বাংলাদেশি খাবারকে জনপ্রিয় করতে ‘রসনা কূটনীতি’ গ্রিসে


প্রকাশিত:
৩ মে ২০১৮ ০০:৪৫

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৯

বাংলাদেশি খাবারকে জনপ্রিয় করতে ‘রসনা কূটনীতি’  গ্রিসে

গ্রিসে বাংলাদেশি খাবারকে জনপ্রিয় ব্রান্ড হিসেবে পরিচিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ উদ্যোগের নাম দেয়া হয়েছে ‘রসনা কূটনীতি’। দূতাবাসের এ উদ্যোগ সফল করতে রেস্টুরেন্টের নাম পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছেন গ্রিসের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। 



এ বিষয়ে বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিন দূতাবাসের ‘রসনা কূটনীতি’কে সফল করতে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। রাষ্ট্রদূত সভা আয়োজনের জন্য হাউস অব ফ্লেভারস বাংলাদেশি ও ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের কর্ণধার জনাব রফিকুল আলম চুন্নু এবং মিসেস মিলি আলমকে ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব পরিমণ্ডলে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশি খাবারকে একটি জনপ্রিয় ব্রান্ড হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করতে আমাদের একযোগে কাজ করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে দূতাবাসের রসনা কূটনীতির কার্যক্রমে অংশ নিয়ে দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত রাখায় তিনি প্রবাসীদের ধন্যবাদ জানান।



 



রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বিদেশের মাটিতে এক একটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট এক একটি দূতাবাস, একটি দূতাবাসে প্রতিদিন যে পরিমাণ বিদেশি আসে, তার চেয়ে বেশি বিদেশি আসে একটি রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা রসনা কূটনীতির উদ্যোগের সঙ্গে এগিয়ে এলে একদিকে যেমন বাংলাদেশি খাবার জনপ্রিয় হবে, অন্যদিকে বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে উঠবে। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের আয়োজক মিসেস মিলি আলম ।



তিনি বলেন, দূতাবাসের রসনা কূটনীতির আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি রেস্টুরেন্টের নামে বাংলাদেশ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তিনি দূতাবাসকে ধন্যবাদ জনান।



এরপর আলোচনায় অংশ নেন গ্রীসের প্রবাসী বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন দূতাবাসের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা একে একে রেস্টুরেন্টের নামে বাংলাদেশি নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন, রেস্টুরেন্টের মেন্যুতে বাংলাদেশি খাবার এবং সাজ-সজ্জায় বাংলাদেশি ঐতিহ্য ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। তারা আরও বলেন দূতাবাসের প্রেরণায় তারা গ্রীসে বাংলাদেশি খাবারের ব্রান্ড তৈরি করতে ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে নেমেছেন এবং গ্রীসের মাটিতে রসনা কূটনীতি সফল করতে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এরপর আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ কমিউনিটি-ইন-গ্রীসের সভাপতি হাজী আব্দুল কুদ্দুসসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী ও আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। আলোচনায় তারা রসনা কূটনীতি সফল করতে দূতাবাস এবং রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।



উল্লেখ্য, এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস গত বছরের ২৬ অক্টোবর ‘রসনা কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্রান্ডিং: প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পৃক্তকরণ’ শীর্ষক একটি কর্মশালা আয়োজন করে। দূতাবাস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় এথেন্সে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট মালিকরা অংশগ্রহণ করেন। উক্ত কর্মশালায় বাংলাদেশি খাবার জনপ্রিয় করার জন্য রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে দূতাবাস থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীগণ যারা অন্যদেশের নাম ব্যবহার করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করছেন, তাদের রেস্টুরেন্টের নাম পরির্বতন করে বাংলা/বাংলাদেশ নাম ব্যবহার করবেন, প্রতিটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের মেন্যুতে দেশীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করবেন, রেস্টুরেন্টের সাজসজ্জায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট মালিকগণ বিভিন্ন খাদ্য মেলায় অংশগ্রহণ করবেন, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশি অধ্যুষিত নয়, গ্রীক অধ্যুষিত অঞ্চলেও বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেবেন এবং বিদেশীদেরকে বাংলাদেশি খাবারের সাথে পরিচিত করানোর লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ট্রিপ অ্যাৎডভাইজার), খাবার বিষয়ের পত্রিকা, ট্রাভেল ম্যাগাজিনে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট তথা বাংলাদেশী খাবারের প্রচারে ব্যবসায়ীরা সম্পৃক্ত হবেন মর্মেও সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রবাসী বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসেছে এবং রসনা কূটনীতি সফল করে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি খাবার জনপ্রিয় করতে কাজ করছে।



দূতাবাস সূত্রে জানানো যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র রাজধানী এথেন্সেই নয়, এথেন্সের বাইরে গ্রীসের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত দ্বীপাঞ্চলে এই কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সম্ভবত এই প্রথমবারের মতো রসনা কূটনীতি নিয়ে বাংলাদেশের খাবার বিদেশে জনপ্রিয় করার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিন অত্যন্ত আশাবাদী। তিনি এই কার্যক্রম সফল করার জন্য গ্রীস প্রবাসী বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top