বাংলাদেশর পাসপোর্ট সংশোধনে খুশি ইসরাইল
প্রকাশিত:
২৪ মে ২০২১ ২১:০৫
আপডেট:
১৬ মার্চ ২০২৫ ১৩:৪৫

প্রভাত ফেরী: বাংলাদেশ পাসপোর্টে সংশোধন আনা হয়েছে। ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড একসেপ্ট ইসরাইল’ লেখা থেকে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ বাদ দেওয়া হয়েছে ই-পাসপোর্টে।
সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, পাসপোর্টে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে এ সংশোধনী আনা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইলের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। নতুন ই-পাসপোর্টে এমন সংশোধন সত্ত্বেও তেল আবিবের প্রতি ঢাকার অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।
তবে পাসপোর্টের এই সংশোধনে ইসরাইল সন্তোষ প্রকাশ করেছে। যদিও ফিলিস্তিন আশা প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ এই সংশোধনী থেকে সরে আসবে। বাংলাদেশ সব সময়ই ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সংগত সংগ্রামের পক্ষে। ইসরাইলের আগ্রাসনের বিপক্ষে। বাংলাদেশ দুই রাষ্ট্র সমাধানের ফর্মুলাকে সমর্থন করে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের আবেগের কারণে ইসরাইল ছাড়া বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণে এ পাসপোর্ট প্রযোজ্য লেখা ছিল। যদিও বিশ্বের আর কোনো দেশের পাসপোর্টে এমন কোনো কথা লেখা নেই।
তবে হঠাৎ কেন পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি বাদ দেওয়া হলো জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোববার বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেওয়া হয়নি। ছয় মাস আগে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের সময় নেওয়া হয়েছে। এখন জানাজানি হয়েছে। পাসপোর্ট মূলত একটি পরিচয়পত্র। এটি বিশ্বের অন্য দেশের পাসপোর্টের সমান মানসম্পন্ন হতে হয়। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরাইলের প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কোনো পরিবর্তন হবে না। বিদ্যমান সব নিয়মকানুন থাকবে। আমরা ফিলিস্তিনের জনগণের পক্ষে আছি, থাকব। আমরা দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে।’
এদিকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ বাদ দেওয়ায় ইসরাইল খুশি হয়েছে। ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলবিষয়ক উপপরিচালক গিলাড কোহেন টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘গ্রেট নিউজ! ইসরাইলের ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ। এটা স্বাগত জানানোর মতো পদক্ষেপ। আমি ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলে উভয় দেশের জনগণ লাভবান হবে। উভয় দেশের জনগণ সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে।’
ইসরাইলের এই প্রতিক্রিয়ার জবাবে বিকালে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে ইসরাইল ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করাকে স্বাগত জানিয়ে ইসরাইলের দেওয়া বিবৃতি ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। বাংলাদেশের পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে ই-পাসপোর্ট থেকে একসেপ্ট ইসরাইল শব্দ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কোনো পরিবর্তন হবে না। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ইসরাইল সম্পর্কে আগের অবস্থান থেকে বাংলাদেশ সরে আসেনি। এই বিষয়ে বাংলাদেশ তার দীর্ঘদিনের অবস্থানে স্থির আছে।’
এদিকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দটি বাদ দেওয়ার খবরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনের মতো আরব মুসলিম দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করার সঙ্গে ঢাকার সিদ্ধান্তকে মেলানোর চেষ্টা হয়। বিশেষ করে ইসরাইলের স্বাগত জানিয়ে দেওয়া বিবৃতির পর সবাই বিস্মিত হন। কোনো কোনো মিডিয়ায় ঢাকা-তেল আবিব সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জল্পনা বলে খবর প্রকাশ হয়। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ইসরাইলের বিবৃতি খণ্ডন করে ঢাকাও পালটা বিবৃতি দেয়।
জানতে চাইলে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়র একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা একটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, কারিগরি ব্যাপার। রাজনীতি কিংবা পররাষ্ট্রনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। পৃথিবীর কোনো দেশের পাসপোর্টে একসেপ্ট ইসরাইল শব্দ লেখা নেই। তাই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ই-পাসপোর্টে এই শব্দটি তুলে দেওয়ার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগে থেকে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত কোনো ব্যাপার থাকলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করত। এটা নিছক একটা প্রশাসনিক কাজ, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একক সিদ্ধান্ত নিয়ে করেছে। ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ইসরাইল ভ্রমণে আগের মতোই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।’
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: