সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

গিলগামেসের কথা : তন্ময় চট্টোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৪৫

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ১৭:৪৩

ছবিঃ এপিক অফ গিলগামেস

 

অদৃষ্টের কি পরিহাস! পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাকাব্য প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে পড়ে রইল ধ্বংস স্তুপের তলায়। একালের মানুষের নজরে যখন এল, তখন পার হয়ে গেছে মহাকাব্যের যুগ।

না, এ গল্প আমাদের চেনা কোনো সংস্কৃত বা গ্রীক মহাকাব্যের গল্প নয়। এ মহাকাব্যের নাম "এপিক অফ গিলগামেস"। মৃৎ-চাকতিতে কিউনিফর্ম লিপিতে আক্কাদীয় ভাষায় লেখা গিলগামেসের এই মহাকাব্য উদ্ধার হল ১৮৪৯ সালে। উদ্ধার হল খ্রীঃ পূঃ ৭ম শতাব্দীর আসিরীয় সম্রাট আসুরবানিপালের নিনেভের রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ থেকে। শিল্প-সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন এই সম্রাট আসুরবানিপাল। মৃৎ-চাকতি গুলিকে বেশ যত্ন করেই রেখেছিলেন তার গ্রন্থাগারে। কিন্তু মিডিয়া ও কালডিয়ার যৌথ আক্রমণে পতন হল আসিরীয় সাম্রাজ্যের। তারপর দীর্ঘ আড়াই হাজার বছরের বিস্মৃতির অন্ধকারে থেকে গেল মেসোপটেমিয়ার এই মহাকাব্য।

হ্যাঁ, গিলাগামেস মহাকাব্যের জন্মস্থান হল মেসোপটেমিয়া - টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিস এর মধ্যবর্তী ভূখণ্ডে। বর্তমানের ইরাক। অনেক সাম্রাজ্যের ওঠাপড়া দেখেছে প্রাচীন সভ্যতার এই আঁতুড়ঘরটি। পুরনো সেই দিনের কথা চারণদের গানে গানে ভেসে বেড়াত মেসোপটেমিয়ার আকাশে বাতাসে। "এপিক অফ গিলগামেশ" এর  origin বা উৎপত্তিতেও জড়িয়ে আছে সেই সব উপাদানের প্রভাব। গবেষনায় জানা গেছে, পাঁচটি পুরান কাব্য ও আরো কিছু উপাদান একত্রিত করে সর্ব প্রথম "এপিক অফ গিলগামেশ" লিখেছিলেন কোনো এক কবি। দুঃখের কথা, ইতিহাস মনে রাখেনি সেই কবির নাম। সুমেরীয়-আক্কাদ ভাষায় লেখা সেই মহাকাব্যের রচনাকাল আনুমানিক খ্রিষ্ট - পূর্ব ১৮০০। তারপর কেটে গেল আরও বেশ কিছু বছর। কাব্যটিকে সম্পূর্ণ পরিমার্জন করে তাকে নতুন রূপ দান করলেন  ব্যাবিলনের "সিন লিক উন্নিনি"(খ্রিঃ পূঃ ১২০০)। এই সংস্করণটিকে বলা হয় গিলগামেশ মহাকাব্যের প্রামান্য রূপ যা "He who saw the deep" নামে পরিচিত।

আসুরবানিপালের গ্রন্থাগার থেকে পাওয়া ১২ টি মৃৎ-চাকতি আসলে মূল গল্পের প্রতিলিপি মাত্র, যা সেকালের লিপিকরদের অনেক পরিশ্রমের ফসল। মৃৎ - চাকতিগুলি উদ্ধারের পর সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল সেকেলে লিপির পাঠোদ্ধার করা। জার্মান স্কলার George Smithকে ধন্যবাদ। কিউনিফর্ম ও হায়ারোগ্লিফিক্স বিশেষজ্ঞ এই মানুষটি দিনরাত এক করে লেগে রইলেন এর পাঠোদ্ধারের কাজে। সাফল্যও পেলেন। পরবর্তীকালে আবিষ্কৃত হল আরও কিছু চাকতি। শোনা যায়, মোট ৭৩ টি মৃৎ - চাকতিকে জোড়া লাগিয়ে গিলগামেশ কাব্যের বর্তমান রূপটি জন্ম নিয়েছে।

