সিডনী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


বর্ণাঢ্য আয়োজনে ক্যাম্বেলটাউনে মাল্টি কালচারাল বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত


প্রকাশিত:
১৮ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৪১

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০১:৫১

বর্ণাঢ্য আয়োজনে ক্যাম্বেলটাউনে মাল্টি কালচারাল বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত

 বাঙালি তার নিজস্ব জাতিসত্তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যতগুলো উৎসব পালন করে তার মধ্যে বৈশাখবরণ অন্যতম। বৈশাখ বরণের সঙ্গে যে অনুষ্ঠানটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তা হলো আমাদের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। শুধু বাংলাদেশ আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নয়; এই মধ্য এপ্রিলে পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে চলে এ উৎসব তা আমাদের অনেকের কাছেই হয়তো অজানা ।  ভৌগোলিক অবস্থান, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, যোগাযোগ, চেতনাগত মিল, সংস্কৃতির আদান-প্রদান এবং  নববর্ষ পালনের এই অভিন্ন ধারাকে অস্ট্রেলিয়া মুলধারায় ছড়িয়ে দিতে ‘বহুজাতিক বৈশাখী মেলা’ আয়োজন করে বৈশাখী উদযাপনের ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল "মাল্টিকালচারাল সোসাইটি ক্যাম্বেলটাউন"।   গত  ১৩ এপ্রিল শনিবার সিডনির ক্যাম্বেলটাউন অ্যাথলেটিকস্ স্টেডিয়ামে এই ‘বহুজাতিক বৈশাখী মেলা’ আয়োজন করা হয় । দুপুর ২ সময় ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র জর্জ ব্রিটসিভিক অস্ট্রেলিয়ান  জাতীয় সঙ্গীতের তালে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে  মেলার কার্যক্রম শুরু করেন। এই সময় বাংলাদেশী, নেপালি, ভারতীয়, পাকিস্তানী  ও  শ্রীলংকান কমিউনিটির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ একযোগে নিজ নিজ দেশের পতাকা উত্তোলন করেন।  এরপর শুরু হয়  মুল   মঞ্চের কার্যক্রম। প্রথম পরিবেশনা ছিল শ্রীলংকান ল্যাংগুয়েজ স্কুলের।



দুপুর থেকেই নববর্ষকে নবরূপে বরণ করার জন্য সিডনির বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী ভীড় করে অ্যাথলেটিকস্ স্টেডিয়ামে। সকল বিভেদ ভুলে, ধর্ম-বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে, সব ধর্মাবলম্বীর মানুষেরা মিলিত হন এক আকাশের ছায়াতলে। চারিদিকে বেজে ওঠে বৈশাখের জয়গান।





 বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যখন নতুন বছরকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চলে নানা আয়োজন, তখন প্রবাসে বসে  প্রবাসীরা প্রিয় স্বদেশে ফেলে আসা নববর্ষের উৎসবের স্মৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। শিকড় ছেড়ে আসা মানুষগুলোকে বৈশাখ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।



 প্রিয় নববর্ষকে আপন রঙে রাঙাতে অভিবাসীরা তাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নিজেদের সাজিয়ে তোলেন। বিশেষ করে নারীরা তাদের সাজসজ্জায়  ছিলেন অনন্যা।



মেলায় বাঙালী নারীরা  ঐতিহ্যবাহী শাড়ি অঙ্গে জড়িয়ে,খোঁপায় ফুল, দু’হাত ভরা রিনিঝিনি চুড়িতে মেলা প্রাঙ্গণকে  যেন বাংলাদেশে পরিণত করে তোলেন। । পাশাপাশি পুরুষেরাও দেশিয় ঐতিহ্যকে বিদেশের মাটিতে উপস্থাপন করেন পাঞ্জাবী পরিধান করে। শিশুরাও বাদ পড়েনি স্বদেশী ঐতিহ্যের ছোঁয়া থেকে।





শনিবার অস্ট্রেলিয়াতে সরকারি ছুটি থাকায়  সকাল থেকেই দলে দলে প্রবাসী বাঙালিরা বর্ণিল সাজে মেলায় আসতে শুরু করেন।



 সবার হাসি-আনন্দে একাকার হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। বাংলাদেশী, ভারতীয়, নেপালী, ফিলিপিনো, শ্রীংলঙ্কান, ফিজিয়ান ও পাকস্তানী পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুরোটা দিন সকল দর্শনাথীদের বেঁধে রাখে মেলা প্রাঙ্গনে। ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের চমকপ্রদ নাচ,গান, আবৃত্তি ,চিত্রাঙ্কন, অভিনয় এটাই প্রমাণ করে যে  যেখানেই যাক না কেন, অভিবাসীরা প্রিয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য কোনকিছুই ভুলে যায় না। বরং সন্তানদের শৈশব থেকেই দেশপ্রেমের শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন।



