সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


শিশুদের যৌন হয়রানিমূলক নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে ইন্টারপোল


প্রকাশিত:
২৫ মে ২০১৯ ০৭:১৩

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৯

শিশুদের যৌন হয়রানিমূলক নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে ইন্টারপোল

শিশু যৌনতার ওয়েবসাইট, শিকার ১৫ মাসের বাচ্চাও, গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সন্ধান। তারা আমেরিকা, থাইল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে এ সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করে। ইন্টারপোলের অনুসন্ধানে শনাক্ত হয়েছে যৌন নিপীড়নের শিকার ৫০টি শিশু। এদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী শিশুটির বয়স মাত্র ১৫ মাস!



আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা এই নেটওয়ার্কের সন্ধান পেতে যে অপারেশন চালায় তার নাম দেয়া হয় 'ব্ল্যাকরিস্ট'। এক শিশু যৌন নিপীড়নকারীর কবজিতে এমনই কালো রংয়ের বেল্ট দেখা গিয়েছিল। দুই বছর আগে ইন্টারপোলের ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট চিলড্রেন ইউনিট ডার্ক ওয়েবে কয়েকটি ভিডিও দেখতে পায়। ওইসব ভিডিও-তে ১১টি ছেলে শিশুকে যৌন হয়রানির দৃশ্য দেখানো হয়। প্রত্যেকটি ছেলের বয়স ১৩ বছরের কম ছিল। এসব ভিডিও দেখেই অনুসন্ধান শুরু করে ইউনিট। 



ইন্টারপোল জানায়, ওই ওয়েবসাইটে সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে প্রবেশ করতে হয়। গোটা বিশ্বে ৬৩ হাজারের মতো ব্যবহারকারী রয়েছে তাদের। প্রতি সপ্তাহে সেখানে নতুন নিপীড়নের ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যে শিশুরা এমন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। তবে কিছু দৃশ্যমান ও অডিও সূত্র ধরে পরিচয় মিলবে। 



এমন শিশু নিপীড়নের বিষয়টি আবিষ্কারের পর ওই সাইটের মূল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বেরিয়ে আসে। থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশে থাকেন তিন, নাম মনত্রি সালানগাম। সে শিশুদের নিজের বাড়িতে এনে খাবার, ইন্টারনেট এবং ফুটবলসহ নানা খেলা সুযোগের মাধ্যমে মাতিয়ে রাখতো। এমনকি নিজের ভাগ্নীও তার অপরাধ থেকে মুক্তি পায়নি।  



থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব স্পেশাল ইনভেস্টমেন্টের (ডিএসআই) পুলিশ ক্যাপ্টেইন কেমাচার্ট প্রাকাইহংমানি বলেন, এই তদন্ত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে। তারপর সুরিনের আক্রান্তদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এই ওয়েবসাইট থেকে যেসব যৌনতাপূর্ণ ছবি ছাড়া হয়েছে তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইডের যোগসূত্রিতা পাওয়া যায়। 



প্রথম আক্রান্তকে চিহ্নিত হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। তারপর ধীরে ধীরে থাইল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকার থেকেও গ্রেপ্তার হয়। অভিযুক্তদের একজন ছিলেন দ্বিতীয় অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। তিনি অস্ট্রেলিয়ার রুইচা টকপুৎজা। তার প্রযুক্তিযন্ত্র থেকে হাজারো ছবি মিলেছে যেগুলো তোলা হয়েছে থাইল্যান্ডে এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে। 



উভয় নির্যাতনকারীকেই তাদের অপরাধের জন্যে শাস্তি দেয়া হয়েছে। গত বছরের জুনে থাই আদালত সালানগামকে ১৪৬ বছরের জেল দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ শিশু ধর্ষণ, মানবপাচার, শিশুদের যৌনতাপূর্ণ আপত্তিকর ছবি তোলা ইত্যাদি। ১৭ মে তারিখে ৪০ বছর ৩ মাসের জেল দেওয়া হয় টোকপুৎজাকে। এটা অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে শিশুদের প্রতি যৌন অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে দীর্ঘতম জেলের শাস্তি। দেশটির বিচারক এমন অপরাধকে 'প্রতিটা শিশুর জঘন্যতম দুঃস্বপ্ন'এবং 'প্রত্যেক বাবা-মায়ের আতংক' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 



ইতোমধ্যে ৫০ জন আক্রান্ত শিশুকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশের বিশ্বাস, সেখানে আরো শতাধিক শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনুসন্ধানকারীরা চিরুনি অভিযান চালিয়েছে। প্রযুক্তি যন্ত্র, গ্রুপ চ্যাট, ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী এবং অভিযুক্তদের মাধ্যমে অজ্ঞান নির্যাতিতদেরও বের করে আনার চেষ্টা চলছে। এ সংক্রান্ত যত ছবি ও ভিডিও মিলেছে তার সবই ইন্টারপোলের ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড সেক্সুয়াল এক্সপ্লোইটেমন ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। 



সংগৃহিত প্রতিটি ছবিই অপরাধের প্রমাণপত্র। এই অপরাধ আরো বেশি চিহ্নিত করতে ছবিগুলো নিয়ে আরো কাজ করতে হবে, জানালেন ইন্টারপোলের ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স অফিসার সেসিলা ওয়ালিন। বলেন, এই ইউনিটের অন্যতম লক্ষ্য ছবিগুলো দেখে নির্যাতনের শিকারদের পরিচয় বের করা। 



ব্যাংককের ইউএস হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ইনভেস্টিগেশন্সের (এইচএসআই) এরিক ম্যাকলোলিন তাদের ব্ল্যাকরিস্ট অপারেশনের মাধ্যমে আমেরিকায় সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমেরিকায় এমন মানুষও গ্রেপ্তার হয়েছেন যারা সমাজে আস্থার জায়গায় আসীন হয়ে আছেন। আরেকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন যিনি তার দুই বছর বয়সী সৎ ছেলেকে যৌন নিপীড়ন করতেন। 



ওয়ালিন আরো বলেন, এই ওয়েবসাইটে যারা রেজিস্ট্রার করেছেন তারা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রয়েছেন। প্রায় প্রতিটি দেশ থেকেই এরা শিশুদের নিয়ে যৌনতাপূর্ণ কর্মকাণ্ড দেখেন। আমরা ইতোমধ্যে ১৩৭টি দেশের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি।    



ওয়েবসাইটট হোস্ট করা হয়েছে বুলগেরিয়া থেকে। তারা সার্ভার কপি করেছে। একে ধরা হয়েছে ইউরোপোল, ইন্টারপোল এবং ইউরোপোলের পরামর্শক্রমে গৃহিত নানা প্যাকেজের মাধ্যমে। তদন্ত কাজটি ছিল খুবই স্পর্শকাতর। নিরাপত্তাব্যবস্থা ও পরিকল্পনামাফিক কাজটি সারতে হয়েছে। প্রায় ৬০টি দেশের ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তারা একাজে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন থাইল্যান্ডের ডিএসআই এর কর্মকর্তারা, যারা ২০১৭ সালের জুনে মামলাটি গ্রহণ করে। 



থাইল্যান্ডে শিশুদের দিয়ে যৌনতাপূর্ণ ছবি ও ভিডিও উপাদানগুলো থাইল্যান্ডে তৈরি করা হতো। বুলগেরিয়ার সাইবার ক্রাইম বিভাগ ওই ওয়েবসাইটের সার্ভার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার আগে তার আইপি অ্যাড্রেস জেনে নেয় ইউএস তদন্ত দল। 



নিউ জিল্যান্ডে ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে ইন্টারপোলের কাছে প্রদান করে। পরে তার পুনঃনিরীক্ষা করা হয় ইউএস ন্যাশনাল সেন্টারের মাধ্যমে। সেখানে হারিয়ে যাওয়া এবং যৌনতাপূর্ণ ছবি ও ভিডিও নির্মাণে ব্যবহৃত শিশুদের নিয়ে অনেক তথ্যই দিয়েছে তারা। 



ওয়েবসাইটের এক আইপি অ্যাড্রেস পাওয়া গেছে অ্যাডেলেইডে। এ কারণে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশকে অপারেশনে জুড়ে নেয়া হয়। 



এইচএসআই এর সহকারী পরিচালক ডেভিড ম্যাকডিজ বলেন, এ ধরনের তদন্তে দুটো বিষয় বেরিয়ে আসে। এক অপরাধীদের জন্যে- তোমরা পৃথিবীর যেখানকেই থাকো না কেন, লুকাতে পারবে না। আর দ্বিতীয়টি- আক্রান্তদের প্রতিবাদের ভাষা রয়েছে। 

সূত্র: চ্যানেল নিউজ এশিয়া    


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top