নিউইয়র্কে গণকবর দেওয়া হচ্ছে করোনায় মৃতদের


প্রকাশিত:
১১ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২০

আপডেট:
১২ এপ্রিল ২০২০ ২০:১৯

নিউইয়র্কে গণকবর দেওয়া হচ্ছে করোনায় মৃতদের

বিশ্বের অন্য কোনো দেশে অত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়নি যতটা হয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিউইয়র্ক শহরে যারা করোনায় মারা যাচ্ছেন তাদের গণকবর দেওয়া হচ্ছে। নিউইয়র্কে প্রতিদিন শত শত মানুষ করোনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। বিরাট গণকবরে একসঙ্গে অনেক মানুষকে কবর দেয়া হচ্ছে, ড্রোন দিয়ে তোলা এমন ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের মহামারি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে নিউইয়র্কে। সেখানে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। মুখ থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত ঢাকা ‌‘হ্যাজমাট’ স্যুট পরা কর্মীদের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে বিরাট এক গণকবরে। তারা মই দিয়ে সেই কবরে নামছে, একটার পর একটা কফিন সেখানে রাখছে। এই কবরস্থানটি হচ্ছে নিউ ইয়র্কের হার্ট আইল্যাণ্ডে। সাধারণত যেসব মৃত ব্যক্তির কোন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ পাওয়া যায়না বা যাদের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের খরচ দেয়ার সাধ্য নেই, তাদেরকেই এখানে কবর দেয়া হয়। নিউইয়র্কের করোনাভাইরাস মহামারি এখন ভয়ংকর চেহারা নিয়েছে। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই একটি রাজ্যের আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাই অন্য যে কোন দেশের চেয়ে বেশি।

নিউইয়র্কে গণকবর দেওয়া হচ্ছে করোনায় মৃতদের

বৃহস্পতিবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯শ ৩৭। মারা গেছে সাত হাজার। অন্যদিকে স্পেনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ এবং ইতালিতে ১ লাখ ৪৩ হাজার। আর চীনে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৮২ হাজার। আর পুরো যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ ৬২ হাজার। মৃত্যু ঘটেছে ১৬ হাজার ৫শ মানুষের।

ড্রোনে তোলা ফুটেজ

নিউইয়র্কের হার্ট আইল্যান্ড গত দেড়শ বছর ধরেই গণকবরের জন্য ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে যেসব মৃত ব্যক্তির কোন স্বজন খুঁজে পাওয়া যায় না বা যাদের পরিবার শেষকৃত্যানুষ্ঠানের খরচ জোগাতে পারে না, তাদের শেষ ঠিকানা এই হার্ট আইল্যান্ড। ড্রোনে তোলা ছবিতে যেসব কফিন দেখা যাচ্ছে, তার বেশিরভাগই করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের, এমন সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

নিউইয়র্কে গণকবর দেওয়া হচ্ছে করোনায় মৃতদের

করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হওয়ার পর এই জায়গায় কবর খোঁড়ার কাজ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে কবর খনন করা হতো সপ্তাহে একদিন, এখন সপ্তাহে পাঁচদিন খনন কাজ চলছে। সাধারণত রিকার্স আইল্যান্ডের কারবন্দীদের দিয়ে কবর খোঁড়ানো হয়। কিন্তু এখন যেহেতু অনেক বেশি কবর খুঁড়তে হচ্ছে, তাই এই কাজ দেয়া হয়েছে ঠিকাদারদের। নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্ল্যাসিও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সংকট কেটে না যাওয়া পর্যন্ত হয়তো অনেককে ‌‘অস্থায়ী কবরে‌’ সমাহিত করতে হতে পারে।

তিনি বলেন, ‍“ঐতিহাসিকভাবে আমরা হার্ট আইল্যান্ডকেই এই কাজে ব্যবহার করেছি।” নিউইয়র্কে বুধবার আরো ৭৯৯ জন করোনাভাইরাসে মারা গেছে। পর পর তৃতীয় দিনের মতো সেখানে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হলো। তবে নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কামো আশাবাদী যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কারণ দ্বিতীয় দিনের মতো হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কমেছে।

নিউইয়র্কে গণকবর দেওয়া হচ্ছে করোনায় মৃতদের

তিনি বলেছেন, মানুষজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এন্ড্রু কামো নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসের মহামারির ভয়াবহতাকে নাইন-ইলেভেনের ভয়াবহতার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ডঃ ফউসি এনবিসি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, কোভিড-নাইনটিনে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা ৬০ হাজারের মতো দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তারা। গত মার্চে তারা অবশ্য এক লাখ হতে দুই লাখ মানুষ মারা যেতে পারে বলে আশংকা করেছিলেন।

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top