ভিনদেশের মাটিতে  এই প্রাণের মেলায় যে শুধু প্রবাসী বাঙালি, নেপালী, ভারতীয় বা পাকিস্তানী বা  দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন, তা নয়। অস্ট্রেলিয়ানরাও স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ নেন। মেলার অন্যতম আকর্ষণ- বাহারি পদের  বহুজাতিক খাবার, যা বিভিন্ন স্টলে থরে থরে সাজানো থাকে। লোভনীয় এবং আকর্ষণীয় এসব খাদ্যদ্রব্য একদিকে যেমন ভোজনরসিকদের আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে রাখে, অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ানসহ অন্যান্য দেশের মানুষদেরও নজর কাড়ে। আর সে কারণেই মেলা প্রাঙ্গনে খাবারের স্টলগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভীড়।



সন্ধ্যার কিছু পরে মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন  মন্ত্রী ডেভিড কোলম্যান, ম্যাকারথারের ফেডালের এমপি ডঃ মাইকেল ফ্রিল্যান্ডার, নিউ সাউথ ওয়েলস সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা পেনি শার্প এমপি, ক্যাম্বেলটাউনের স্টেট এমপি গ্রেগ ওয়ারেন এমপি। "মাল্টিকালচারাল সোসাইটি ক্যাম্বেলটাউন সভাপতি  এনাম হক  এবং কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক জাহাংগীর আলম  তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে মুল মঞ্চে নিয়ে আসেন।





স্বাগত বক্তব্যে মাল্টিকালচারাল সোসাইটি ক্যাম্বেলটাউনের সভাপতি এনাম হক মাল্টি কালচারাল বৈশাখী মেলা সফল করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।



অভিবাসন  মন্ত্রী ডেভিড কোলম্যান বহুজাতিক এই বৈশাখী মেলা আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের বিশেষ করে বিভিন্ন কমিউনিটি নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, নিঃ সন্দেহ এই ধরনের অনুষ্ঠান মাল্টি কালচারাল অস্ট্রেলিয়ার পরিচয় বহন করে।





সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা পেনি শার্প এমপি, ক্যাম্বেলটাউনের স্টেট এমপি গ্রেগ ওয়ারেন এমপি সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান।



 কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী তার বক্তব্যে আগামীতে এই মেলা আয়োজনে ফেড়ারেল, রাজ্য ও স্থানীয়   সরকারের সহযোগিতা কামনা  করেন।



মেলায় মঞ্চে ছিল  পাকিস্তানী, নেপালী ল্যাংগুয়েজ স্কুলের পরিবেশনা ।  ছিলো ফিলিপিনো এবং নেপালী নাচ। পাঞ্জাবী কমিউনিটির মেলা প্রাঙ্গনের  কাবাডি খেলার বিশেষ আয়োজন এবং তাদের ভাংরা নৃত্য সকলের নজর কাড়ে। বাংলাদেশী শিশুদের সংগঠন কিশালয় কচি-কাঁচার ক্ষুদে শিল্পীদের   পরিবেশন করে নৃত্য ও গান। এছাড়া বাংলাদেশী অপ্সরার একক  নৃত্য ও   জুই রোজারীও পরিবেশনায় ইচ্ছে ঘুড়ির দলীয়   নৃত্য সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে । বাংলাদেশী প্রবাসী শিল্পীদের মধ্যে সংঙ্গীত পরিবেশন করে  দর্শক মাতান শাহনাজ পারভিন, রুহুল আমিন, রুমানা ফেরদৌস, সাঈদ আশিক সুজন। মেলায় ছিলো এ্যানি সাবরিনের পরিচালনায় ফ্যাশন শো। ছিল সায়েম ও আকিবের ডিজে পরিবেশনা।



নেপালী ব্যান্ড হাইপার,   বাংলাদেশী  ব্যান্ড এইট নোটস্, কৃস্টি এবং ধূমকেতুর ব্যান্ড সংগীতের মূর্ছনায় দর্শকরা চেয়ার ছেড়ে চলে আসেন মঞ্চের সামনে। ব্যান্ডের তালে তালে তার সুর মেলান । । সর্বশেষ ছিলো  চোখ ধাঁধানো ফায়ার ওয়ার্কস্।



 





ঘড়ি কাঁটায় তখন রাত ৯.৪৫, তখনো মেলা প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার দর্শক, শুনতে চান আরো কিছু গান কিন্তু কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী জানালেন স্থানীয় প্রশানের দেওয়া সময় শেষ তাই  অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে।  মাল্টিকালচারাল সোসাইটি ক্যাম্বেলটাউনের পক্ষে এনাম হক ও  কাউন্সিলর মাসুদ চৌধুরী  আগামী বছরের ৪ এপিল  একই স্থানে আবারো  আরো বড় পরিসরে , বর্ণাঢ্য আয়োজনে  বহুজাতিক বৈশাখী মেলার ঘোষনা দিয়ে ব্যাতিক্রমধর্মী এই  আয়োজনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি  ঘোষনা করেন।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top