সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক আন্দোলন


প্রকাশিত:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:১৪

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:১১

 

২৩ সেপ্টেম্বর, কলকাতার ধর্মতলায় মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে দুপুর ২টো থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের স্বৈরাচারী নীতি ও রাজ্য সরকার, শিক্ষাদপ্তর ও শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ করে শিক্ষায় নৈরাজ্য সৃষ্টির বিরুদ্ধে পথসভা করলো তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা সেল। এই পথসভায় সামিল হয় তিনটি সংগঠন, পশ্চিমবঙ্গের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সমিতি তথা ওয়েবকুপা, নিখিলবঙ্গ রাজ্য সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি ও সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি।

রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে, রাজ্যের সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য রাজ্যপালের ক্রমাগত নিয়ে চলা সিদ্ধান্তগুলি রাজ্যের শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক সমাজ একদমই ভালো চোখে দেখছেন না এবং এ নিয়ে তীব্রতর আন্দোলন চলতে থাকবে বলে তারা জানান, বিক্ষোভ সভাতে এ নিয়ে সতর্কবার্তা দিলেন তৃণমূল শিক্ষা সেলের অধীন অধ্যাপক সংগঠনের অধ্যাপক সমাজ। এ দিনের অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিল পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সমিতি (ওয়েবকুপা), নিখিলবঙ্গ রাজ্য সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি ও সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি।


ছবিঃ বিকাশভবন-রাজভবন সংঘাত: শিক্ষামন্ত্রী সহ কলকাতার রাজপথে তৃণমূল শিক্ষা সেলের অধ্যাপক সমাজ

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছয় শতাধিক অধ্যাপক,শিক্ষাবিদ, শিক্ষকের উপস্থিতির সাথে সাথে এদিন নজর কেড়েছে পথসভার মধ্যলগ্নে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের শিক্ষাসেলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ব্রাত্য বসুর উপস্থিতি ৷ এদিনের সভাতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক রথীন্দ্রনাথ বসু,সভাতে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শিবরঞ্জন চট্টপাধ্যায়, অধ্যাপক লক্ষ্মীনারায়ণ শতপথী,অধ্যাপক মহীতোষ গায়েন, অধ্যাপিকা সৌমী দাস ঘোষ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজীপ্রতীম বসু, অধ্যাপক প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায়, অধ্যক্ষ পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক শ্যামলেন্দু চট্টপাধ্যায়, অধ্যাপিকা কৃষ্ণকলি বসু, অধ্যাপক মণিশঙ্কর মন্ডল, অধ্যাপক সুমন বন্ধ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক সমীর চট্টপাধ্যায়, অধ্যাপক সেলিম বক্স, অধ্যাপক অসীম মণ্ডল, প্রমুখ ২৫জন অধ্যাপক। অধ্যাপক মহীতোষ গায়েন বলেন- "রাজ্যপাল বিধানসভায় পাশ হওয়া মুখ্যমন্ত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হবেন সংক্রান্ত বিলে সই না করে দেড় বছরের উপর রাজভবনে ফেলে রেখেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা বিল না মেনে, হায়ার এডুকেশন বিল অনুযায়ী অডিন্যান্স মোতাবেক সার্চ কমিটির সুপারিশে সই না করে ফেলে রেখে, ইউজিসি রেগুলেশন না মেনে বেআইনী ভাবে গভীর রাতে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন অবৈধভাবে, তাদের কারোরই ইউজিসি রেগুলেশন অনুয়ায়ী যোগ্যতা নেই, শুধু তাই নয় আবার পূর্বতন উপাচার্যদের সরিয়েও দিয়েছেন তিনি,যে সমস্ত নতুন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন তারা শিক্ষকদের প্রমোশন,রিসার্চ বিষয়ক নথিতে সই, শূন্য পদে অধ্যাপক পদ নিয়োগ করতে পারছেন না, এত ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কার্যত অস্থায়ী উপাচার্যরা ঠুঁটো জগন্নাথ। তিনি মিডিয়াকে লক্ষ্য করে রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে আরো বলেন- 'মাননীয় রাজ্যপাল, আপনি রাজভবনকে ফ্রান্সের রাজকীয় স্বৈরাচারের মূর্ত প্রতীক বাস্তিল দুর্গে পরিণত করবেন না, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্তরের শিক্ষকসমাজ সহ আমজনতা ঐ দুর্গকে ধ্বংস করতে রাজপথে নামবে'। তিনি বলেন- শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু রাজ্যপালকে মহম্মদ বিনতুঘলক ও ভ্যাম্পপায়ারের সঙ্গে যে তুলনা করেছেন তা ঐতিহাসিক ভাবে যথার্থ,কারণ মহম্মদ বিনতুঘলক ১৩২৩-১৩২৫ -এ দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের বিগত বছরের আজন্মাজনিত কারণে কৃষকদের শোচনীয় অবস্থার কথা না ভেবে, বাস্তব অচল অবস্থার কথা না ভেবে ঐ অঞ্চলের কৃষকদের উপর রাজস্ব বৃদ্ধি করেছেন, তেমনি শিক্ষায় অচলাবস্থার কথা না ভেবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো, শূন্য পদে অধ্যাপক ও আধিকারিক নিয়োগ, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা,গবেষণার খোঁজ না নিয়ে, না ভেবে যেভাবে স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন তাতে তিনি বিনতুঘলক এর মতই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। গভীর রাতে যে কোন রাজ্যের শাসক তথা রাজ্যপালের শাসানিতে সেই রাজ্যের মানুষ আতঙ্কে ভোগেন, তখন সেই শাসানির অধিকর্তাকে তাদের স্বাভাবিকভাবেই রক্তচোষা বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক, সেই অর্থে শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য যথার্থ "এদিন সমস্ত বক্তার বক্তব্যের মধ্যেই রাজ্যপালের উদ্ভট আচরণ,রাজ্যের শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কোন আলোচনা বা পরামর্শ না করে যেভাবে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরাচারিতা চালিয়ে গোটা শিক্ষাজগতে অন্ধকারে ঢেকে দিচ্ছেন, সমস্ত শিক্ষকসমাজকে অপমান করছেন, নির্বাচিত সরকার, মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে অপমান করছেন তাদের বক্তব্যে তা প্রকাশ পায়।

