সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


নির্বাচনের সময় ইমেইলের মাধ্যমে যেভাবে বেহাত হয়ে যেতে পারে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য


প্রকাশিত:
৭ মে ২০১৯ ০২:৫৩

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৬

নির্বাচনের সময় ইমেইলের মাধ্যমে যেভাবে বেহাত হয়ে যেতে পারে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য

দ্রুত ঘনিয়ে আসছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচন। আর কদিন পরেই জনগণের ভোটের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য সরকারী দল ও বিরোধী দল নির্ধারিত হবে। নির্বাচনের ঠিক আগের মুহুর্তের এ সময়ে পুরো দেশ জুড়ে চলছে তুমুল প্রচারণা।



রাজনৈতিক নেতারা ছুটে যাচ্ছে ভোটারদের দোরগোড়ায়, উপস্থিত হচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং স্থানে। ভোটারদের সামনে তুলে ধরছেন তাদের পূর্ব কৃতকর্মের নানা হিসাবনিকাশ ও ব্যাখ্যা, একই সাথে তাদের বিভিন্ন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। একই সাথে সম্ভবপর সবক্ষেত্রেই চলছে সুপরিকল্পিত এবং আগ্রাসী বিজ্ঞাপনের ক্যাম্পেইন।



হয়তো আপনি ফেইসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে দেখছেন কোন এক রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়ার আহবান-সম্বলিত বিজ্ঞাপন। অথবা মোবাইলে হয়তো অন্য কোন এপ ব্যবহার করতে গিয়ে, কিংবা খবর পড়তে গিয়ে একই সাথে নানা বিজ্ঞাপন দেখছেন। বর্তমানে এসব বিজ্ঞাপনের অনেকগুলোই থাকে অনেকটা খবরের মতো করে। সরাসরি বিজ্ঞাপনের ভাষা ব্যবহার না করে বরং খবরের ছদ্মবেশে উপস্থাপিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় দর্শকদের মনে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান, দল কিংবা প্রার্থীর একটি ইতিবাচক ছবি প্রতিষ্ঠা করার।



প্রযুক্তিগত নির্বাচনী প্রচারণার আরেকটি বড় অংশ হলো ইমেইল ক্যাম্পেইন। প্রতিনিয়ত আমাদের ইনবক্সে আসছে শত শত ইমেইল। ব্যক্তিগত এবং প্রয়োজনীয় ইমেইলের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং ইমেইল, বিভিন্ন গ্রুপের নানা বিষয়ের ইমেইল পেতে আমরা অভ্যস্ত। একইরকমভাবে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের ইমেইলে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহবান সম্বলিত ইমেইল, কিংবা কোন দলের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার জন্য সহায়ক তথ্য নিয়ে ইমেইল, অথবা এমনকি প্রতিপক্ষ দলের ভাবমুর্তি নষ্ট করার জন্য নিন্দামূলক ইমেইল।



আপনি যদি একজন ভোটার হয়ে থাকেন, হয়তো ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দল, পদপ্রার্থী এবং সংস্থা থেকে নির্বাচন বিষয়ে ইমেইলে পেয়েছেন। খুব বেশি সম্ভবনা আছে, এ ইমেইলগুলোতে এটাচমেন্ট হিসেবে যুক্ত আছে মাত্র এক স্কয়ার পিক্সেল সাইজের ক্ষুদ্র এবং অদৃশ্য একটি ইমেজ ফাইল। ইমেইলের প্রাপক ও পাঠক হিসেবে সাধারণত আপনি এর অস্তিত্বও বুঝতে পারেন না।



এই ক্ষুদ্র এবং আড়ালে থাকা ফাইলটি হলো এক ধরণের ইমেইল ট্র্যাকার। ইমেইলের প্রাপক যখন মেইলটি খুলেন, এ ছবিটি তার ডিভাইসে ডাউনলোড হয়ে যায় এবং তখন ইমেইলটির এই প্রাপক ব্যক্তি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য প্রেরণকারী ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে চলে যায়।



এ সব তথ্যের মাঝে ইমেইল প্রাপকের অবস্থান, ব্যবহৃত ডিভাইসের স্পেসিফিকেশন কিংবা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের অভ্যাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের ও পর্যায়ের তথ্য থাকতে পারে। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির নতুন নতুন ব্যবহার যখন আবিস্কৃত হচ্ছে, এমন সময়ে এ ধরণের তথ্যের সংগ্রহশালা একটি মূল্যবান বিষয়। এর মাধ্যমে ভোক্তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যেমন লংঘন হতে পারে, তেমনিভাবে ভোক্তাদের নানা বিষয় বিবেচনা করে তাদেরকে অধিকতর কনভিন্স করার জন্যও পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন চালানোর সুযোগ পাওয়া যায়। 



এ ধরণের পিক্সেল ডাটা ট্র্যাকারের মাধ্যমে তথ্য নেয়ার কাজটি বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতই করে থাকে। পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর পাঠানো ইমেইলেও এ ধরণের ট্র্যাকার সংযুক্ত রয়েছে।



অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমে এক তদন্তে দেখা গেছে, গ্রিনস, লেবার ও লিবারেল পার্টির মতো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পাঠানো ইমেইলে এ ধরণের বিভিন্ন পিক্সেল সংযুক্ত রয়েছে, যা বিশেষ সফটওয়ার ছাড়া সনাক্ত করা এবং আটকানো অসম্ভব। নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন লবি গ্রুপ, যেমন এডভান্স অস্ট্রেলিয়া এবং গেট আপের পাঠানো ইমেইলগুলোতেও এমন ট্র্যাকারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।



এমতাবস্থায় যারা তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন যদি এসব সংগৃহীত তথ্যের উপযুক্ত এবং দায়িত্বশীল ব্যবহার না করা হয় তাহলে এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী অগ্রহণযোগ্য মানুষদের হাতে চলে যেতে পারে। তবে অন্যদিকের বাস্তবতা হলো এমনভাবে প্রাথমিক পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ বর্তমানে একটি স্বাভাবিক চর্চায় পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় ১৩ হাজার ইমেইল যাচাই করে দেখা যায় এসবের মাঝে ৭০ শতাংশ ইমেইলেই কোন না কোন ধরণের ট্র্যাকার প্রযুক্তি সংযুক্ত রয়েছে। সুতরাং এভাবে তথ্য সংগ্রহের চর্চা এবং তা সম্পর্কে করণীয় বিষয় নিয়ে সচেতন হওয়া বর্তমানে ভোক্তাদের জন্য জরুরী।



 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top