সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


ভারতীয় সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের চিন রাজ্যে সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা


প্রকাশিত:
২৭ জানুয়ারী ২০২৩ ০৩:০৯

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:১৮

 

ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের চিন রাজ্যে সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ১০ জানুয়ারি সীমান্তবর্তী এলাকায় বিদ্রোহী চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (সিএনএফ) সদর দপ্তর লক্ষ্য করে সামরিক জান্তা বিমান হামলা করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ওই দিন মিয়ানমারের নিক্ষেপ করা গোলা ভারতীয় ভূখণ্ডে পড়েছিল।

মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভারতীয় সীমান্তের কাছে সিএনএফ সদর দপ্তর ‘ক্যাম্প ভিক্টোরিয়ায়’ হামলা করেছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর অবস্থান ভারতের মিজোরাম রাজ্য ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যকে বিভক্তকারী তিয়াউ নদীর কাছে। এদিন বিমান হামলায় সিএনএফের পাঁচ সদস্য নিহত হয়। এটি ছিল সংগঠনটির কার্যালয় লক্ষ্য করে পরিচালিত প্রথম কোনো হামলা। ওই দিনের হামলায় বসতবাড়ি ও চিকিত্সাকেন্দ্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর থেকে সিএনএফ জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রয়েছে। বর্তমানে তারা গণতন্ত্রপন্থী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ছে।

চিন রাজ্যে চিন মানবাধিকার সংগঠনের উপপরিচালক সালাই জা উক লিং বলেন, জান্তা বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলার পর রাজ্যজুড়ে সংঘাত আরো বাড়বে। কারণ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চিন যোদ্ধারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মিয়ানমারের সংঘাত ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকায় গণতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলন এবং জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর তত্পরতা থামাতে বিমান হামলার ওপর ভরসা করছে জান্তা। এতে বেসামরিক মানুষের প্রাণ হারানোর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

এ বিষয়ে আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট জানায়, অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত মিয়ানমারে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
ভারতের মিজোরাম রাজ্যের বাসিন্দাদের সঙ্গে চিন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের নৃতাত্ত্বিক সম্পর্ক নিবিড়। সর্বশেষ সামরিক শাসন জারির পর মিয়ানমার থেকে ৪০ হাজার শরণার্থী মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। বিমান হামলার পর সীমান্ত এলাকায় ভয় বেড়েছে।

পাঁচ সহযোদ্ধার প্রাণহানির পর থেকে আরো বিমান হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন সিএনএফ যোদ্ধা ভ্যান বাউই ম্যাং। সিএনএফ যোদ্ধারা এখন নির্ঘুম রাত পার করছেন। তবে বাউই ম্যাং বলেন, হামলা চালিয়ে জান্তা সিএনএফ যোদ্ধাদের মনোবল দুর্বল করতে পারবে না।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে, মিয়ানমারের গোলা ভারতের চাম্ফাই জেলার ফারকওয়ান গ্রামে পড়েছিল। তবে হামলার পর গত ১৯ জানুয়ারি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ভূখণ্ডে কোনো গোলা এসে পড়েনি।

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজে) গত ১৭ জানুয়ারি এক বিবৃতিতে জান্তার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে হামলা চালানোর সুযোগ বন্ধ করে দিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়।

সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের সশস্ত্র সংঘাতবিষয়ক রাজনৈতিক ভূগোলের প্রভাষক শোনা লং বলেন, ক্যাম্প ভিক্টোরিয়ায় আক্রমণ চালানোর পদ্ধতি দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে কয়েক দশক ধরে সক্রিয় মিয়ানমারের ২০টির বেশি সশস্ত্র সংগঠনকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার হাসপাতালের একজন চিকিত্সক জানান, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত জান্তার হামলার শিকার হওয়া পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষকে চিকিত্সা দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে বেশির ভাগই সীমান্ত এলাকার বেসামরিক মানুষ। তিনি বলেন, ‘আমরা চিকিত্সা দেওয়ার জন্য চিন রাজ্যে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হিসেবে ক্যাম্প ভিক্টোরিয়ার কার্যালয়কে বেছে নিয়েছিলাম। ভাবতে পারিনি যে বেসামরিক হাসপাতালেও বোমা হামলা চালিয়ে অমানবিক কাজ করবে তারা।’


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top