সবশেষে শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ব্রাত্য বসু তাঁর স্বভাবসিদ্ধ বৃদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গিতে একই ব্যক্তির রাজ্যপাল ও আচার্য হিসাবে দ্বৈত চরিত্রের কথা উল্লেখ করেন ৷ রাজ্যপালের একই সাথে আচার্য ও উপাচার্যের ভূমিকা পালন নিয়ে তিনি কটাক্ষ করেন ৷ ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজ্যপাল পদের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী জানান শিক্ষার প্রাঙ্গণ শিক্ষাবিদদের হাতে থাকুক - তিনি চান, রাজনীতিবিদদের হাতে নয়। তিনি আরো বলেন -'বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অবিচার করছেন। নিজেই কোনো সময় আচার্যের ভূমিকা পালন করছেন আবার নিজেই কখনও উপাচার্য হয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, 'রাজভবনে কবি বসে আছেন। কিন্তু কবি তুমি কুমোরের নয়, তুমি কামারের নয়। তুমি রাজার। কবির মেয়াদ তো আর ৫-৬ মাস।' তিনি আরও বলেন 'আমার নেত্রী সারা ভারতবর্ষের এক নম্বর আইকন। তাকে আপনি ছোট করতে চাইছেন। বলছেন তার ওপরে আমি, তার সাথে কথা বলে নেব। এতে আপনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও অপমান করছেন।
এই আন্দোলন এখানেই থেমে থাকবে না। আরও তীব্রতর হবে।' যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে ব্রাত্য বসু বলেন, 'যাদবপুরে উপাচার্য আমরা পাঠাইনি যিনি পাঠিয়েছেন তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন।' একটি উপন্যাসের চরিত্রের বক্তব্য তুলে ধরে কিছু কিছু অস্থায়ী উপাচার্যদের আচরণ 'ডুডু খাবো আবার তামাক খাবো'-র মত আচরণেও তিনি কটাক্ষ করেন। কটাক্ষ করে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন- 'এত কিছুর পরেও কি আমি বলছি এক মাঘে শীত যায় না? আমি তো সেটা বলছি না। তবে আমি কিছু তো একটা বলবো,আমি শুধু বলছি আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। আনন্দ উড়ুক।'
এদিনের পথসভায় আচার্যের সার্বিক অগণতান্ত্রিক নীতি এবং উচ্চশিক্ষায় রাজ্যপাল ও তার অশুভ চক্র সৃষ্ট স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদরা তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে ও জমায়েতের মাধ্যমে রাজপথে নেমে লাগাতার আন্দোলনের যে হুঁশিয়ারি দেন তাতে ছিল রাজ্যের শিক্ষাজগতে নৈরাজ্য মুক্তি ও উচ্চশিক্ষায় বেহাল দশা ফেরানোর অঙ্গীকার ও বৃহত্তর আন্দোলনের শপথ। তৃণমূল শিক্ষা সেলের ছয় শতাধিক অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ ও কিছু শিক্ষক সমিতির সদস্যদের উপস্থিতি জানান দেয় আগামীতে বৃহত্তর বহুমুখী আন্দোলন হতে চলেছে। এদিনের পথসভাটির সামগ্রিক সঞ্চালনায় ছিলেন অধ্যাপক মনোজিৎ মন্ডল।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top