কে এই গিলগামেস? জানা যায়, তিনি ছিলেন দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার উরুক এর প্রথম রাজবংশের পঞ্চম রাজা। লগানবান্দা ও দেবী নিনসানের পুত্র।  খ্রিঃ পূঃ ২৭৫০ এর কাছাকাছি কোনো সময় গিলগামেস বসেছিলেন উরুক এর সিংহাসনে। তার চরিত্রের অতিমানবীয় বৈশিষ্ট গুলি শুধু যে আসাধারন ছিল তা নয় সেগুলি ছিল নায়কোচিত। তাই হয়ত সেইসব গুনপনার কথা বলে কবি সূচনা করেছেন এই মহাকাব্যের। স্বনামধন্য এই রাজা রূপবান, অসম সাহসী, বীর ও শক্তিমান। তবে তার দোষও কম ছিল  না। তার যৌবনের অসংযত আচরণ, ঔদ্ধত্য, খামখেয়ালীপনা আর নারীলোলুপতা বোধহয় একসময় তার গুনকেও ছাপিয়ে যেতে লাগল। আর তাই প্রজাদের চোখে সে হয়ে উঠল খলনায়ক। অত্যাচারিত উরুকবাসীরা অভিযোগ জানাল স্বয়ং দেবতার কাছে। দাবী একটাই - গিলগামেসের সীমাহীন ঔদ্ধত্য আর একাধিপত্যে ইতি টানতে হবে। এখান থেকেই মূল আখ্যানের সূচনা।

মূল আখ্যানের মত এর আবিষ্কার পরবর্তী গল্পও কম আকর্ষণীয় নয়। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বাইবেলকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব দেবার লক্ষ্য নিয়ে কিছু ইউরোপীয় দেশ ও সংস্থা মিলিতভাবে মেসোপটেমিয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানের অনুপ্রেরনা জুগিয়েছিল। অস্টিন হেনরি লেয়ার্ডের নেতৃত্বে অসুরবানিপালের নিনেভের গ্রন্থাগারের প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানটিও ছিল সেই অনুপ্রেরনা প্রসূত একটি ঘটনা। কিন্তু অভিযানে যা মিলল তাতে হতাশ হলেন খ্রিস্টানরা। হতাশ হলেন এটা জেনে যে সময়ের বিচারে বাইবেলের চেয়েও প্রাচীন হল এই মহাকাব্য। তবে কি বাইবেলের মহাপ্লাবনের বর্ণনা, মেসোপটেমিয়ান মিথ দ্বারা প্রভাবিত? নড়ে চড়ে বসলেন জগতবাসী। দিনে দিনে আধুনিক পাঠক মজে গেল মহাকাব্যের গল্পে। জানা গেল শুধু বাইবেল নয়, গ্রীক মহাকাব্যগুলির কাছেও গিলগামেসের মহাকাব্য ছিল অনুপ্রেরনাস্বরূপ।

আকৃতির বিচারে অবশ্য ব্যাস-বাল্মিকী বা হোমারের রচনার ধারেকাছেও আসে না এই মহাকাব্য। তবু বিশেষজ্ঞরা এক বাক্যে মেনে নেন এর মহাকাব্যিক আবেদনের কথা। কি সে আবেদন? গিলগামেসের পাতা ওলটালে বোঝা যায় সে কথা। বোঝা যায়, এ মহাকাব্য কি অসামান্য দক্ষতায় বিস্মৃত এক যুগের সাথে আমাদের সমকালকে এক সুতোয় বেঁধে দেয়। আমাদের সামনে মেলে ধরে সুদূর অতীতের প্রকৃতি-নির্ভর মানুষের জীবন ও মৃত্যুর বোধকে। তুলে ধরে জীবনের সংক্ষিপ্ততা, অনিশ্চয়তা, অকালমৃত্যুর বিভীষিকা নিয়ে সে যুগের কিছু প্রশ্নকে। আর সেই সব প্রশ্নের ভীড়ে আজও নিজেকে খুঁজে পায় আধুনিক পাঠক। এখানেই গিল গামেসের সার্থকতা।

