সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


কর্মচারী শোষণের দায়ে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী দম্পতির কারাদন্ড


প্রকাশিত:
১১ মে ২০১৯ ০৬:৫৫

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৫১

কর্মচারী শোষণের দায়ে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী দম্পতির কারাদন্ড

অভিবাসী কর্মচারীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে শোষণ করা তথা অন্যায় সুবিধা নেয়ার অপরাধে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরে বাংলাদেশী এক পরিবারের স্বামী ও স্ত্রী উভয়কেই কারাদন্ডে দন্ডিত করেছে অকল্যান্ড ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট। দেশটির অভিবাসন বিষয়ক সরকারী কর্তৃপক্ষ ‘ইমিগ্রেশন নিউজিল্যান্ড‘ এর দায়ের করা মামলায় দীর্ঘ তদন্ত ও শুনানী শেষে গত ১০ মে ২০১৯ শুক্রবার আদালত এ রায় প্রদান করে। তবে কর্মচারী শোষণের অপরাধে কারাদন্ড হলেও আদালত তাদেরকে হিউম্যান ট্রাফিকিং বা মানবপাচারের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।

বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নিউজিল্যান্ডের নাগরিক মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী নাফিসা আহমেদ অকল্যান্ডে রয়েল সুইটস ক্যাফে নামে একটি রেস্টুরেন্ট এবং মিষ্টির দোকান পরিচালনা করতেন। তাদের দোকানটি অনেকের কাছে রয়েল বেঙ্গল ক্যাফে নামেও পরিচিত। এ দোকানে কর্মরত দুইজন শেফ বা রাঁধুনী কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের কাজের অমানবিক এবং বেআইনী শর্তাবলী সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করার পরেই এ সম্পর্কে তদন্ত শুরু হয়েছিলো। 

অভিযোগে প্রকাশ, বাংলাদেশী পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঐ কর্মচারীরা রেস্টুরেন্টটিতে চাকরি নিয়ে নিউজিল্যান্ডে আসার পর তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়। এছাড়াও তাদেরকে ঘন্টাপ্রতি মাত্র ৬ ডলার বেতনে কাজ করতে বাধ্য করা হয় এবং নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরেও কাজ করতে বাধ্য করা হয়। 

আদালতে উল্লেখিত বর্ণনামতে, এসব কিছুর পাশাপাশি তাদেরকে কাজের বেতনও যথাযথভাবে দেয়া হতো না এবং ছুটির দিনে কাজ করার জন্য নির্ধারিত বাড়তি কোন বেতন দেয়া হতো না। উল্লেখ্য যে অকল্যান্ডের স্থানীয় আইন অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের নিম্নতম মজুরি ঘন্টাপ্রতি ১৮ ডলারের কাছাকাছি। 

কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, তাদেরকে এতো দীর্ঘ সময় কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিলো যে এমন লম্বা সময়ের জন্য কাজ তাদেরকে বাংলাদেশেও কখনো করতে হতো না। সরকারী আইনজীবি জ্যাকব পেরি উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সময় যাবত কাজ করতে করতে তাদের পা ফুলে যেতো এবং এমনকি তাদের একজন মনে করেছিলো ‘এতো বেশি কাজ করতে করতে সম্ভবত আমরা মরেই যাবো!‘ তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ব্যবসায়িক স্বার্থকে কর্মচারীদের স্বাস্থ্যের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা কাজ করেছে। 

আতিকুল ইসলামের আইনজীবি রন ম্যানসফিল্ড আদালতে বলেন, কর্মচারীদের প্রতি অমানবিক আচরণের বিষয়গুলো বাস্তবতার তুলনায় অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। অন্যদিকে তার স্ত্রী নাফিসা আহমেদের আইনজীবি স্টিভেন ল্যাক বলেন, রেস্টুরেন্টের পরিচালনার সাথে তার মক্কেল সরাসরি জড়িত ছিলেন না। দুজনের আইনজীবিই তাদের মক্কেলদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে গৃহবন্দীত্বের আবেদন জানান। 

কিন্তু বিচারক ব্রুক গিবসন জানান, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে এ অপরাধকর্মে স্ত্রী তার স্বামীকে সরাসরি সহায়তা করেছেন এবং এ নিয়ে তাদের মাঝে কোন অনুতাপও দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ‘এই অপরাধকর্ম পরিকল্পিত এবং পুর্বনির্ধারিত, এবং এতে করে আপনারা আপনাদের নিজেদের কমিউনিটির মানুষদেরকেই শোষণ করার মতো স্বার্থপর একটি কাজ করেছেন।‘ 

পরবর্তীতে এক পুত্রসন্তানের পিতামাতা এ দম্পতির উভয়কেই অপরাধী সাব্যস্ত করে কর্মচারীদের কাছ থেকে অন্যায় সুবিধা নেয়া এবং অভিবাসন আইন লংঘনের অপরাধে আতিকুল ইসলামকে চার বছর পাঁচ মাস মেয়াদের কারাদন্ড এবং পাঁচজন কর্মচারীর কাছ থেকে অন্যায় সুবিধা নেয়াতে জড়িত থাকার অপরাধে নাফিসা আহমেদকে দুই বছর ছয় মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। 

আদালতের এ রায় ঘোষণার পর ইমিগ্রেশন নিউজিল্যান্ডের কর্মকর্তা পিট ডিভয় বলেন, এ ধরণের অন্যায়ের শিকার ব্যক্তিদের কথা জনসম্মুখে এসেছে এটি আমাদের জন্য একটি আনন্দের বিষয়। সাহস করে সামনে এগিয়ে এসে অভিযোগ উত্থাপন করা এবং বিচারপ্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকার জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।





 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top