এছাড়া দুই নেতা ইউক্রেনকে এফ-১৬ জঙ্গি বিমান দিয়ে সহায়তা করার ব্যাপারেও কথা বলেন। এছাড়া অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের বিষয়ও আলোচনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ‘বৈশ্বিক গুরুত্ব আছে এমন যে কোনো ইস্যু নিয়েই আমাদের দুই দেশ সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করে।’

সুনাক ও বাইডেনের মধ্যে এই বৈঠক এমন এক সময় হলো যখন ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন দিকে মোড় নেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেন সম্প্রতি পালটা আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর কাখোকভা বাঁধ ধ্বংসের পর ঐ হামলার মাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাঁধ ভাঙার ফলে দেশের সবচেয়ে উর্বর ভূমিগুলো প্লাবিত হয়েছে। বিষয়টি ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশে খাদ্যশস্যের মূল্য আরেক দফা বাড়াতে পারে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকার সময় ব্রিটেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। সেটি ঐ পর্যন্তই। এরপর কোনো পক্ষই এ নিয়ে অগ্রসর হয়নি। সুনাকের সঙ্গে বাইডেনের সর্বশেষ এ বৈঠকেও এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বাইডেন প্রশাসন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি সুনাকের মন্ত্রীদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে এ বছর এপ্রিলে উত্তর আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়ে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বাইডেনের খোলাখুলি মত প্রকাশে হতাশ হয়েছিল ব্রিটেন।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top