সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১


ইসরায়েল যেভাবে বিশ্বজুড়ে ‘ইসলামবিদ্বেষ’ ছড়ায়


প্রকাশিত:
৩১ মে ২০১৮ ০৯:৩৪

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৪:১৩

ইসরায়েল যেভাবে বিশ্বজুড়ে  ‘ইসলামবিদ্বেষ’ ছড়ায়

বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের অর্থায়নে কীভাবে ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানো হয়- তা নিয়ে সম্প্রতি এক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আলজাজিরা। গণমাধ্যমটি এর নাম দিয়েছে ‘ইসলামবিদ্বেষী ইন্ডাস্ট্রি’। এর আগে ব্রিটিশ রাজনীতি ও ছাত্র সংগঠনগুলোতে ইহুদিবাদী লবিগুলো কীভাবে কাজ করে- এ নিয়ে এক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল আলজাজিরা।



পশ্চিমা দুনিয়ায় মুসলিমবিদ্বেষী উস্কানীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে বিভিন্ন ইহুদিবাদী সংগঠন ও গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলো সারা পৃথিবীতেই কাজ করছে। তবে তাদের প্রাথমিক কাজ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিত মুখ ফ্রাংক গ্যাফানি, পামেলা গেলার, রবার্ট স্পেন্সার ও ব্রিগিটি গ্যাব্রিয়েল। আলজাজিরা তাদের ওই প্রতিবেদনে, ইসলামবিদ্বেষের শিকার ভুক্তভোগীদের সঙ্গেও কথা বলেছে।



গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০১৬ সালে নিজেদের ব্যবসার কাজে সোমালি-মার্কিন মুসলিমদের পাঁচজনের একটি দল তাদের বাড়ি যাচ্ছিল। বিমানবন্দরে অ্যান্থনি সাউইনা নামের এক লোক তাদের বাধা দিয়ে বলতে থাকে ‘ফাক মুসলিম’। এরপর তিনি একটি বন্দুক বের করে তাদের দিকে তাক করে এবং কয়েকটি গুলি করে।



ওই ঘটনায় দুইজন আহত হয়। তবে প্রাণে বেঁচে যেতে পেরেছিলেন এবং আদালতে সাক্ষ্য দিতে পেরেছেন। ওই ঘটনায় সাউইনার ৩৯ বছরের জেল হয়। কিন্তু পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে সাউইনাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়নি। অথচ গুলিবর্ষণকারী যদি মুসলিম হতো তবে তাকে অবশ্য ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয়া হতো।



আলজাজিরার ডকুমেন্টারিতে সবচেয়ে ভয়াবহ ফুটেজটি দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলোতে ইসলাবিদ্বেষী চরমপন্থিরা কীভাবে মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের ভেতরে যেতে বাধা দিচ্ছে। নারী, পুরুষ, শিশু- সাবাইকে তারা নানা ধরনের ইসলামবিদ্বেষী শব্দবানে জর্জরিত করছে। অথচ সেসব মুসলিমরা মসজিদে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার চর্চা করতে সেখানে যাচ্ছিলেন।



গত বছর মার্কিন অঙ্গরাজ্য মিনেসোটার একটি মসজিদে একই ধরনের একটি ইসলামবিদ্বেষের ঘটনা ঘটে। ওই হামলার নিন্দা জানাতে অস্বীকার করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ঘটনাটিকে বিকৃত করে প্রচার করেছিল ইসলাবিদ্বেষীদের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সামাজিকমাধ্যম।



সে সময় ফক্স নিউজের একটি অনুষ্ঠানে এসে ওই ঘটনাকে ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্পের উপদেষ্টা সেবাস্তিয়ান গোরকা। তিনি নিজে হাঙ্গেরির উগ্রপন্থি একটি গোষ্ঠীর সদস্য, যারা নিজেরা নাৎসিবাদী হিসেবে পরিচিত। এসব গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করা হয় ইসরায়েল থেকে।



আলজাজিরা ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক রেকর্ড খতিয়ে দেখেছে। এতে দেখা যায়, ইসলামবিদ্বেষী ইন্ডাস্ট্রির বেশিরভাগ একটি উৎসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় ইসরায়েল। ইসরায়েলপন্থি সংগঠনগুলোর বেশিরভাগই ভয়ঙ্করভাবে ইসলামবিদ্বেষী। যারা মনে করে, হলোকাস্ট থেকে ইহুদি ভুক্তভোগীদের বাঁচাতে ও ইউরোপের ইহুদি শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তারা ভুল করেন।



ঐতিহাসিক বাস্তবতার দিকে তাকালে দেখা যাবে, ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক আন্দোলন ‘ইহুদিবাদ’ মূলত একটি উপনিবেশবাদী আন্দোলন, যারা ইউরোপীয় ইহুদিদের বাধ্য করেছিল নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে এসে ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড দখল করতে।



যেহেতু যেসব ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা প্রধানত মুসলিম- তাই ইসলামবিদ্বেষী একটি ধারা সৃষ্টি ইহুদিবাদের জন্য অপরিহার্য ছিল। ইসরায়েল যত শক্তিশালী হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে ইসলামবিদ্বেষী এই ধারাটিও শক্তিশালী হয়েছে।



যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর ‘ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতার’ নামে এই ধারাটি আরো জনপ্রিয় হয়েছে। এতে মুসলিমদের বাদ দিয়ে এমন একটি সভ্যতার কথা বলা হয়েছে, যেখানে ইসরায়েলকে সমর্থন করা হবে এবং তার সব অপরাধের সহযোগিতা করা হবে। অথচ ইউরোপের খ্রিস্টান দেশগুলো যেখানে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে লিপ্ত থেকেছে, যারা একটি ‘খ্রিস্টান সভ্যতাই’ তৈরি করতে পারেনি, তাদের দিয়ে কীভাবে ‘ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা’ সম্ভব?



ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমপ্রধান দেশগুলো খ্রিস্টানদের নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা ইহুদিদের যুগ যুগ ধরে সহায়তা করেছে। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ স্পেনের ইনকুইজিশন।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top