সিনহার বিরুদ্ধে জালিয়াতি, আত্মসাতের মামলা


প্রকাশিত:
১১ জুলাই ২০১৯ ১৮:০৯

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৯

সিনহার বিরুদ্ধে জালিয়াতি, আত্মসাতের মামলা

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । মামলায় ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ছয় কর্মকর্তাসহ আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।



গতকাল বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। আসামিদের পরস্পরের যোগসাজশে ফারমার্স ব্যাংক গুলশান শাখা থেকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে অস্বাভাবিক দ্রুততায় পে-অর্ডারের মাধ্যমে চার কোটি টাকা এস কে সিনহার হিসাবে স্থানান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে। এস কে সিনহা ওই টাকার উৎস ও প্রকৃতি গোপন করে আত্মসাৎ করেছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।



মামলা দায়েরের পর কমিশনের সচিব দিলওয়ার বখত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দুদক স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় এই মামলা দায়ের করছে। তবে অভিযোগ অনুসন্ধানকালে মামলার প্রধান আসামির বক্তব্য নেওয়া হয়েছে কি না তা জানাতে পারেননি তিনি।



তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুদক সম্পূর্ণ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবেই মামলাটি দায়ের করেছে।



এস কে সিনহা ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেনÑ ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীম, ফারমার্স ব্যাংকের ক্রেডিট শাখার সাবেক প্রধান ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজী সালাহ উদ্দিন, ক্রেডিট ডিভিশনের সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদ, গুলশান শাখার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাফি উদ্দিন আসকারী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফল হক, টাঙ্গাইলের



ধনবাড়ি উপজেলার শ্রীহরিপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই গ্রামের নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, সাস্ত্রী রায় ওরফে সিমি ও রনজিৎ চন্দ্র সাহা।



এজহারে বলা হয়েছে, আসামি মো. শাহাজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় পৃথক দুটি চলতি হিসাব খোলেন। পরের দিন তারা ওই হিসাবে দুই কোটি টাকা করে চার কোটি টাকা করে ব্যবসা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে ঋণের আবেদন করেন। আবেদনে তারা বাড়ির ঠিকানা উত্তরা আবাসিক এলাকার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কের ৫১ নম্বর বাড়ির কথা উল্লেখ করেন। অনুসন্ধানকালে জানা যায় বাড়িটি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার মালিকানাধীন। ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে এস কে সিনহা বাড়িটি বন্ধক রাখেন। এছাড়া ঋণ আবেদনের বিপরীতে আসামি রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও শ্রীমতি সাস্ত্রী রায়ের নামে সাভারে অবস্থিত ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করেন। তারা দুজনই আসামি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠজন। ঋণ সংক্রান্ত আবেদন দুটি যাচাই-বাছাই না করে এবং ব্যাংকের নিয়মনীতি না মেনে শুধু গ্রাহকের আবেদনের ওপর গুলশান শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অপারেশন ম্যানেজার লুৎফল হক ও ক্রেডিট ইনচার্জ শাফিউদ্দিন আসকারী মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঋণ প্রস্তাব প্রস্তুত ও স্বাক্ষর করেন।



এরপর আসামি জিয়া উদ্দিন আহমদ হাতে হাতে ঋণ প্রস্তাব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে ক্রেডিট কমিটির কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় ওই প্রস্তাব দুটি কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়া অফিস নোট তৈরি করে তাতে স্বাক্ষর করে ক্রেডিট প্রধান গাজী সালাহ্ উদ্দিনের কাছে নিয়ে যান। তিনিও কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া তাতে স্বাক্ষর করে ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমের কাছে নিয়ে যান। ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ পলিসি সংক্রান্ত বিধি অনুযায়ী ওই ঋণ দুটির প্রস্তাব অনুমোদন ক্ষমতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের না থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজেই প্রস্তাবনা দিয়ে প্রস্তাব দুটি অনুমোদন করেন।



এছাড়া ফারমার্স ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে নথি উপস্থাপিত হলে তাকে এস কে সিনহার স্বার্থসংশ্লিষ্ট তথ্য সংযুক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে উক্ত নোট পরিবর্তন করে নতুন নোট প্রস্তুত করে তাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও এমডি স্বাক্ষর করেন। এই প্রক্রিয়ায় ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর দিনই (২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর) মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার আবেদনের ভিত্তিতে ঋণ হিসেবে অনুমোদন হওয়া (২+২) চার কোটি টাকা দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এস কে সিনহার নামে ইস্যু করা হয়। পরে এস কে সিনহার সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখার হিসাবে ৯ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে পে-অর্ডার মূলে জমা হয়। বিভিন্ন সময় চেক, পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে এস কে সিনহার ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে শাহজাহালাল ব্যাংক উত্তরা শাখায় এস কে সিনহার আপন ভাইয়ের নামে দুটি চেকে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর এক কোটি ৪৯ লাখ ৯ হাজার টাকা ও ৭৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়। পরে তার ভাইয়ের হিসাব থেকেও চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়া হয়।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top