স্বপ্নের উড়ান : ডঃ সুবীর মণ্ডল
প্রকাশিত:
১ মার্চ ২০২১ ১৮:০৩
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ১৯:২৫

চাকরি পেয়েই মা বিজলী বালা মণ্ডলের শখ মেটালেন ছেলে সমীর মণ্ডল, চড়ালেন বিমানে। কোলকাতায় বস্তিতে বসবাস করত। বাড়ি সুন্দর বনের কুমিরমারী। মাত্র ১০ বছর বয়সে রিকশা চালিয়ে প্রথম রোজগার। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তেল-কাঁকড়া-সবজি-মাছ-শুঁটকি বিক্রি, অন্যের বাড়িতে কাজ, মাঝে মাঝে ট্রেনে হকারি করতো। গরুর গোবর দিয়ে ঘুটে বানিয়ে বিক্রি, বর্গা চাষ সহ পেটের দায়ে সবকিছু করেছেন সুন্দরবনের অজা পাড়া গ্রামের সমীর মণ্ডল। চালিয়ে গেছে পড়াশুনা। অদম্য ইচ্ছা, জেদ আর অসাধারণ মেধাবী। বহু মানুষকে পাশে পেয়েছিল, কেউ কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
শৈশব থেকে শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন তিনি। অনেক ব্যর্থতার পর গত বছরে পশ্চিমবঙ্গের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রকাশিত ফলাফলে (স্পেশাল নন-ক্যাডার) সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাঁকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
মায়ের ইচ্ছে ছিল বিমানে চড়ার। আর তাই, নিজের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার কাছাকাছি এসে মায়ের স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিতে আর তর সয়নি। খুব দ্রুত মায়ের স্বপ্নটা পূরণ করলেন তিনি। বিমানে পাশে বসিয়ে কোলকাতা থেকে মাকে নিয়ে গেলেন ত্রিপুরায়। রবীন্দ্রভারতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন সমীর। এখন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করার অনুমোদন পেয়েছেন। প্রথমবার বিমানে চড়ে মা বেশ খানিকটা ভয় পেলেও চোখে-মুখে ছিল খুশির ঝিলিক। মাকে সেভাবে কখনো হাসতে দেখেননি ছেলে সমীর মণ্ডল। একদিকে তার শিক্ষক হতে যাওয়ার সেই খুশি, অন্যদিকে বিমানে চড়ার স্বপ্নপূরণ-সব মিলে মায়ের চোখেমুখে যে তৃপ্তি সেটা ভাষায় প্রকাশের নয় বলে জানালেন।
উল্লেখ্য, সমীরের মা বিজলী বালা মণ্ডল ও অন্যের জমি ও বাড়ি-বাড়ি কাজ করে ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন। মাঝে মাঝে নদীতে বাগদা চিংড়ির পোনা ধরেছে। সমীরের এক ভাই সুন্দরবনে নৌকায় মাছ ধরার কাজ করেন। আরেক ভাই রিকশা চালান দমদমে। বলতে গেলে নিজেদের কোনো জায়গাজমি নেই। বাবা স্বপন মণ্ডল মানুষের জমিতে দিনমজুরি করতেন। তিনি মারা গেছেন অনেক আগে। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। আরেক বোনের স্বামী মারা গেলে তিনি বোন ও তাঁর দুই সন্তানের খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন।
একজন পর্বতারোহী যখন ওপরে উঠতে থাকেন, মাঝে মাঝে তিনি পিছলে পড়ে দুই তিন ধাপ নিচেও নেমে যান। কিন্তু ওপরে ওঠা থামান না তিনি। সমীর মণ্ডলও সেরকম একজন জীবনযোদ্ধা, শত অভাব অনটন দারিদ্রতা তাকে তার লক্ষ্যে থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।
অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আশীর্বাদ এবং শুভকামনা এই ভাইটির জন্যে। এই রকম অসংখ্য সমীর মণ্ডলরা ছড়িয়ে আছে এই বাংলায়। তারা যুদ্ধ করে চলেছে। জীবনযুদ্ধে জয়ী হোক শতশত সমীর মণ্ডলরা।
ডঃ সুবীর মণ্ডল
লোকগবেষক, প্রাবন্ধিক, অণুগল্প-ছোটগল্প, চিত্রনাট্য রম্যরচনা এবং ভ্রমণকাহিনীর লেখক
কলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত
বিষয়: ডঃ সুবীর মণ্ডল
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: