আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিলেন ধোনি
প্রকাশিত:
১৬ আগস্ট ২০২০ ২২:৪১
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০৪:২৯

প্রভাত ফেরী: দীর্ঘ জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন ভারতের দুই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেই আজ এ ঘোষণা দেন সর্বশেষ গত বিশ্বকাপে জাতীয় দলের হয়ে খেলা 'ক্যাপ্টেন কুল'। অনেকেই বলছিলেন, এবারের আইপিএলে ভালো করে তিনি আবারও জাতীয় দলে ফিরবেন। কিন্তু সব কিছু এককথায় শেষ করে দিলেন ধোনি।
এক বছর ধরে অবসর নিয়ে কোনো কথা না বললেও ৩৯ বছর বয়সী ভারতীয় উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান আজ সন্ধ্যায় ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, 'ক্যারিয়ারজুড়ে আমাকে ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ । ৭টা ২৯ মিনিট (আজ) থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটার হিসেবে গ্রহণ করুন।'
অবসর ঘোষণার বার্তায় একটি ভিডিও জুড়ে দিয়েছেন ধোনি। যাতে ফুটে উঠেছে তাঁর ১৫ বছরের ক্যারিয়ার। একটি করে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়, একটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে ধোনিই ভারতের সফলতম অধিনায়ক। টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছিলেন আকস্মিকভাবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও ছাড়লেন আচমকা এবং খুব অসময়ে। তবে ইতিমধ্যেই তিনি আইপিএল দল চেন্নাইয়ের অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন।
দেখা যাবে না বিদ্যুৎগতির স্টাম্পিং: স্টাম্পের পেছনে ধোনির হাতে বল গেছে আর দাগের বাইরে থাকা ব্যাটসম্যান আউট হননি, এমন ঘটনা বিরল। এমন দ্রুতগতির স্টাম্পিং ক্রিকেটবিশ্বে আর কেউ করতে পারতেন না। ভারতীয় ক্রিকেটের মুখচ্ছবিটাই বদলে দিয়েছেন তিনি। বদলে দিয়েছেন ক্রিকেটের সংজ্ঞা। গতকাল সেই ধোনি অবসর ঘোষণা করেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না ধোনির সেই বিদ্যুৎগতির স্টাম্পিং।
ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী তার সদ্য সাবেক হওয়া শিষ্যকে নিয়ে বলেছেন, 'সহজাত উইকেট কিপার বলতে যা বোঝায়, ধোনি তেমনটা ছিল না। কিন্তু তার কার্যকারিতা ছিল মারাত্মক। একবার ম্যাচের ক্ষেত্রে ধোনির প্রভাবটা খেয়াল করে দেখুন। আমার মতে ওর স্টাম্পিং ও রান আউট করার ক্ষমতা ছিল দেখার মতো। ব্যাটসম্যান বুঝেই উঠতে পারত না ধোনি কখন বেল উড়িয়ে দিয়েছে। জীবন যখন যেভাবে ধরা দিয়েছে ধোনির সামনে, ঠিক সে ভাবেই ও নিজেকে বদলে ফেলেছে।'
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলতেন, উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ধোনি পুরো দল পরিচালনা করতেন। শাস্ত্রী আরও বলেন, 'এই মানুষট দ্বিতীয় হতে ক্রিকেটে আসেনি। সে এসে ক্রিকেটটাই বদলে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, তিন ফরম্যাটেই ধোনি সেরা হয়েছে। টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশ্বকাপ জিতেছে। একাধিকবার আইপিএল জিতেছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতকে এক নম্বর জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। আমি নিশ্চিত, অবসরের পরেও ধোনির জীবন আগের মতোই এগিয়ে চলবে। কারণ সে দ্বিতীয় হতে আসেনি।'
রান-আউটেই শুরু, রান-আউটেই শেষ: কি অদ্ভুত মিল! রঙ্গীন পোশাকে ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে রান-আউট দিয়ে। এরপর গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রান-আউট হয়ে যান। গতকাল শনিবার হুট করে অবসর ঘোষণা করা ধোনির জন্য সেটাই হয়ে গেল ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। বিশ্বকাপের সেই রান আউট ধোনির মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল। সেই ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়েছিল ভারত।
২০০৪ সালে ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল ধোনির। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে ধোনি ব্যাটিংয়ে নামেন ৭ নম্বরে। ৪২তম ওভারে পঞ্চম উইকেটের পতনের পর তিনি উইকেটে এসেছিলেন। কিন্তু খেলতে পেরেছিলেন মাত্র ১টি বল। তাপস বৈশ্য এবং খালেদ মাসুদ পাইলটের যৌথ প্রচেষ্টায় সেই বলেই রান-আউট হয়ে যান ০ রানে। তার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ধোনি নিজেকে প্রমাণ করেন।
তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ ২০১৯ সালের ৯ জুলাই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ। গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ হওয়া নিউজিল্যান্ডের ২৩৯ রানের জবাবে ভারত যখন ধুঁকছিল, তখন আশার আলো দেখিয়ে লড়ছিলেন ধোনি। একপ্রান্ত আগলে রেখে ৭২ বলে পূরণ করেন ফিফটি। কিন্তু যে বলে ৫০ পূরণ করেন ধোনি, সে বলেই রান-আউট হয়ে যান। দুই রান নিতে গিয়ে মার্টিন গাপটিলের সরাসরি থ্রো তার স্টাম্প ভেঙে দেয়। এরপর স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান ধোনি। গত এক বছর জাতীয় দলের হয়ে কোনো ম্যাচ খেলেননি।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: