সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

দ্য কিউরেটর : ফাল্গুনী দে


প্রকাশিত:
৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৫১

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৪

 

দ্য কিউরেটর-

বালিগঞ্জ পোস্ট অফিস থেকে একটি চিঠি টেক্সাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল অফুরান এক ভালোবাসার ডানায় চড়ে। হয়তো কিছু বলার ছিল যা শুধু কলমের প্রকাশেই সম্ভব; সরাসরি নয়। দূরত্বের সাথে পাল্লা দিয়ে দূরত্ব বেড়ে গেলে যেমন একটা সেতু বন্ধন প্রয়োজন পড়ে। বন্ধ খামের ব্যক্তিগত ওপারে কি থাকে সেকথা কেউ বলতে পারেনা !

খামের উপরে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা দুই দেশের ঠিকানা, বহু মূল্যের ডাকটিকিট, সরকারি সিলমোহর এবং অন্যান্য তথ্য খুঁটিয়ে পড়ে ফেলে সুনীতা মাসি। সারাদিন নোংরা ঘেঁটে কাগজ কুড়ানো তার পেশা হলেও কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো ইংরেজি সে জানে। বুঝতে পারে ও দেশে কেউ এই চিঠি নিতে আসেনি রাইড-এর অভাবে। মাস খানেকের মধ্যেই ফিরে এসেছিল অবহেলায়। দায়িত্বজ্ঞানহীন ডাক অফিসের লোকেরা ঝেঁটিয়ে ফেলে দিয়েছিল রাস্তায়। সুনীতা পরম যত্নে তুলে নিয়েছিল সাইকেলের পেছনে। 

বাস কন্ডাক্টর সুবল এর সঙ্গে সুনীতার খুব কম বয়সেই বিয়ে। নোংরায় কোমর ডুবিয়ে জীবন কেটে গেছে। প্রেম ভালোবাসার সাজপোশাক সেভাবে চমকায়নি জীবনে। আমেরিকা কোনদিকে যেতে হয়, সে জিজ্ঞাসা নেহাতই অপ্রাসঙ্গিক। ফুটপাতের নিয়ন আলোয় কাগজের স্তূপের উপর বসে খামটা নেড়েচেড়ে দেখে। দেশে দেশে বহু হাত ঘুরে চিঠিটা এখন জীর্ণ ময়লাটে পরিশ্রান্ত। খুব কৌতুহল হলেও বন্ধ খামের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সম্মান করে তুলে রাখে একটি নিষ্পাপ টিনের বাক্সের মিউজিয়ামে। রাতে সুবলের পাশে শুয়ে সুনীতা মন খারাপের সুরে জানতে চায়- "তুমিতো আমাকে কোনোদিন চিঠি লেখনি ! আমাদের কি ভালোবাসা ছিলনা ?"

 

ভোকাট্টা-

যাবতীয় পার্থিব আকর্ষণ তুচ্ছ করে ঘুড়িটি উড়ে গেল আকাশে। চিলেকোঠা থেকে ডানা মেলে যেন এক উন্মাদিনী। কাটা সুতোটুকু নামতে নামতে হারালো কোন মেঘের মিনারে খেয়াল করিনি। মনমরা বিকেলে লাটাই হাতে চিৎ শুয়ে থাকি ছাদে। বাঁশে বাঁধা অ্যান্টেনার দিকে অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকি। রূপসা এইভাবে চলে গিয়েছিল হটাৎ একদিন না বলে। সেদিনও ঠিক এই রকমই কষ্ট হয়েছিল। ওর বাবার রেলের চাকরি। বয়সের থেকেও বেশিবার বদলেছে শহর। অথচ আমি একটি গাছের মতো সারাজীবন একই জায়গায় স্থানুবৎ। 

মাঝে মাঝে স্বপ্নে আমাদের দেখা হয়। আমি শুনি রূপসা গল্প বলে -- সেদিন সুতো কেটে উড়ে যাবার পর পথে এক ঝাঁক সাইবেরিয়া ফেরৎ পরিযায়ী পাখির সাথে আলাপ। ওরা বলেছিল বরফের তাবু এবং অরোরা বরিয়েলিসের ককটেল। সন্ধ্যার পর পথ হারাবার ভয়ে এক ঈগল পাখির ডানায় নিয়েছিল আশ্রয়। আড়চোখে দেখেছিল ঠোঁটে এবং নখে রক্তের দাগ। মাঝ রাতে মেঘের গায়ে চাঁদের আলোয় একবার মনে হয়েছিল রেল কলোনি। তারপর শেষরাতে বৃষ্টির মেঘ এসে আকন্ঠ ভিজিয়ে তুলে নিয়েছিল ল্যাম্বোরগিনির ঘনিষ্ট উষ্ণতায়। 

পরদিন সকালে আমার স্কুল। বিকেলে টিউশনি। গতানুগতিক নিয়মে অপরাপর জীবন। সন্ধ্যেয় ফিরে দেখি পড়ার টেবিলে বাবার উপহার, একটি ঝলমলে নতুন ঘুড়ি। 

 

ফাল্গুনী দে
কবি, গল্পকার, অধ্যাপক, যাদবপুর, কলকাতা ৭৫, ভারতবর্ষ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top