সিডনী বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১

জলছবি : তন্ময় চট্টোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
৬ জুলাই ২০২০ ২২:১৮

আপডেট:
৬ জুলাই ২০২০ ২২:৪১

  

- হ্যাঁরে মদন, তোর মাথাটা যে বিগড়েছে, সে খবর তুই রাখিস?  বেশ রেগেমেগেই বলল বাসু চক্রবর্তী।

গাঁয়ের প্রাইমারী ইস্কুলের মাস্টার বাসু। ঢের জমি জায়গার মালিক। গাঁয়ের সকলেই ভয়ভক্তি করে তাকে। তার রাগী রাগী চোখের দিকে তাকিয়ে একটু ভয় পেল মদন পাল। তারপরে মুচকি হেসে বলল - ধুস কি যে বলিস মাস্টার, মাথার আবার কিসের দোষ?

- দোষ নয়? দিনরাত যে আবোল তাবোল বকছিস, সে খেয়াল তোর আছে? আর দেরী নয়, আজই চল সদা ডাক্তারের কাছে।

এবার সত্যি সত্যি ভয় পেল মদন। বয়েস ষাটের ঘরে হলে কি হবে, এখনও ইঞ্জেকশানে তার বড্ড ভয়। বাসু মাস্টারের গোঁ কেমন জিনিস সে জানে। তার কথা নড়চড় হবার নয়। তাই সে বাসুর গা ঘেঁসে এসে বসল। গায়ে হাত রেখে, বেশ মোলায়েম সুরে বলল "খামোকা মাস্টার, আবার ডাক্তার বদ্যি কেন? বলছি তো কোনও ব্যামো নয়।"

  - গাঁয়ের ছেলে বুড়োরা কি তবে বানিয়ে বলছে? তুই সারাদিন কি সব ভুলভাল বলছিস, দোকান থেকে রাতভিতে লজেন্স কিনছিস, বাঁশি কিনছিস, এই বয়সে এসব পাগলামি ছাড়া আর কি, অ্যাঁ?

বাসু মাস্টারের কথায় এবার হো হো করে হেসে ওঠে মদন, বলে বুঝিছি, এসব ওই নন্দ দোকানীর কাজ।

মদনের অনুমান মিথ্যে নয়। তার ব্যামোর গল্পটা ছড়িয়েছে নন্দ মানে নন্দদুলাল হাইতের মুখ থেকে। গাঁয়ের একমাত্র মুদিখানা দোকানের মালিক নন্দ। সেই নন্দর মুখে খবর, মদন নাকি বিড়ির পয়সা বাঁচিয়ে এখন লজেন্স কেনে, বাঁশি কেনে।

সকলের হাড়ির খবর রাখা নন্দর এক অভ্যেস। কেউ পেঁয়াজ আদা রসুন একসাথে কিনলে নন্দ প্রশ্ন ছাড়ে, "কি ব্যাপার গো কত্তা, আজ চিকেন, না মাছের কালিয়া।" কেউ ডালডা কিনলে তার প্রশ্ন "কিগো কাকীমা, লুচি না পরোঠা?" 

ঠিক তেমনি সুরেই নন্দ প্রশ্ন ছুড়েছিল মদনকে, " বিড়ি ছেড়ে লজেন্স ধরছ না কি গো খুড়ো?" মদন তখন হেসে বলছিল, " নিজের জন্যি না রে, কচিটার জন্যি কিনি!"

 

মদনের বাড়ীতে কচিকাঁচাটা আবার কে? একা মানুষ মদন। বিয়ে থা করেনি। চাষের কাজকম্ম আর শিবঠাকুর - এই দুই নিয়েই সে থাকে। প্রথম দিনেই একটা খটকা  লেগেছিল নন্দর। তবে খদ্দেরের ভিড় সামলাতে গিয়ে সেদিন আর কথা বাড়ায়নি সে। তারপর সেদিন রাতের বেলা, দোকান যখন বন্ধ হবার মুখে তখন মদন এল বাশির খোঁজ করতে। চমকে উঠে নন্দ বলেছিল, ও খুড়ো, রাতের বেলা বাঁশি কেন গো?  কে বাজাবে বাঁশি? উত্তরে মদন বলেছিল, " আর বলিস কেন, সকাল থেকে সে কাছে ঘ্যাঁসে না, দেখি এখন এই বাঁশি দিয়ে যদি তার মান ভাঙ্গাতে পারি"

মদনের কথায় নন্দ যেন আকাশ থেকে পড়ে। "বাঁশি দিয়ে মান ভাঙাবে? বল কি গো খুড়ো? কার মান ভাঙাবে?"

