সিডনী শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই আশ্বিন ১৪৩১


মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের ধরপাকড় বন্ধ ঘোষণা: বাংলাদেশিসহ ১০ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে


প্রকাশিত:
২৭ মার্চ ২০২০ ০২:৩৬

আপডেট:
২৮ মার্চ ২০২০ ০৩:০০

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী: করোনা ভাইরাসের সেদেশে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ ঘোষণা করেছে মালয়েশিয়া ইমিগ্ৰেশন বিভাগ। কিন্তু এই প্রথম মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীসহ ১০ জনের মধ্যে জ্বর ও সর্দি কাশির উপসর্গ পাওয়াই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও সেদেশের রাজা- রানী ও হোম কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন।

 রাজধানীর কুয়ালালামপুরের পাইকারি বাজার সেলায়াং পাসারে ৪০০ শতাধিক বিদেশিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর দশজনের মধ্য জ্বর কাশির উপসর্গ পাওয়াই তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেন সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বুধবার (২৫ মার্চ) কুয়ালালামপুর সিটি কর্পোরেশন (ডিবিকেএল) ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় (এমওএইচ) পরিচালিত দুই ঘন্টার যৌথ অভিযানের সময় তাদের শনাক্ত করা হয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ থেকে ২ মার্চে অনুষ্ঠিত সেরি পেতালিং মসজিদে তাবলীগ জামাতে অংশ নিয়েছিলেন তারা। তাদেরকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ডিবিকেএল কর্পোরেট পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক খায়রুল আজমির আহমদ জানান, অভিযানের সময় বিদেশি কর্মীরা তাদের দোকানগুলো বন্ধ করে দিচ্ছিলো। এ দোকান গুলো রাত ১০টা থেকে পরেরদিন সকাল পর্যন্ত চালু থাকে। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন সেখানে পৌছাই তখন তারা আমাদের দেখে পালানোর চেষ্টা করছিল। কারন তারা ভেবেছে তাদেরকে গ্রেফতার করতে এসেছি। কিন্তু আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে কোভিড-১৯ এর হেলথ স্ক্রিনিং টেস্ট বা করোনার উপস্থিতি পরীক্ষা করার। এসময় ৪শত বিদেশি কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর ১০ জন কর্মীকে চিহ্নিত করি।

যাদের জ্বর, কাশি ও ফ্লু জাতীয় রোগের উপস্থিতি ছিল। ১০ জন কর্মীর মধ্যে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক বলে জানান তিনি। তবে কোন দেশের কতজন সেটা নিশ্চিত করেননি। ডিবিকেএল সবসময় শহরের বাজারগুলোতে কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহোযোগিতা করে আসছে বলে জানান তিনি।

এ দিকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের গ্রেফতার করা হবেনা বলে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সাবরি। মালয়েশিয়া যখন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন অতিক্রম করে যাছে। পুরো মালয়েশিয়ায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার লকডাউন সহ বিভিন্ন বড় পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কোন ত্রুটি রাখছেনা। বিপুল পরিমাণে বাজেট করা হয়েছে করোনা প্রতিরোধে। তাবলীগ ইজতেমায় অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রায় ১ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান।

পুলিশের তথ্যমতে ইজতেমায় প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গা রিফিউজি অংশগ্রহণ করেছে। ঐ ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদি কারো শরীরে করোনার লক্ষ্মণ গুলো অনুভত হয় তাহলে দেশটিতে অবস্থানরত সকল বৈধ ও অবৈধ অভিবাসীদের অতি সত্তর হাসপাতালে গিয়ে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে। এক্ষেত্রে একজন মানুষ বা একজন রোগী হিসেবেই চিকিৎসা দেয়া হবে। সেখানে ভিসা আছে কি না বা কোম্পানির মেডিকেল কার্ড আছে কি নেই সেটা যাচাই করা হবেনা। বর্তমানে আমরা অবৈধভাবে অবস্থানরত কাউকে গ্রেফতার করোনা। এই ক্ষেত্রে অবৈধদের ভয় না পেয়ে নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে মেডিকেল চেক আপের পরামর্শ দেয়া হয়।

মালয়েশিয়ার মেডিসিন স্যানস ফ্রন্টিয়ারস (এমএসএফ) মিশনের প্রধান বিট্রিস লাউ বলেছেন, সরকারের ১০/২০০১ সার্কুলার বাতিল করা উচিত যাতে অবৈধ অভিবাসীদের চিকিৎসা বিষয়ে পুলিশ এবং ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের কাছে জবাবদিহি না করতে হয়।

তিনি ২৪ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, প্রায় ২০ বছর আগে প্রথম সার্কুলার ১০/২০০১ প্রনয়নের পর থেকে মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে যাওয়া অভিবাসীরা চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ধীরে ধীরে হুমকির মধ্যে জীবন কাটিয়ে আসছে। গত ২২ মার্চ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরির ঘোষণা অনুযায়ী  কোভিড -১৯ এর উপস্থিতি সন্দেহে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় সরকারের কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনিপদক্ষেপ নেবেনা বলে আশ্বস্ত করেছেন। এমএসএফ  মিশনের প্রধান লাউ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ১০/২০০১ সার্কুলারটিকে মানবিক সাহায্য হিসেবে বাতিল করার অনুরোধ জানিয়েছেন যাতে করে অবৈধ অভিবাসীসহ সবাই চিকিৎসা করতে পারে।

এ দিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে চলাচলের ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকার প্রেক্ষিতে বুধবার তিনি এই ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার সেদেশের মন্ত্রী পরিষদের ২ মাসের বেতন কর্তনের ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৩১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ২৩ জন।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top