বিএনপির ছয় নেতা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন


প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:০৪

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ১৮:২৫

বিএনপির ছয় নেতা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন

রাজনীতির মাঠে এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন দেশের প্রধান বিরোধী দলের ছয় রাজনৈতিক নেতা। গত ৩০ ডিসেম্বরের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে তারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এতোদিনেও তারা শপথ নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।



সংবিধান অনুযায়ী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ নিতে হবে বিএনপি থেকে বিজয়ী ছয় নেতাকে। সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে স্পিকারকে চিঠি না দিলে ৩০ এপ্রিলের পর তাদের আসন শূন্য হয়ে যাবে। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এসব শূন্য আসনে অনুষ্ঠিত হবে উপনির্বাচন। ফলে কোন দিকে যাচ্ছেন তারা সেটাই এখন দেখার বিষয়।



নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফল বর্জন এবং শপথ না নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি, তা এখনো বহাল আছে। সোমবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগের সিদ্ধান্ত-ই বহাল রাখা হয়। শপথ নেওয়ার বিপক্ষে দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা।



কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া দলীয় এই সিদ্ধান্ত বিনাবাক্যে মেনে নিতে পারছেন না বিজয়ী পাঁচ প্রার্থী। তারা এখনো আশায় আছেন, শেষ মুহূর্তে হয়তো সিদ্ধান্ত বদলাবে বিএনপি। কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং নির্বাসনে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকে আসবে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।



দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত শপথ গ্রহণ করতে পারবেন—এমন বিশ্বাস থেকেই চাপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত মো. আমিনুল ইসলাম, চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হারুনুর রশীদ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. জাহিদুর রহমান, বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মো. মোশারফ হোসেন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া এখন রাজধানীতে অবস্থান করছেন। আর বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত প্রার্থী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তো দলের নীতি নির্ধারক।



জানা গেছে, গত ১৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকায় আসেন বিএনপির পাঁচ বিজয়ী প্রার্থী। ১৫ এপ্রিল রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। এরপর যে যার মতো নিজ নিজ এলাকায় চলে যান। কেউ আবার থেকে যান ঢাকায়। কেউ বা ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে।



তবে বর্তমানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও হারুনুর রশীদসহ ছয় জন-ই ঢাকায় অবস্থান করছেন। অপেক্ষা করছেন দলের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত জানার জন্য। প্রত্যাশায় আছেন দলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কিছু শোনার।



প্রচণ্ড ‘স্নায়ুচাপে’ থাকা চার প্রার্থী-ই জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ গ্রহণ তাদের পক্ষে খুবই অসম্ভব। অন্যদিকে এলাকার সাধারণ ভোটার, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাওয়া উপেক্ষা করাটাও তাদের জন্য কঠিন। এমন এক পরিস্থিতে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আবার সময়ও হাতে মাত্র চার দিন। যা করার এরইমধ্যে করতে হবে।



জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান বলেন, ‘শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে বিএনপি। আর এলাকার সাধারণ মানুষ আমাদেরকে চাপ দিচ্ছে শপথ নেওয়ার জন্য। আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না, কী করব।’



চাপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলামের ভাষ্য, ‘ঢাকাতেই আছি। তবে শপথের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। দলীয় সিদ্ধান্তের খবর তো আপনারা জানেনই।’



ব্রহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত উকিল আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমি শপথ নিতে চাই। কিন্তু দল তো চায় না। আর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়াটা কঠিন। আরও পাঁচ দিন সময় আছে, দেখা যাক কী হয়।’



বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবাই আমরা ঢাকায়। কে কী সিদ্ধান্ত নেবে বা নিয়েছে, সেটা আমি বলতে পারব না।’ তবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শপথ নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন মোশারফ হোসেন।



অন্যদিকে দলের নীতি নির্ধারকদের একজন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার করেছি আগেই। ফলে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রশ্নই আসে না।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top