মদন হেসে বলে, " সে একজন আছে...।।"

গাঁয়ের শেষ প্রান্তে ধূ ধূ মাঠের ধারে বাস মদনের। চারপাশে কারোর ঘর পর্যন্ত নেই, তার বাড়ীতে আবার কচিকাঁচা কে? নিশ্চয়ই কিছু একটা গোলমাল আছে। খবর বের করতে লোক লাগায় নন্দ। জানতে পারে, মদন নাকি বাড়ীতে নিজে নিজেই দিনরাত বকবক করে! হো হো হাসে নিজের মনে, গল্প বলে, বাঁশি বাজায় আরও কত কি না করে! খবর শুনে নন্দর ফুর্তি যেন আর ধরে না। এত বড় একটা আবিষ্কার! শোনা কথার সাথে নিজের অভিজ্ঞতা মিশিয়ে মদনের ব্যামোর একটা জব্বর গল্প ফাঁদে নন্দ।   

বাসু মাস্টারের কানে কথাটা উঠেছে আজ সকালে। গরমের ছুটিতে ক'টা দিনের জন্য গিন্নীকে নিয়ে তীর্থে গিয়েছিল বাসু মাস্টার। গতকাল ফিরেছে। খেত খামারের কাজে মদন তার সারা বছরের ঠিকে লোক। ইস্কুল যাবার পথে নন্দর দোকানে সাইকেল থামিয়েছিল বাসু। নন্দকে বলেছিল, "মদন এলে বলিস, আমি ফিরেছি, আজ রাতে আমার ঘরে যেন একবার আসে।"  ব্যস, এরপর আর কিছু বলতে হয়নি বাসুকে। নন্দই যা বলার বলেছিল।

নন্দর কথায় চোখে ঘুঘুতারা দেখে বাসু মাস্টার। চোখ কপালে তুলে সে বলে "বলিস কীরে! মদনের মাথায় ব্যামো?"

বাসুর চিন্তার কারন আছে বৈকি! সামনে এগিয়ে আসছে বড় চাষের দিন। আর সে কাজে মদন একাই একশো। বীজ বোনা, ধান রোয়া - সব দায় তার হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকে বাসু। আর সেই মদনের  কিনা মাথার ব্যামো! মুষড়ে পড়ে বাসু। ইস্কুলের প্রথম দিন কাজে মন বসেনা তার। ছুটি হতে না হতেই সে সাততাড়াতাড়ি চলে আসে মদনের বাড়ীতে।

মদন নন্দর কথা পাড়তে বাসু বলল, " হ্যাঁ নন্দর মুখেই শুনেছি, মাঝরাতে বাঁশি বাজিয়ে কার নাকি মান ভাঙাচ্ছিস তুই?

- কচি ছেলের মান ভাঙাতি, বাঁশি ছাড়া আর কি বাজাব বল দেখি মাস্টার?

- মানে? ধাক্কা খায় বাসু মাস্টার।  কচি ছেলে আবার এল কোত্থেকে? 

- সে অনেক কথা। ওসব এখন থাক, মাস্টার।

- থাকবে কেন? বল না।

কিছুক্ষণ থেমে যায় মদন। তারপর বলে, শুনবি যখন তাহলে বলি। তুই তো গেলি তীর্থ ঘুরতে। আমার হাত ফাঁকা, কাজকম্ম নেই। আলসে হয়ে থেকে থেকে শরীরটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। শরীরে যেন জুত নেই। একদিন অবেলায় চান খাওয়া করে উঠে দেখি সারা শরীরে বেদনা।  সন্ধেবেলায় গা বেশ গরম। তুই তো জানিস মাস্টার, শরীরে ব্যামো হলে আমি তোর থেকে ওষুধ নিই। তুই তো নেই। তাই ভাবলুম, যাই, শিবের থানে গিয়ে হত্যে দিই। উঠোনের শিব মন্দিরে গিয়ে শুয়ে পড়লুম। রাতে সে কি কষ্ট। গা-হাত কামড়াচ্ছে। কষ্টে এপাশ ওপাশ করছি, আর ডাকছি ঠাকুরকে। জ্বরের ঘোরে চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল মাস্টার। হঠাৎ দেখলুম শিবঠাকুর। আমার মাথাটা কোলে নিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

- স্বপ্ন দেখলি নাকি?

- স্বপ্ন নয় রে মাস্টার, সত্যি। শিব ঠাকুরকে দেখলুম। ঠিক তোকে যেমন দেখছি, তেমনি। ঠাকুর বললে, "তুই আমায় এত ভালবাসিস কেন বলত মদন?" ঠাকুর কথা বলছে শুনে, আমি তো অবাক।

থতমত খেয়ে বললুম, "তা তো জানিনে ঠাকুর, এমনিই ভালবাসি"

ঠাকুর বললে, "কোনও দিন কিছু তো চাইলিও না মুখ ফুটে?"

আমি বললুম, কি আর চাইব বলেন  দেখি? অভাব কি আর কিছু রেখেছেন আমার? এমন ভালো মনিব দেছেন, তার জমিতে খেতি করি, খাওয়া দাওয়া পাই, রোজ পাই, আর কিই বা চাই?"

ঠাকুর তখন বললে, কিছু একটা চেয়ে নে বাবা। তোকে বড্ড ভালবাসি কিনা, তোকে কিছু একটা দিলে মনে বড় শান্তি পাই।

তখন আমি ভাবতে লাগলুম, কিন্তু কি যে চাই তা আর মাথায় আসে না। ভাবছি, কি চাই, কি চাই। তারপর একটা জিনিস চাইলুম।

বাসু মাস্টার বলল, 'কি চাইলি, বল না?'

- বললুম, ঠাকুর একটা কচিকাঁচা কাউকে দাও, কোলে পিঠে মানুষ করব তাকে।

- কচিকাঁচা চাইলি! মানুষ করবি বলে!

- হ্যাঁরে মাস্টার, ভাবলুম কেউ কাছে থাকলি বেশ হয়, একা একা যেন আর ভাল্লাগে না।

- তা ঠাকুর কি বললে?

- কি আর বলবে? ঠাকুর বললে, মদন, তুই যা চাস তাই হবে।

- তারপর?

- তারপর তো ঘুমিয়ে পড়লুম। ভোরবেলা ঘুম ভেঙে দেখলুম ব্যাথা বেদনা কিচ্ছুটি নেই। ব্যামো সেরে গেছে। তারপর দুপুরে খেয়ে দেয়ে সরাইপুরের হাটে গেলুম। মনটা বেশ খুশি খুশি। হাট থেকে ফিরছি, সন্ধ্যে নেমেছে তখন। হঠাৎ  কে যেন  এসে ডান হাতটা ধরল। ছোট ছোট আঙুল। অন্ধকারে প্রথমটায় হকচকিয়ে হাতে ঝোনা দিলুম। হাত ছেড়ে দিল সে, আবার দু পা যেতে না যেতেই সে চেপে ধরল হাতটাকে।

আমি বললুম, তুই কে?

নাম বলে না, শুধু হালকা গলায় বলল "দাদা।"

"দাদা" ডাক শুনে মনটা কেমন যেন হয়ে গেল মাস্টার। অনেক পুরনো কথা মনে পড়ল।

- কি আবার মনে পড়ল?

- সে তুই আর কি করে জানবি মাস্টার? অনেক পুরনো কথা। আমার কোলের একটা ভাই ছিল । নাম ছিল বুদো। খুব ভালবাসত আমায়। খুব ছোট সে তখন, একদিন পায়ে পায়ে নেমেছিল আমাদের এই খিড়কি পুকুরে। কচি তো, সাঁতরাতে তো আর শেখেনি। তাই আর উঠতে পারেনি জল থেকে। সেই ভাই চলে যেতে কি কান্না কেঁদেছিলুম, কি বলব তোকে! নদীর ওপারের চরে সকলে মিলে রেখে এলো ভাইটাকে! তারপর কতদিন ভেবেছি সেই ভাইয়ের কথা। শিবঠাকুর ছাড়া মনের সেসব কথা কে আর বুঝবে বল? নয়ত "দাদা" বলে সে ডাকবেই বা কেন?  ছোট ছোট আঙ্গুলে সে যখন আমার হাতটা ধরল খুব মায়া পড়ে গেল মাস্টার। তাকে বাড়ীতে নিয়ে এলুম।

- সে কি রে? কার ছেলে, কোথায় বাড়ী, কি ভাবে হারালো - কিচ্ছু জানতে চাইলি না? পুলিশে খবর দিতে তো পারতিস?

- দেখতে কি পেলাম নাকি? দেখাই তো দেয় না।

- দেখা পাস নি?

- না, তবে সেই থেকে সাথে আছে। সকালে যখন রান্না করি, সে আমার পাশে এসে বসে। দুপুরে যখন শুই, পিঠে উঠে বসে। মাথার চুলে বিলি কাটে, কাতুকুতু দেয়। রাতে গল্প শোনে।

- এখন সে কোথায়?

- সারা দুপুর দস্যিপনা করে এই ঘুমোতে গেল ওঘরে।

হঠাৎ করে যেন কোনও কথা খুঁজে পায় না বাসু মাস্টার। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে বলে ওঠে, "সারাদিন তার সাথেই গল্প করিস, না কি?"

- আর কি করব বল মাস্টার, কাজকম্ম তো এখন নেই, ভাইটার সাথে গপ্পো করি! কতকাল পরে ফিরে এল বল! বাপ নেই, মা নেই, আমি ছাড়া তার আর কে আছে মাস্টার?"

বাসু মাস্টার মন্ত্রমুগ্ধের মত ঘাড় নেড়ে সায় দেয় সে কথায়। বলে ওঠে, "সে তো ঠিক কথা, তুই ছাড়া আর কেউই তো নেই!"

কোন এক জাদুতে যেন বাসুর বাকশক্তি বন্ধ হয়ে যায়। সে ফ্যালফেলিয়ে দেখতে থাকে মদনকে।

 

মদন বলে ওঠে, "তোকে কিন্তু একটা কাজ করতে হবে মাস্টার। ভাইটাকে পড়াশোনা করিয়ে ভালো করে মানুষ করে দিতে হবে।"

বাসু মাস্টার ঘাড় নেড়ে বলে, পড়াব বৈকি, নিশ্চয়ই পড়াব।

কথা বলতে বলতে কোনো এক আবেগে গলা বুজে আসে বাসুর। কোনও কথা খুঁজে পায়না সে।  কোনরকমে সে বলে, কাল তাহলে সময় করে বাড়ীতে একবার আয়। আজ আমি উঠি ।

(২)

বাড়ীতে এসে সারা সন্ধ্যেটা গুম হয়ে কেটে যায় বাসু মাস্টারের । ঘুরে ফিরে মনটা যেন মদনের চিন্তায় বুঁদ হয়ে যায়। বাসুর মনে পড়ে অনেক পুরনো কথা। মনে পড়ে সদ্য বাপ হারানো, ন্যাড়া -মাথা মদনের মুখটা। কাজের জন্য সে সেদিন প্রথম এসেছিল তার বাবার কাছে। আলাভোলা, বোকাসোকা মদন। বয়সে তার চেয়ে বেশ ক'বছরের বড়। তবু বাসু মজা করত মদনকে নিয়ে। চার আনা আর দশ পয়সার তফাত বুঝত না মদন। দু হাতে সেই দুই পয়সা নিয়ে বাসু তাকে বলত, "দেখ তো মদন, কোনটা নিবি? ছোটটা না বড়টা?"  মদন চাইত বড়ো পয়সাটা। বাসুর বাবা বলত, " আহা! চাইছে যখন বড়টাই ওকে দে!" বাসুর মজা লাগত। বড় হয়েও টাকা বুঝতে শেখেনি মদন। বাসুর জমি-বাগান দেখার কাজে সে আজ তার সবচেয়ে বড় ভরসা। অথচ বাসু তাকে বেশ একটু কমই দেয়। সেই মদনকে আজ যেন অনেক ধনী মনে হচ্ছে বাসুর।

জমি জায়গা ঢের আছে বাসুর। সঙ্গে চাকরি। দু জনের সংসার। অভাব কিছুই নেই। শুধু ফাঁকা লাগে, বেশ ফাঁকা লাগে মাঝে মাঝে। মনে হয়, সে থাকলে বেশ হতো। সেই "নেই নেই" কষ্টটা আজ আবার টের পেল বাসু। 

রাতে ঘুমের ওষুধ নিল বাসু। তবু ঘুম এলনা চোখে। পাশে ঘুমিয়ে তার বৌ। মাঝরাতে উসখুস করে উঠে পড়ে বাসু।

সিঁড়ি ভেঙে ধীর পায়ে ছাদে আসে বাসু। অনেক দিন পরে আজ সে ছাদে। আকাশে চোখ রাখে বাসু। চোখ মেলে দেখে তারাদের সাজানো সংসার।  এলোমেলো বাতাস কোথা থেকে আসে। চোখে লাগে, মুখে লাগে। ঝাপসা হয়ে আসে বাসুর দুচোখ। জল ভরা চোখে ভেসে ওঠে কত জলছবি। ভেসে ওঠে পোয়াতি বৌএর মুখ, ঝকঝকে ডাক্তার - আরও কত জন। কত আশা ছিল বাসুর মনে - তাদের প্রথম সন্তান আসবে সংসারে। তারপর সেই খারাপ খবর! নার্সিং হোমে জল চিক চিক করছিল নার্সের চোখে। বৌ এর জলভরা চোখে চোখ রেখে ডুগরে কেঁদে ফেলেছিল বাসু। তারপর কত দিন পার হল। কত ডাক্তার বদ্যি! কেউ আর এল কই দুজনের সংসারে! হু হু করে জল আসে বাসুর চোখে।

ভেসে আসে আরও জলছবি। জলছবিতে মদনের ছেলেখেলা দেখতে পায় বাসু। দেখে হারানো ভাইকে নিয়ে তার আহ্লাদ, আব্দার।  দেখে তারও সাধ হয়। সাধ হয় ফিরে পেতে আত্মজকে। দেখা নয় নাই দিল, বাসু শুধু পাশে চায় তাকে।

পাগল হতে ইচ্ছে করছে বাসুর। মদনের মত পাগল। দুচোখ ভেসে যাচ্ছে জলের বন্যায়। জলছবিতে নিজেকে দেখতে পায় বাসু। দেখে নিজের অদৃশ্য সন্তানকে সে স্বরবর্ণ শেখাচ্ছে জোরে জোরে, শেখাচ্ছে ব্যাঞ্জন বর্ণ। নিজের মনে "অ", "আ" লিখছে শ্লেটের ওপর। মজা দেখতে গাঁ শুদ্ধু লোক জুটেছে তার বাড়ীর সামনে। দাঁত বের করে হাসছে কেউ কেউ। কেউ বলছে "পেগলেছে রে, পেগলেছে বাসু মাস্টার, দ্যাখ নিজের মনে অ আ পড়ছে, লিখছে"। নন্দ দোকানি হাসছে। হাসছে বাসুও। কাউকে পাত্তা না দিয়ে প্রাণ খুলে হাসছে সে, লম্বা ফুউউউউউউউউউ মারছে বাঁশিতে নিজের ছেলের আব্দারে।

ছাদের বাতাস যেন হঠাৎ তার ঢেউ হারিয়েছে। নক্ষত্রেরা থামিয়েছে তাদের কম্পন। সবাই যেন চাইছে, একমনে, আরও কিছুক্ষণ জলছবি দেখে যাক গাঁয়ের একগুঁয়ে বাসু মাস্টার।                

   

তন্ময় চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা 

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top