গিলগামেস মহাকাব্যের মূল আখ্যান গতি পায় হয় কাব্যে এনকিডুর প্রবেশের পরে। ঈশ্বর এনকিডুকে সৃষ্টি করলেন গিলগামেসের সমকক্ষ করে যাতে তার ঔদ্ধত্যে ছেদ পড়ে। অরন্যচারী এনকিডু। বন্য প্রানীদের সাথে তার সখ্যতা। তাদের ভালো মন্দের শরিক সে। এক ব্যাধের মুখে সেই অরন্যচারী এনকিডুর অমানুষিক ক্ষমতার কথা শুনে তাকে বশে আনার জন্য গিলগামেস কাজে লাগালেন এক গণিকাকে। গণিকা শামহাত। তার দেহসৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এনকিডু ধরা দিল তার বাহুবন্ধনে। তারপর শামহাতের পরামর্শে সে চলল রাজপ্রাসাদের পথে গিলগামেসের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্য। কিন্তু রাজপ্রাসাদে আসার পথে ঘটে আর এক ঘটনা। রাজার ব্যাভিচারের কথা জানতে পারে এনকিডু। জানতে পারে, সমস্ত প্রজার নববিবাহিতাকে প্রথম দিন জোরপূর্বক ভোগ করেন এই রাজা গিলগামেস। তীব্র রাগে অন্ধ হয়ে এনকিডু বাধা দেয় রাজা ও এক নববিবাহিতার আসন্ন মিলন কে। পরিণতিতে শুরু হয় এক ভয়ানক দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ। পরে অবশ্য বন্ধুত্ব হয় দুজনের। দিনে দিনে সে বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়ে ওঠে।

অবিচ্ছেদ্য হয়ে ওঠে এই দুই বীর। মিলিতভাবে তারা সিডার অরন্যে অভিযান চালায় হুমবাবার বিরুদ্ধে। অরন্যের রক্ষক দৈত্য হুমবাবা। এনকিডুর সাথে গিলগামেসকে দেখে রাগে ফুঁসে ওঠে হুমবাবা। অরন্যচারী হয়ে অরন্যের রক্ষকের বিরুদ্ধে এনকিডুর এই ষড়যন্ত্র সে যেন মেনে নিতে পারে না। স্বজাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার এই গল্প রামায়নে সুগ্রীব ও বিভীষণের আচরণকে মনে পড়ায়। দুই বীরের আক্রমণে মৃত্যু হয় হুমবাবার। ঠিক তার পরেই আসে আর এক বিপদ। গিলগামেসের রূপমুগ্ধ দেবী ইসথার গিলগামেসের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে ওঠেন। তিনি ছেড়ে দেন স্বর্গের ষাঁড়কে উরুক নগরী ধ্বংসের কাজে। তার আক্রমণে অনেকে মারা গেলেও পরিশেষে গিলগামেস আর এনকিডুর যৌথ আক্রমণে মারা যায় সেই ষাঁড়। তবে এই বীরগাথার ঠিক পরেই ট্র্যাজেডি নেমে আসে এনকিডুর জীবনে। ঈশ্বরের রোষে  নেমে আসে তার অকাল মৃত্যু।

গিল গামেসের জীবনবোধ আর বন্ধুপ্রীতি যে কতটা তীব্র তা প্রকাশ পায় এনকিডুর মৃত্যুতে। নিমেষে যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় গিলগামেস। সে ভেবে পায় না, এ কোন প্রহেলিকা, কোন যবনিকা? চিন্তার মেঘ জমে ওঠে তার চিত্তাকাশে। মৃত্যুভীতি বদলে দেয় তার জীবনের সমস্ত সমীকরণ। গিলগামেসের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ঠিক এই জায়গাটিতে আলোকপাত করেছেন মহাকবি রিলকে। বলেছেন "গিলগামেস হল মৃত্যু-ভীতির মহাকাব্য।" কথাটা অনেকাংশে সত্য কেননা এই ভীতিই গিল গামেসের জীবনকে চালনা করে এক নতুন পথে। মৃত্যু কে জয় করার সঙ্কল্প নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে পৃথিবী -ভ্রমণে। উদ্দেশ্য তার একটাই- সে দেখা করবে উতা-নাপিসটির সাথে।

উতা নাপিসতির আখ্যান আমাদের মনে পড়ায় বাইবেলের জেনেসিস এর নোহ'র গল্পকে। মনে পড়ায় মহাপ্লাবনের কথা। আমরা জানতে পারি সুমেরুদেশের ওপর দিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে বয়ে গেছে মহাপ্লাবনের ঢেউ। আর তার ব্যাপক ধ্বংসলীলার পরে একমাত্র জীবিত পুরুষ এই উতা নাপিসটি। একমাত্র জীবিত নারী তার সহধর্মিণী। প্রেতলোকে বসবাসকারী এই দম্পতি ঈশ্বরের আদেশে অমর। এদের চেষ্টায় আর দেবতার ইচ্ছায় আবার নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে মানবসমাজ, জন্ম নিয়েছে প্রানীকূল। এই দম্পতির খোঁজে গিলগামেস রওনা হয় এক বিপদ সঙ্কুল অভিযানে। খ্রিঃ পূঃ ৭৫০ সালে হোমারের মহাকাব্য "ওডিসি" তেও দেখি একই ধরনের দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প। সেখানে ওডিসিয়ুসকে দেখা যায় প্রেতলোকের পথে। অনেক পর্বতমালা অতিক্রম করে, সাগর পার করে, কষ্ট-যন্ত্রনার অশেষ পরীক্ষার শেষে পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পা রাখে গিলগামেস, তার দেখা হয় উতা- নাপিসতির সাথে। 

গিলগামেস মহাকাব্যের মত মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের এই চেষ্টা আমাদের প্রাচীন লেখাগুলিতেও আছে। কঠোপনিষদের যম-নচিকেতা সংবাদে আমরা শুনতে পাই যমের উদ্দেশে বালক নচিকেতার প্রশ্ন, "মানুষের মৃত্যুর পরে এই যে সংশয় - কেউ কেউ বলে (মৃত্যুর পরে) কিছু থাকে আবার অনেকে বলে কিছুই থাকে না - আপনার দ্বারা উপদিষ্ট হয়ে আমি এ বিষয় জানতে চাই।" উত্তরে যম যা বলেন তা হল, "এই ব্যাপারে স্বয়ং দেবতাদেরও আগে সংশয় ছিল। এ ধর্মের তত্ত্ব এত সূক্ষ্ম যে সহজে বোঝা যায় না। তাই নচিকেতা তুমি অন্য কোনও বর প্রার্থনা কর, আমাকে এ নিয়ে উপরোধ কোরো না, এ অনুরোধ ছেড়ে দাও।"

উতা নাপিসতির কাছেও কোনো সদুত্তর পায়না গিলগামেস। উতা নাপিসতি তাকে অনন্ত জীবনের স্বপ্ন ছেড়ে দিতে বলেন। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়াই যে জীবিত মানুষের ভবিতব্য - তাও তাকে স্পষ্ট করে বলে দেন উতা নাপিশতি। তিনি আরও বলেন যে মৃত্যুর স্বরূপ বোঝা কোন জীবিতের পক্ষে সম্ভব না। তার কথায় যে সত্য গিলগামেসের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা আমরা খুজে পাই ভগবদগীতার পাতায় - 'জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যু" অর্থাৎ জাত ব্যক্তি-মাত্রই মৃত্যু অনিবার্য।

উতা নাপিসতির সাথে দেখা হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে ভল্লুকের দেবী, শিধুরীও তাকে মৃত্যুঞ্জয়ী হবার বাসনা ছেড়ে, খেয়ে পরে, প্রিয়জনের সঙ্গসুখ ভোগ করে জীবন কাটানোর পরামর্শ দেন।  এই উপদেশ যেন মেসোপটেমিয়ার মানুষের সরল সাদামাটা জীবনের দিকেই আলো ফেলে।

গিলগামেস হয়ত তার যুগের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে। তাই শিধুরির জীবন ভাবনায় সে শান্তি পায় না। মৃত্যু তাকে প্রতিনিয়ত ভাবায়। তার মুখে যে প্রশ্ন ভাসে তা সেকালের, একালের এবং হয়ত সর্বকালের চিন্তাশীল মানুষের প্রশ্ন। আমাদের প্রাচীন গ্রন্থ ঋকবেদ মৃত্যুঞ্জয়ী হবার এই বাসনাকে বলেছে "জীবাতুকাম্যা"। সে ইচ্ছার প্রতিধ্বনি শুনি একালের ঋষিকবির মুখেও, "মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে ..."। তীব্র জীবনবোধ থেকে কবি জন্ম-মৃত্যুর সম্পর্ক নিয়ে আরও প্রশ্ন তোলেন "এ দুয়ের মাঝে তবু/ কোনখানে বুঝি আছে কোনো/ মিল; নহিলে নিখিল/ এতবড়ো/ নিদারুণ প্রবঞ্চনা/ হাসিমুখে এতকাল/ কিছুতে বহিতে পারিত না।" কিন্তু সে মিল যে কোথায় তার খোঁজ কবি পান নি। যেমন পায়নি গিলগামেস। উতা-নাপিসতি অবশ্য একটা পথের সন্ধান দেন গিলগামেসকে, দেন জীবনকে সঠিক ভাবে চালনা করার মূলমন্ত্র। তার কাছে এসে গিলগামেস শেষপর্যন্ত বুঝতে পারে নিত্য পরিবর্তনশীল এই জগতে একমাত্র কীর্তিমান ব্যাক্তিই অমর আর তিনিই চিরকাল বেঁচে থাকেন মানুষের হৃদয়ে। চাণক্য মুনির ভাষায় যা হল "কীর্তিযস্য স জীবতি।" সেই পথে জীবনকে চালিত করার লক্ষ্য নিয়ে উতা-নাপিসতির কাছ থেকে ফিরে আসে উরুক এর রাজা গিলগামেস। তারপর প্রজার উন্নতি কল্পে সে সঁপে দেয় নিজের বাকী জীবন।

 

গিলগামেস মহাকাব্যের এই গল্প তাই শুধুমাত্র এক রাজার গল্প নয়, এ গল্প এক ইন্দ্রিয়পরায়ণ রাজার প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার কাহিনী। ভাবলে আশ্চর্য লাগে, কোন সুদূর অতীতের এক ব্যক্তিমানুষের ক্রম-বিবর্তনের এই গল্প দেশ কালের বেড়া ভেঙে আধুনিক পাঠকের মননেও কি অনায়াসে চিন্তার বীজ বুনে চলে যায়।

 

তথ্য সূত্র :

  1. The babylonian Gilgamesh epic: introduction, critical Edition and Cuneiform texts, Volume 1, Oxford : OUP,
  2. Understanding Gilgamesh : His world and his story - Gezina Gertruida De Villiers(University of Pretoria)
  3. Essay on Gilgamesh - Joshua J Mark (published 29th March, 2018)
  4. বিশ্ব মহাকাব্য প্রসঙ্গ - বীরেশ্বর মিত্র (আনন্দ পাবলিশার্স )
  5. প্রবন্ধ সংগ্রহ ২ - সুকুমারী ভট্টাচার্য (গাঙচিল)
  6. বলাকা কাব্যগ্রন্থ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

তন্ময় চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top