বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প


প্রকাশিত:
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫৪

আপডেট:
১৬ মার্চ ২০২৫ ০০:১৯

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচির পরিবর্তনের ফলে মাটির তৈরি সামগ্রীর স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নানা রকম আধুনিক সামগ্রী। এ কারণে চাহিদা কম, কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা ও চড়ামূল্য, সর্বোপরি পুঁজির অভাবে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।



ইতিহাসের ঐতিহ্যের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে, মৃৎশিল্পের জন্য দিনাজপুর ফুলবাড়ী একসময় ছিল খুবই পরিচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ তা বিলীন হতে চলেছে। ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে এ পেশার আকাল। হয়তো বা এমন দিন আসবে, যেদিন বাস্তবে এ পেশার অস্তিত মিলবে না। শুধুমাত্র খাতা-কলমেই থাকবে সীমাবদ্ধ।



শিবনগর ইউনিয়নের মালিপালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, এ পেশার অনেকেই এখন পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়ে কেউ বা রিকশা চালান, আর কেউ বা দিনমজুরের কাজ করছেন। যারা এ পেশা ছাড়তে পারেন নি, তাদের অনেকেই শিক্ষা, চিকিৎসাসহ আধুনিক জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মরণাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছেন। 



মৃৎশিল্পী সাগর পাল ও বিজয় চন্দ্র পাল জানান, বর্তমানে মানুষের ব্যবহারিক জীবনে মৃৎশিল্পের আর বিশেষ ভূমিকা নেই। একটা সময় ছিল যখন মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, সানকি, ঘটি, মটকা, সরা, চারি, কলস, সাজ, ব্যাংক, প্রদীপ, পুতুল, কলকি, দেবদেবীর মূর্তি ও ঝাঝরের বিকল্প ছিল না। ঋণ প্রদানে অনীহা ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা আর প্রযুক্তি বিকাশের এযুগে এ শিল্পের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধিত না হওয়ায় তা আজ আর প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ফলে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অনেকে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। 





 

বিজয় চন্দ্র পাল জানান, আগেকার দিনে মৃৎশিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন- এঁটেল মাটি, রঙ, যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি ছিল সহজলভ্য। কিন্তু বর্তমানে এসব প্রয়োজনীয় উপকরণের দুর্মূল্যের কারণে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। পূর্বে যেখানে বিনামূল্যে মাটি সংগ্রহ করা যেত, বর্তমানে এ মাটিও অগ্রিম টাকায় কিনতে হচ্ছে। 



সাধারণত মৃৎপাত্রগুলো কুমার পরিবারের নারী-পুরুষ উভয়ে মিলেমিশে তৈরি করে থাকেন। তৈরিকৃত সামগ্রী বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কিনে নেন। অনেকে আবার বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি করেন। বর্ষা মৌসুমে কাজ বন্ধ থাকায় কুমারদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ যায়। এ সময় কুমাররা সারা বছর কাজ করার জন্য এঁটেল মাটিসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহে নেমে পড়েন। পুঁজির অভাবে অনেকে মহাজনের কাছ থেকে চড়াসুদে টাকা ঋণ নেন। শুষ্ক মৌসুমে কাজ করে যা উপার্জন হয় তার বেশির ভাগই চলে যায় মহাজনের ঋণ পরিশোধ করতে। এভাবে কুমার সম্প্রদায় যুগযুগ ধরে থেকে যাচ্ছেন সহায় সম্বলহীন হয়ে। 





 

মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য আজ বহুলাংশে বিলুপ্ত হচ্ছে। শুধু ফুলবাড়ী নয়, দিনাজপুরসহ গোটা দেশে এ পেশায় নেমে এসেছে নেমে এসেছে এক চরম বিপর্যয়। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ এ শিল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব, তেমনিভাবে প্রাচীন সভ্যতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে এ পেশাটি। এর মাঝেই জাতির ইতিহাস খুঁজে পাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top