সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


ভালোবাসা ও বসন্ত এসেছে একসাথে


প্রকাশিত:
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:০১

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২১

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: উত্তুরে বায়ু নিয়েছে বিদায়, প্রকৃতি আজ দক্ষিণা দুয়ার খুলে দিয়েছে। সে দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। বসন্তের আগমনে কোকিল গাইছে গান। ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। আজ পহেলা ফাল্গুন। কবির ভাষায় ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’। আর এবারই প্রথম পহেলা ফাল্গুন আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়ে গেছে। তাই এবার বসন্ত আর ভালোবাসার ‘মাখামাখির’ দিন।

আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আমার জীবনে তুমি বাঁচো ওগো বাঁচো/ তোমার কামনা আমার চিত্ত দিয়ে যাঁচো’ অথবা ‘তোমরা যে বল ভালোবাসা ভালোবাসা/ সখী ভালোবাসা কারে কয়’। কবির বাঁচা-মরার এবং চিত্র দিয়ে ভালোবাসা বোঝাবুঝির চিরন্তন বোধ আজ হয়তো একটু বেশিই অনুভূত হবে গোলাপ বিনিময় ও শরীরী ভাষায়। বসন্ত বাতাসে হৃদয়ের মিথস্ক্রিয়ায় সারা বিশ্বের প্রেমপিয়াসী যুগলরা বছরের এ দিনটিকেই বেছে নেয় মনের গহীনের কথকতার কলি ফোটাতে।

ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এত বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সঙ্গে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। সব কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। সে ফাগুনের মাতাল হাওয়া দোলা দিয়েছে বাংলার নিসর্গ প্রকৃতিতে। নতুন রূপে প্রকৃতিকে সাজাবে ঋতুরাজ বসন্ত। ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্ত, যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত আর আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় মন-প্রাণ কেড়ে নেওয়ার আজ প্রথম দিন।

শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ও নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যি সত্যি সে ঋতুর রাজা। লাল আর হলুদের বাসন্তী রঙের প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে আজ বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে বাঙালি।

বসন্ত শুধু অশোক-পলাশ-শিমুলেই উচ্ছ্বাসের রঙ ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তের পুষ্পিত স্মৃতির ওপরও রঙ ছড়ায়। ১৯৫২ সালের আট ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।

মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য ও বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে।

বসন্তের কিছু বর্ণিল আয়োজন : জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্তের নাচ, গান ও কবিতার পাশাপাশি প্রতিবাদী নাচ, গান ও আবৃত্তিরও আয়োজন করেছে। আজ সকালে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শিল্পী আকরাম হোসেনের এস্রাজের সুর মূর্ছনা দিয়ে শুরু হবে বসন্ত আবাহনের দিন জুড়ে অনুষ্ঠানের প্রথমভাগের কর্মসূচি। এরপর থাকবে বসন্ত শোভাযাত্রা, আবির ও ফুলের প্রীতিবন্ধনীর পাশাপাশি থাকবে নাচ ও গানের আয়োজন। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একযোগে এ অনুষ্ঠান চলবে চারুকলা অনুষদের বকুলতলা, পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক, লক্ষীবাজার ও ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোড সংলগ্ন রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত মঞ্চে।

আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : চন্ডিদাসের অনাদিকালের সেই সুর-‘দুহঁ করে দুহঁ কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/ আধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/ সখী কেমনে বাঁধিব হিয়া’ এ আবেদনও বাজবে আজ কারও কারও হৃদয়ে।

কারণ আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে। এ দিনেই প্রেমদেব কিউপিড প্রেমশর বাগিয়ে হৃদয় কন্দরে ঘুরে বেড়াবেন। সে অনুরাগেই প্রেমপাগল প্রেমিক-প্রেমিকারা পরাণ তাড়িত হয়ে বিদ্ধ হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়। তাদের মনে লাগবে দোলা, ভালোবাসার রঙের রাঙাবে হৃদয়। ভালোবাসা উৎসবে মুখর হবে জনপদ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে দিবসটি। প্রযুক্তির কল্যাণে হাইটেক ডিজিটালের যুগে মোবাইল ফোনের ক্ষুদ্র বার্তা, ই-মেইল অথবা ফেসবুকে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় পল্লবিত হবে আজ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top