ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ছেঃ চিকিৎসকরা বলছেন ব্যতিক্রম ও উদ্বেগজনক
প্রকাশিত:
১৮ জুলাই ২০১৯ ২১:৫১
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৯

আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়ছে। তবে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটা ব্যতিক্রম। বেশিরভাগ আক্রান্তদের মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করছে। এর ভয়াবহতাও বেশি। এ বছরের ডেঙ্গুর ধরণকে তাই চিকিৎসকরা উদ্বেজনক ও ব্যতিক্রমী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে জ্বর হলে গাফিলতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে মন্ত্রী, এমপি, সচিব থেকে শুরু করে কেউই বাঁচতে পারেননি এ বছর ডেঙ্গুর হাত থেকে। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ভুক্তভোগী খোদ দেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও ডেঙ্গুর ওষুধ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কাঙ্খিত নিজের প্রথম বাজেটই সংসদে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট উপস্থাপন করে তাকে সহায়তা করেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেছেন, ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি স্থল থাইল্যান্ড। সেখান থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তিনি বলেন, উৎপত্তিস্থলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও নিয়ন্ত্রিত। অথচ আমাদের দেশে প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর শুনতে হয়। যেখানে এই ডেঙ্গুর উৎপত্তি সেখানে নিয়ন্ত্রিত হলেও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ডেঙ্গু মশার ওষুধ নিয়ে আমাদের দেশে কোন গবেষণা নেই। বিভিন্ন রকমফের রয়েছে। এটা নিয়ে গবেষণা হওয়ার দরকার বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশে গত ১৬ দিনে ৩০৮১ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অর্থাৎ দিনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে প্রায় ১৯৩ জন বা প্রতি ঘন্টায় ৮ জনেরও বেশি। গত ২৪ ঘন্টায় ২১৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ মাসে ভর্তি রোগীর মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিসংখ্যান মাত্র অর্ধশত হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের তথ্যের ভিত্তিতে। এর বাইরে রাজধানীসহ সারাদেশে ঠিক কতজন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তার হিসেব নেই।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ শতাংশ সাধারণ ও মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বর্তমানে প্রতি বছর মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। প্রতি মিনিটেই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে বছরে ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলোতে এ রোগে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুহার প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরা, বরফ গলা ও সুনামীসহ ঝড় হচ্ছে। ফলে বহু মানুষ খোলামেলা স্থানে বসবাস করতে বাধ্য হয় এবং মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন।
বাংলাদেশে গত দুই দশকে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার কামড়ে ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু সরকারি হিসাবেই এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে এ সময়কালে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শয্যাশায়ী হয়েছেন প্রায় ৫৫ হাজার।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অনেক সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও অনেকেই হাসপাতালে আসেন না, অনেকেই চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে যান বা ফার্মেসি থেকে পরামর্শ ও ওষুধ কিনে খান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টা ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার জানান, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ডেঙ্গুতে মোট ৫৫ হাজার ১২৮ জন ভর্তি হন।
বছরওয়ারী প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫ হাজার ৫৫১, ২ হাজার ৪৩০, ৬ হাজার ২৩২, ৪৮৬ জন, ৩ হাজার ৪৩৪, ১ হাজার ৪৮, ২ হাজার ২০০, ৪৬৬ জন, ১ হাজার ১৫৩, ৪৭৪ জন, ৪০৯, ১ হাজার ৩৫৯, ৬৭১ জন, ১ হাজার ৭৪৯, ৩৭৫ জন, ৩ হাজার ১৬২, ৬ হাজার ৬০, ২ হাজার ৭৬৯, ১০ হাজার ১৪৮ ও ৩ হাজার ৭২০ জন। এ সময়কালে (২০০০ থেকে ২০১৯ সাল) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়। বছরওয়ারী পরিসংখ্যান অনুসারে যথাক্রমে ৯৩ জন, ৪৪, ৫৮, ১০, ১৩, ৪, ১১, ৬, একজন, দু’জন, ৬, ১৪, ৮, ২৬ ও তিনজন।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: