দেশে দীর্ঘমেয়াদে বন্যার শঙ্কা


প্রকাশিত:
২০ জুলাই ২০১৯ ১৭:৫৯

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৬

দেশে  দীর্ঘমেয়াদে বন্যার শঙ্কা

এবার বর্ষা এসেছে দেরিতে কিন্তু বন্যা দেরি করেনি। ভারতে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও বরাক অববাহিকায় টানা ভারী বৃষ্টি আর উজানের জলাধার খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যা শুরু হয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া দেশের প্রায় সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে।





 

এদিকে পদ্মায় হু হু করে পানি বাড়ায় তীরবর্তী জেলাগুলোয় ছড়িয়ে পড়ছে বন্যা। এর মধ্যে আবার টানা ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, এবারের বন্যা দীর্ঘমেয়াদে থাকতে পারে। বন্যাদুর্গত জেলাগুলোর পঞ্চাশ লক্ষাধিক মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন। সরকার ত্রাণ দিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কর্মহীন শ্রমজীবীরা। মাসখানেকের মধ্যেই আসছে ঈদুল আজহা। কৃষিনির্ভর এসব জেলার গবাদিপশু ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।



সরকার পরিস্থিতি মনিটরিং করলেও বন্যা দীর্ঘমেয়াদি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অতীতের ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে আগাম বৃষ্টি শুরু হলে বন্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়। তবে এবার বর্ষাকালে কিছুটা দেরিতে বৃষ্টি শুরু হলেও আগাম বন্যা শুরু হয়েছে। সে হিসেবে এবারের বন্যা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা জেঁকে বসেছে। এরমধ্যে পদ্মার পানি বাড়ায় ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।



এরমধ্যে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রংপুর ও সিলেট বিভাগ ও ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হবে। এতে বন্যা আরও বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা বর্ষা মৌসুমের শুরু। দেশের নদীগুলোতে দুকূল ছাপানো পানি আসে শ্রাবণ আর ভাদ্র মাসে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি প্রবল বন্যার আদর্শ সময়। সে হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে বন্যার সুস্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে। তবে আশার কথা যমুনা নদীসহ কিছু কিছু এলাকায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।



গতকাল শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, জামালপুর এবং পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া বগুড়া, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ছাড়াও জিঞ্জিরাম, হলহলিয়া, ধরলা, দুধকুমারের উপচেপড়া পানিতে ডুবে গেছে অসংখ্য জনপদ।



এদিকে তিস্তা নদীর পানি গত ৫০ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও সিরাজগঞ্জে পাঁচ উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি। কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে। এ সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। এসব এলাকার ফসলি জমি ও হাট-বাজার ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে।



পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরিদপুর সদরসহ জেলার চারটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। অপরদিকে আড়িয়াল খাঁ নদে তীব্র আকারে ভাঙন শুরু হয়েছে। এভাবে নতুন নতুন এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।



দুর্গতদের ঘরে শুকনো খাবার নেই। এসব এলাকার ৮০ শতাংশ নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় মিলছে না বিশুদ্ধ পানি। শৌচাগারের অভাবে বাড়ছে বিড়ম্বনা। অনেকে নৌকায় ও ঘরের মাচানে রাতযাপন করছেন। ৪০ লাখের বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও রোগের ঝুঁকিতে পড়েছে বলে গতকাল জানিয়েছে রেডক্রিসেন্ট। কয়েক লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। প্রায় এক লাখ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। ফলে শিশু, প্রসূতি মা, গর্ভবতী মা ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। হাজার হাজার পরিবার উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। ভেঙে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যেসব এলাকায় পানি নামছে সেখানে আরেক ধরনের বিপর্যস্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top