২২ জানুয়ারি চালু হচ্ছে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট


প্রকাশিত:
১৩ জানুয়ারী ২০২০ ২২:২৩

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৯

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: ই-পাসপোর্ট (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) চালুর সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২২ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী এবং উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। ঢাকার এ আঞ্চলিক অফিসগুলো থেকে দিনে গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০টি পাসপোর্ট দেওয়া যাবে।

অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে এগুলোর সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ হিসাবে তিন অফিস থেকে দিনে ৯০০ থেকে ১০৫০টি ই-পাসপোর্ট প্রদান করা সম্ভব হবে বলে সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টের নমুনা কপি ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ও বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের (ডিআইপি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। ২২ জানুয়ারি থেকে ই-পাসপোর্ট বিতরণ শুরু হবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিখ্যাত জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস জিএমবিএইস ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট নিয়ে কাজ করছে।

তিনি বলেন, ২২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্টের উদ্বোধন করবেন।

তিনি বলেন, আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ী এবং উত্তরা পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা শুরু হবে। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে দেশের সর্বত্র ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। ই-পাসপোর্টের সূচনা দিয়ে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে।

জার্মানিতে ২ মিলিয়ন ই-পাসপোর্ট তৈরি হচ্ছে। ফলে আগে আবেদনকারীরা জার্মানির তৈরি পাসপোর্ট পাবেন। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের জন্য ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ডিআইপি এবং ভেরিডসের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ই-পাসপোর্ট ব্যবহারের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বয়ংক্রিয় গেটও এর মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব বন্দরে এই গেট চালু করা হবে। এ সময়ে ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও চালু থাকবে।

সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য হলো, এতে মোবাইল ফোনের সিমের মতো ছোট ও পাতলা আকারের ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ যুক্ত থাকবে। এই চিপ পাসপোর্টের একটি বিশেষ পাতার ভেতরে থাকবে। এ পাতা সাধারণ পাতার চেয়ে মোটা হবে। চিপে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক তথ্য বিশ্লেষণ করে পাসপোর্ট বহনকারীর পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। এতে করে একজনের নাম-পরিচয় দিয়ে অন্য নামে পাসপোর্ট কেউ করতে পারবে না। এ পাসপোর্ট নকল হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। সাধারণ পাসপোর্টের তুলনায় ই-পাসপোর্টে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও থাকছে বেশি। এতে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকবে, যার অনেক বৈশিষ্ট্য থাকবে লুকানো অবস্থায়। ই-পাসপোর্ট করার সময় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) ডেটাবেইসে পাওয়া তথ্যগুলো ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।

সাধারণ পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের আবেদনও অনলাইনে পাওয়া যাবে। চাইলে পিডিএফ ফরম ডাইনলোড করে হাতেও পূরণ করা যাবে। ফরম পূরণের সময় ছবি ও সত্যায়ন করা লাগবে না। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় আবেদনকারীর ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেওয়া হবে। সে সব তথ্য চিপে যুক্ত হবে। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ যন্ত্রের সামনে পাসপোর্টের পাতাটি ধরতেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।

ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট হবে দুই ধরনের। একটি ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার। সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরির জন্য ফি হবে তিন ধরনের। এবার দুই দিনের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়ার নিয়ম চালু হচ্ছে। এ জন্য ফিও বেশি গুনতে হবে।

প্রসঙ্গত, ই-পাসপোর্ট গত বছরের জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে সে তারিখ কয়েক দফা পিছিয়ে যায়। এর আগে ২৮ নভেম্বর থেকে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট চালু হবে বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। কিন্তু সব প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top