না ফেরার দেশে চলে গেলেন দাদার কীর্তি’র নায়ক তাপস পাল
প্রকাশিত:
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৫০
আপডেট:
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:২০

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: না ফেরার দেশে চলে গেলেন অভিনেতা ও প্রাক্তন সাংসদ তাপস পাল। মঙ্গলবার ভোরে মুম্বাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই জনপ্রিয় অভিনেতা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই স্নায়ু এবং রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। নিয়মিত চিকিৎসাও চলছিল। সম্প্রতি মুম্বাই গিয়ে হঠাৎই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন । ভর্তি করা হয় মুম্বাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। সোমবার তাঁর কলকাতা ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু মুম্বাই বিমানবন্দরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মঙ্গলবার ভোররাত ৩টা৩৫ মিনিটে মারা যান তাপস পাল। তাপস পালের মৃত্যুতে টালিগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতার বাংলা ছবিতে তিনি ছিলেন অনবদ্য। আজও বাঙালি দর্শক বার বার সেই ‘দাদার কীর্তি’র তাপসকে মনে করেন। বাংলা ছবির তথাকথিত ‘হিরোইজম’কে ভেঙে দিয়েছিলেন তাপস পাল। যে কারণে তাঁর একের পর এক পারিবারিক ছবি হয়ে উঠেছিল ‘কমার্শিয়াল ছবি’। শুধু কি তাই? তার সহজ সরল অভিনয় ছুঁয়েছিল বলিউডেও। ১৯৮৪ সালে হীরেন নাগের ছবিতে তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। রাখি গুলজারের সঙ্গেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু তাপস পাল পুরোদস্তুর বাংলা ছবির অভিনেতা। কলকাতায় তরুণ মজুমদারের ডাকে মুম্বাই থেকে কলকাতা ফিরে এসে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে অভিনয় করেন ‘ভালবাসা ভালবাসা’ ছবিতে। ১৯৮৫-তে এই ছবি বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য এনে দেয়।
বাংলা ছবিতে তৈরি হয় দেবশ্রী-তাপস জুটি। একে একে বাড়তে থাকে ছবির তালিকা। ‘অর্পণ’, ‘সুরের সাথী’, ‘সুরের আকাশে’, ‘নয়নমণি’, ‘চোখের আলোয়’, ‘তবু মনে রেখো’। তপন সিংহ থেকে অঞ্জন চৌধুরী, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় থেকে তরুণ মজুমদার আশি থেকে নব্বই দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের প্রেম, অভিমান, অনুরাগ এবং লড়াই বাঙালির সমস্ত আবেগের নাম তাপস পাল।
পরবর্তীকালে দেবশ্রী পেরিয়ে শতাব্দীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন এই নায়ক। হরনাথ চক্রবর্তী, তরুণ মজুমদারের হাত ধরে এই জুটির ম্যাজিক ক্লিক করে বক্স অফিসে। শুধু শতাব্দী বা দেবশ্রী নয় ইন্দ্রাণী হালদার থেকে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। দেবাদিত্যের ‘আটটা আটের বনগাঁ লোকাল’ ছবিতে শেষ বারের মতো দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
রুপোলি পর্দার নায়ক থেকে প্রথমে বিধানসভা এবং পরে পরে সংসদের গণ্ডিতে পা রাখেন তাপস পাল। ২০০৯ সালে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ওই বছর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের টিকিটে কৃষ্ণনগর থেকে জিতে সাংসদ হন তাপস পাল। নানা মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে রোজভ্যালি কাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারও করে সিবিআই। পরে জামিনও পান তিনি। শেষ পর্যন্ত অভিনয়ের চেনা জগতেও ফিরতে চেয়েছিলেন এই অভিনেতা। কিন্তু অসুস্থতা তাঁকে সবার চোখের আড়ালে নিয়ে গেল। জীবনের ইতি টেনে দিলেন এই বসন্তে।
বিষয়: তাপস পাল
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: