মাছ-মুরগির খাবারের নামে দেশে এবার মারাত্মক ক্ষতিকারক শুকরের বর্জ্য
প্রকাশিত:
২৫ জুলাই ২০১৯ ১৮:২২
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৯

দেশে এবার মাছ-মুরগির খাবারের নামে আনা হলো শুকরের বর্জ্য। মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক এমন পণ্যের তিনটি বড় চালান আটক করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা আটককৃত চালানে ৮৫ টিইইউএস কন্টেইনারে মিলেছে ফিশ ফুডের নামে আমদানি করা ১৪ লাখ ৮ হাজার ৭২০ (১,৪০৮ মেট্রিক টন) কেজি শুকরসহ গবাদিপশুর বর্জ্য। কাস্টম হাউসের নিজস্ব পরীক্ষাগারসহ দেশের তিনটি নামকরা পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে আমদানিকৃত মাছের খাবার ‘মিট অ্যান্ড বোন মিল’ এবং তা আমদানি নিষিদ্ধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইসলামে শুকরকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য চালান আটকের তথ্য জানিয়ে গতকাল বুধবার কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, আমরা নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছি তিনটি চালানেই আমদানি নিষিদ্ধ শুকরের বর্জ্য পাওয়া গেছে। তিনটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে।
সাধারণত উন্নত দেশগুলোতে গবাদিপশু বিশেষত শুকরের বর্জ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে মুরগি এবং মাছের খাবার বানানো হয়। পৃথিবীর অনুন্নত দেশগুলোতে এসব পণ্য রফতানি করা হয়। এ সমস্ত ক্ষতিকর খাবার খেলে একটি মুরগির বাচ্চা দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করে। মাছের ক্ষেত্রেও এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ খাবার খাওয়ার পরপর মাছগুলো দ্রæত বড় হতে থাকে। পরবর্তীতে এসব মুরগি, ডিম এবং মাছ খাবার পর মানুষের শরীরে নানারকম রোগব্যাধি দেখা দেয়।
কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জনস্বাস্থ্যের হুমকির কথা চিন্তা না করে বিদেশ থেকে এ সমস্ত ক্ষতিকর প্রাণিখাদ্য এবং মাছের খাবার আমদানি করে খালাসের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি চালান আটক করে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। কাস্টম কমিশনার বলেন, এখন মাছ চাষের পিক সিজন। দেশে হাওর-বাওর, পুকুর-দীঘি-খাল সর্বত্রই মাছ চাষ চলছে। আর এ সুযোগে এক শ্রেণির আমদানিকারক মাছের খাবারের নামে আমদানি নিষিদ্ধ শুকরের বর্জ্য এনে বাজারজাত করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে আমরা বেশ কয়েকটি চালান আটকে দিই। এরপর কয়েকটি চালানের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। ঢাকার আইসিডিডিআরবি এবং চট্টগ্রামের পোল্ট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার একইসাথে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিজস্ব পরীক্ষাগারে এসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তিনটি পরীক্ষাগার থেকেই এসব পণ্যকে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক এবং আমদানি নিষিদ্ধ হিসাবে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি চালান আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেগুলোরও নমুনা পরীক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, মাছ ও মুরগির ভিটামিনের নামে বেশকিছু পণ্য আমদানি হচ্ছে যাতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে। আমরা এসব চালানও আটক করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি।
তিনি জানান, এ ধরনের চালানের ক্ষেত্রে যেগুলোর বিল অব এন্ট্রি হয়েছে সেগুলোর বিন লক করেছি। যাতে আমাদের অনুমতি ছাড়া বিল অব এন্ট্রি দাখিল করতে না পারে। এ ধরনের অনেক চালান বন্দরে আছে। পরীক্ষার পর জানা যাবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি, এআইআর, জেটি কাস্টম, মৎস্য অধিদফতর বা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দৈবচয়নের ভিত্তিতে নমুনা তোলা হয়। পরে তা গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পুরো কাজ হয় স্বচ্ছতার সাথে।
চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আয়েশা কর্পোরেশনের নামে ভিয়েতনাম থেকে ২৫ কন্টেইনার ভর্তি ছয় লাখ এক হাজার কেজি ফিশ ফিড আমদানি করা হয়। সিঅ্যান্ডএফএজেন্ট ছিল বেঙ্গল লাইফ এজেন্সি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রথমে চালানটি সাময়িকভাবে আটক করে খালাস স্থগিত করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে কায়িক পরীক্ষা করা হয়। পণ্যের পরীক্ষাকালে ১৩টি কন্টেইনার ভর্তি ৩২১ মেট্রিক টন পণ্য এআইআর কর্তৃক কার্যক্রম গ্রহণ করার আগেই ডিপো থেকে আমদানিকারক খালাস করে নিয়ে যান। এ পর্যায়ে কাস্টম কর্তৃপক্ষ ওইসব পণ্য আমদানিকারকের হেফাজত থেকে বিক্রয় ও হস্তান্তর না করার নির্দেশনা জারি করেন। এরপর বাকি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।
স্পেকট্রা হেকসা ফিড লিমিটেড নামে মানিকগঞ্জের অপর একটি প্রতিষ্ঠান ১০ কন্টেইনার বোঝাই দুই লাখ কেজি মাছের খাবার আমদানি করে। সেটিতেও আমদানি নিষিদ্ধ শুকরের বর্জ্য পাওয়া যায়। তারা চালানটি আমদানি করে থাইল্যান্ড থেকে। নিষিদ্ধ পণ্য আমদানির তালিকার অপর প্রতিষ্ঠানটি হলো ঢাকার মগবাজারের প্রোমিক এগ্রো অ্যান্ড ফিড প্রোডাক্টস লিমিটেড। তারা ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৫ কন্টেইনার বোঝাই ছয় লাখ সাত হাজার ৭২০ কেজি মাছের খাবার আমদানি করে। এ চালানটির নমুনা পরীক্ষায়ও পাওয়া যায় আমদানি নিষিদ্ধ শুকরের বর্জ্য।
চিকিৎসকরা বলছেন, শুকরসহ গবাদিপশুর হাড়গোড়ে তৈরি মাছ ও মুরগির খাবার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের খাবার খেয়ে যেসব মাছ-মুরগি বড় হবে তা খেলে মানুষের ক্যান্সারসহ জটিল রোগ হতে পারে। আর এজন্য সরকার এ ধরনের ফিড আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।
শুকরের সবকিছুই হারাম
ইসলামের দৃষ্টিতেও শুকরের বর্জ্যরে খাবার হারাম বলে জানান মুফতি ফারুক সিদ্দিকী। তিনি বলেন, শুকরের গোশত থেকে শুরু করে সবকিছু মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হওয়ায় পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে শুকরকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কোন মুসলমান যেমন শুকর খেতে পারবেন না তেমনি শুকরের গোশত বা বর্জ্য দিয়ে কোন ব্যবসা করাও হারাম। যারা শুকরের বর্জ্যরে মুরগি ও মাছের খাবার আমদানি করছেন তারাও হারাম কাজের সাথে জড়িত। জেনে শুনে কেউ এ ধরনের কাজ করলে তা চরম গোনাহ হিসেবে আল্লাহর কাছে গণ্য হবে। তিনি বলেন, শরীয়তের পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও শুকরকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উৎসঃ ইনকিলাব
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: