সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১

শেষ বৈঠক : জনা বন্দ্যোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:৩৬

আপডেট:
৯ মে ২০২৪ ০৬:৪৩

 

অস্তমিত সূর্যের শেষ রশ্মিটুকু এসে পড়েছে রাজগৃহের জানলার শার্সিতে। সিন্ধুরাজ দাহির সেন কিছু মন্ত্রী ও বিশ্বস্ত বন্ধুদের নিয়ে জরুরী সান্ধ্য বৈঠক আহ্বান করেছেন। একটু পরেই মন্ত্রীদের গোপন আলোচনায় তাঁর সভাগৃহ সরব হয়ে উঠবে।
এক অটল ব্যক্তিত্বের মানুষ রাজা দাহির। তাঁর দীর্ঘ প্রশস্ত কাঁধে স্বর্ণ খচিত মেরুণ আলখাল্লাটি সুন্দর শোভা পাচ্ছে। আরবের খিলাফত রাজত্ব থেকে নির্বাসিত কিছু আরব ব্যক্তিত্বের প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ হয়ে রাজা দাহির তাঁদের আশ্রয় দেন। সেজন্যই সিন্ধুর ব্রাহ্মণ রাজত্বের পশ্চিম আকাশে দেখা দেয় অশান্তির মেঘ!
সিন্ধুর জনপ্রিয় রাজা দাহিরকে ভারত ও সিন্ধু তীরবর্তী অঞ্চলের সকলে এক ডাকে চেনেন! পূর্বে কাশ্মীর, পশ্চিমে মাকরান ও দেবল, দক্ষিণে সুরাট বন্দর ও উত্তরে কান্দাহার, সুলেইমান, ফেরদান ও কিকানান পর্বতশ্রেণীর মাঝে প্রায় পনের লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে দাহিরের রাজত্ব! পূর্ব পুরুষের বৈচিত্র্যপূর্ণ ইতিহাস! ব্রাহ্মণ বংশের পূর্বে ছিল রাই বংশ। রাজা দাহিরের পিতা চাচ সিংহাসন অধিকার করে ব্রাহ্মণ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। কাকা চন্দ্রের মৃত্যুর পর যখন রাজা দাহির সিংহাসন অধিকার করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল বত্রিশ বছর। রাজা দাহির সেন শাসিত নগরটি হল সিন্ধুর আরোর। মহানুভব, প্রজাবৎসল, সুবিবেচক, সুপন্ডিত--এই বিশেষণগুলো রাজা দাহিরের জন্য যথেষ্ট নয়। তাঁর দেশভক্তি অতুলনীয়। সিন্ধুর প্রজারা রাজা দাহিরের প্রতি খুবই অনুগত। শুধু কিছু স্থানীয় উপজাতি রাজার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
আরবের খলিফা আল ওয়ালিদের প্ৰিয় পাত্র ছিলেন বাসরার শাসক আল-হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ। আল-হাজ্জাজ ভারতে আরবের উমাইয়া খিলাফতের বিস্তার চান। কিন্তু খিলাফত ও ভারতের মাঝে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় 'ব্রাহ্মণ' রাজত্ব। আল-হাজ্জাজ গত কয়েক বছরের মধ্যে তিনবার সম্মুখ সমরে দাহিরের কাছে পরাজিত হন। রাজা দাহির শত্রু পক্ষকে বিতারিত করতে সব সময়ই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি তাঁর পিতা চাচের দীর্ঘ শাসনের কথা ভোলেননি। পিতৃ ছায়ায় প্রজাদের ভীষণ ভাবে আগলে রেখেছেন দাহির। তিনি কোন বিষয়ে একা সিদ্ধান্ত নেন না। সেক্রেটারী ওয়াজিল ও মন্ত্রীদের সুচিন্তিত মতামতকে গুরুত্ব দেন। বিবেচক রাজা দাহির কোন বারই পরাজিত পক্ষের সৈন্যদের আটকে রেখে তাদের ওপর জোর জুলুম করেননি। শুধু মাত্র অতন্দ্র প্রহরীর মতো সিন্ধুর মাটিতে আরবী শক্তি কায়েমকে বাধা দিয়েছেন। রাজা দাহিরের শক্তিকে বুঝে নেওয়ার পর আল-হাজ্জাজ নিজের সেনা বাহিনীকে অনেক বেশী শক্তিশালী করে গড়ে তোলেন। তিনি আরো একবার রাজা দাহিরের সঙ্গে যুদ্ধ করার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। এবার সিন্ধুর দেবলের জলদস্যুদের ঘাঁটি আক্রমণ করার জন্য নবীন সেনাপতি মহম্মদ বিন কাশিমকে প্রেরণ করেন। দেবল রাজা দাহিরের রাজ্যের অন্তর্গত। তবে জলদস্যুরা দিন দিন এতটাই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিল যে, কোন শাসন মানতনা।
সারণদ্বীপে ব্যবসার কাজে যে সকল আরব বণিকরা বাস করতেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু হলে সারণ দ্বীপের রাজা মৃত বণিকদের স্ত্রীপরিজনদের সুন্দর নৌযানে করে আরবে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু পথে দেবলের জলদস্যুরা আটটি আরব নৌযান লুন্ঠন করে এবং নারী পুরুষ যাত্রীদের বন্দী করে কারাগারে নিক্ষেপ করে। ওই সকল নৌযানে তৎকালীন খলিফা ও বাগদাদের গভর্নরের জন্য মহামূল্যবান ধনরত্ন ও উপহারসামগ্রী ও ছিল। কয়েকদিন পূর্বে রাজা দাহিরকে তাঁর বিশ্বস্ত সেক্রেটারী ওয়াজিল চর দ্বারা প্রেরিত হাজ্জাজের সাক্ষারিত একটি পত্র দেন। পত্রে লুন্ঠিত আরব নৌযানের সামগ্রী ফেরত চেয়ে কঠিন হুমকির কথা লেখা ছিল। নৌযানের নারী পুরুষদের যেন ক্ষতি না হয় সে কথাও উল্লেখ করা ছিল। প্রত্যুত্তরে রাজা দাহির ওয়াজিলকে জানিয়েছেন যে, এসব লুন্ঠনের কাজ জলদস্যুদের, তারা শক্তিশালী ও রাজার শাসন গ্রাহ্য করেনা। লুন্ঠিত সামগ্রী ফেরত না পেয়ে মহম্মদ বিন কাশিমকে আল-হাজ্জাজ দেবল আক্রমণের নির্দেশ দেন। এই আক্রমণের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল রাজা দাহিরকে শাস্তি দেওয়া। বিন কাশিমের বাহিনীতে জাট্ট, মেদ, ভুট্ট, ঝাজরা প্রভৃতি উপজাতি যোদ্ধারা যোগ দেয়। উমাইয়া খিলাফতের সেনাপতি মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু নদের পূর্ব তীরে রাজা দাহিরের রাজধানী আরোর নগর অধিকার করার উদ্দেশ্য সিন্ধু নদের পশ্চিম তীরে উপস্থিত হন।দেবল জয় করে বিন কাশিমের বাহিনী নেরুনের দিকে এগিয়ে যায়। নেরুনের বৌদ্ধ শাসক বিনা যুদ্ধে উমাইয়া খিলাফতের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। দেবলের অধিবাসী নেরুনে আরব সেনার সঙ্গে হাজ্জাজের প্ৰিয় ব্যক্তিত্ব বাজিলের আগমন বার্তা চরের মাধ্যমে রাজা দাহিরকে জানায়। রাজা দাহির তাঁর একমাত্র পুত্র জয়শিয়াকে সিন্ধু নদের পশ্চিমে আরবদের দমন করতে প্রেরণ করেন। চার হাজার আশ্বারোহী সেনা, উট, চারটি হাতি নিয়ে জয়শিয়া যুদ্ধভূমিতে অবতীর্ণ হন। বাজিলের ঘোড়া জয়শিয়ার সৈন্যবাহিনীর হাতিকে দেখে ভীত হয়। তবু বাজিল হাল ছাড়েননা। অনেক শত্রুসেনা হত্যা করে শেষে নিজে শহীদ হন। বাজিলের মৃত্যু সংবাদ আল-হাজ্জাজের কাছে পৌঁছায়। আরবদের প্রতিশোধস্পৃহার কথা ভেবে নেরুনের অধিবাসীরা ভীত হয়। জিলারের যুদ্ধে বীরের মতো লড়াই করে বিন কাশিমের হাতে জয়শিয়া নিহত হন। চরের মাধ্যমে রাজা দাহির জানতে পারেন সিন্ধুনদ পার হয়ে বিন কাশিমের সৈন্যদল দাহিরের রাজধানী আরোরের দিকে এগিয়ে আসছে।
প্রজারা জানে যতক্ষণ রাজা দাহির আছেন, ততক্ষণ তারা সুরক্ষিত l রাজা দাহির পুত্রের মৃত্যুতে শোকতপ্ত, নিদ্রাহীন রাত্রি যাপন করেও আরবদের সঙ্গে যুদ্ধে অটল। নিজের ব্যক্তিগত সুখ দু:খ তাঁর কাছে তুচ্ছ। আজ সকালে আরোরের রাজপ্রাসাদের সিংহদুয়ারে দাঁড়িয়ে জনগণের প্রতি বীরদীপ্ত কণ্ঠে বলেছেন, "আরোরের মাটি আমার একার নয়! ব্রাহ্মণ রাজত্বের প্রতিটি মানুষের। আরবরা এগিয়ে আসছে। কিন্তু আমরাও প্রস্তুত। ভয় পাবেননা। ব্রাহ্মণ রাজের প্রাণ থাকতে আপনাদের কোন ক্ষতি আরবরা করতে পারবেনা। রাজা দাহিরের দেশ প্রেম ও ভাষণ প্রজাদের বরাবরই উদ্দীপ্ত করে। তিনি তাঁর দুই মেয়ে ও স্ত্রী লাদিকে কয়েক হাজার সৈন্যসহ রাওয়ারের দুর্গে প্রেরণ করেছেন। চরের মাধ্যমে সংবাদ পাওয়া গেছে এবার বিন কাশিমের সৈন্য সংখ্যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ। বিন কাশিম নিজের শক্তি বৃদ্ধি করে তবেই আরোরের দিকে এগোতে সাহস করেছেন।
গতকাল সারা রাত দাহির সেন অনেক ভেবেছেন। এখন সন্ধ্যে প্রায় আসন্ন। দাসীরা ঘরে মোমবাতিদান দিয়ে গেছে। মোমের উজ্জ্বল আলোয় রাজা দাহিরের মুখটি স্থির ও সমাহিত দেখাচ্ছে। আজ জরুরী সভা ডেকেছেন। মনে মনে তিনি বুঝতে পারছেন এই যুদ্ধই হবে তাঁর জীবনের শেষ যুদ্ধ। তবু যুদ্ধ তাঁকে করতেই হবে -- প্রকৃত বীরের মতোই সিদ্ধান্ত তাঁর। ভীরু কাপুরুষের মতো বশ্যতা স্বীকার করা তাঁর রাজবংশের ধর্ম নয়।
রাণী ও কন্যারা রাজপ্রাসাদে নেই বলে চারিদিক বড় বেশী নীরব। একটা সূচ পড়লেও বোধহয় আওয়াজ হবে। রাজা দাহির দাঁড়িয়ে আছেন জানলার বাইরে অন্ধকারের দিকে চেয়ে। কয়েক মিনিটের স্তব্ধতা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করেন তাঁর প্ৰিয় সেক্রেটারী ওয়াজিল, উজির ও দুজন প্রবীণ মন্ত্রী। সভাগৃহের দেওয়ালে রাজা দাহিরের পিতার তৈলচিত্র লক্ষিত হচ্ছে। মেঝের দামী গালিচায় সুদৃশ্য তোষক ও পাশ বালিশ- অতিথিদের বসার আরামদায়ক ব্যবস্থা। সকলকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে তাঁদের আসন গ্রহণের অনুরোধ করেন রাজা দাহির । অতিথিরা আসন গ্রহণের পর মাননীয় উজির বলতে শুরু করেন, "বারংবার সিন্ধু রাজের কাছে হেরে গিয়ে আরবরা আবার যুদ্ধ ঘোষণা করার সাহস কি করে পায় জানিনা!"
রাজা দাহির মৃদু হেসে বলেন,"উত্তেজিত হবেননা। ওদের উচিত শিক্ষা দিতে আমি প্রস্তুত।"
রাজা দাহিরের সেক্রেটারী ওয়াজিল বলেন, "এবার ওরা যুদ্ধে জেতার পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে শুনলাম।"
বয়সে কম হলেও ওয়াজিলের বুদ্ধিমত্তা ও বিচাক্ষণতার ওপর রাজা দাহির ভরসা করেন।
"ব্রাহ্মণ রাজবংশ কে শেষ করা অত সহজ নয়।"
রাজা দাহিরের গলার স্বরে পুত্র হত্যার প্রতিশোধ স্পৃহা। তবু বাইরে তিনি স্থির।
দুজন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব সভাগৃহে প্রবেশ করেন। তাঁরা দুজনেই রাজা দাহিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের তালিকায় পড়েন। তাঁদের সম্ভাষণ জানিয়ে আসন গ্রহণ করতে বলেন রাজা। দাসী এসে অতিথিদের জন্য দুরকম পানীয় ও কিছু মাংসের পদ পরিবেশন করে। আজ রাজা দাহির অতিথিদের আপ্যায়নের কোন ত্রুটি রাখেননি। পানাহার শেষ করে আবার মন্ত্রণা সভার আলোচনা শুরু হয় । আজ মাঝে মাঝেই রাজা দাহির অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছেন। পুত্র জয়শিয়ার স্মৃতি বার বার পিতৃহৃদয়কে ভারাক্রান্ত করছে। এবার একজন প্রবীণ মন্ত্রী রাজা দাহিরকে সরাসরি বলেন, "ভারত থেকে বিশেষ করে গুজরাট থেকে বিভিন্ন রাজা মহারাজের পক্ষ থেকে আপনাকে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনুরোধ পত্র এসেছে। ব্যাপারটা বিবেচনা করে দেখবেন মহারাজ।"
রাজা দাহির অটল ভঙ্গিতে বলেন, "এটা সম্ভব নয়। আমি আমার প্রজাদের বিপদের মুখে ফেলে পালতে পারবনা।"
মুহুর্তকাল থেমে রাজা দাহির আবার বলতে শুরু করেন, "আমি কৃতজ্ঞ আপনারা আজ আমার আহ্বানে এসেছেন। আপনারা জানেন আমি ভীরু, কাপুরুষ নই!"
কিছুক্ষণ সভাগৃহ নীরব থাকে। প্রবীণ মন্ত্রী আরো একবার রাজাকে বোঝাতে চাইলেন, বললেন, "আপনি আপনার পরিবারের সকলকে ভারতে পাঠিয়ে দিতে পারেন। নিজের জন্য না হলেও পরিবারের সুরক্ষার কথাটা একবার ভাবুন। আপনি পুত্রশোক পেয়েছেন। আর কোন দু:সংবাদ আপনার জন্য কাম্য নয়।"
এ কথা শুনে রাজা দাহির প্রতিবাদের সুরে বলেন, "আমার পরিবার সুরক্ষিত থাকবে আর আমার প্রজারা প্রাণ দেবে-- এটা কি করে মেনে নেব!"
এরপর আর কেউই রাজার মুখের ওপর কোন কথা বলতে পারেনা। হেমন্তের রাত্রি। বাইরে হিম পড়ছে। রাত বাড়ছে। আর দু একটি জরুরী কথা সেরে রাজা সভা শেষ করবেন। তিনি বললেন, "একটা বার্তা ভারতের রাজা মহারাজাদের দিতে চাই -- আমি আমৃত্যু আরব ও ভারতের মাঝে প্রাচীর স্বরূপ দন্ডায়মান ছিলাম, থাকব। আমায় পরাজিত ও হত্যা না করে আরবরা ভারতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারবেনা। "
রাজার দৃঢ় বক্তব্যে সভার সকলেই প্রশংসাসূচক কণ্ঠে বলে ওঠেন, "সাধু, সাধু! আপনার আত্মদান প্রজারা মনে রাখবে!"
রাজা দাহির আত্মতৃপ্তির হাসি হাসেন।
আসন্ন যুদ্ধে শত্রুপক্ষ অধিক শক্তিশালী জেনেও রাজা দাহির নিজের সুরক্ষা সম্পর্কে চিন্তাশীল নন। তিনি নিজের নিশ্চিত পরিণতি জেনে নিয়েছেন। মৃত্যু সম্পর্কে এতটা নির্লিপ্ত কোন মানুষ হতে পারে! পরিশেষে তিনি সভার সকলের প্রতি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন, "আসন্ন যুদ্ধে কার শক্তি বেশী এটা না ভাবাই ভালো!তাহলে প্রজাদের মনোবল ভেঙে যাবে!"
এবার সভা ভঙ্গের নির্দেশ দেন রাজা। সকলে রাজাকে অভিবাদন জানিয়ে বিদায় নেন। সকলে রাজা দাহিরের মানবিক গুণের প্রশংসা না করে পারেননা।
সকলে বিদায় নেবার পর শয়নকক্ষে রাজা দাহির একা। মৃদু বাতিদানের আলোয় ঘরের মধ্যে এক অদম্য মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আজও তিনি নিদ্রাহীন। অপলক চোখে চেয়ে আছেন ঘরের বিরাট ঝকঝকে আয়নার দিকে। আজকের দীর্ঘ রাত্রিটি নানান চিন্তাজালে তাঁর মনকে ক্ষত বিক্ষত করছে, কিন্তু কোন চিন্তাই স্বার্থকেন্দ্রিক নয়। যুদ্ধের পূর্বে রাতের স্তব্ধ প্রহরগুলোর সঙ্গে তিনি নির্বাক যুদ্ধ করছেন! ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, পরাজয় আসন্ন জেনেও অপরিসীম ধৈর্য্য, নিষ্ঠা, সততার প্রতিমূর্তি রাজা দাহির সেন প্রজাদের প্রতি কর্তব্যের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন।
দূরের আকাশে অস্পষ্ট আলোর সংকেত- ভোর হচ্ছে। বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে সূর্যদেবের প্রতি রাজা অকুণ্ঠ শ্রদ্ধায় প্রণাম জানান। আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই যুদ্ধের দামামা প্রজাদের নিশ্চিত জীবনে বিঘ্ন ঘটাবে! তবু কিছু করার নেই। এই যুদ্ধ থামায় কে! রাজা দাহির জানেন তাঁর পরাজয় ও মৃত্যু খিলাফত বংশের একান্ত কাম্য। তবু জীবন মৃত্যুর পণ থেকে তিনি সরে দাঁড়াবেননা। তাঁর মৃত্যুতে ব্রাহ্মণ বংশের গৌরব অক্ষুন্ন থাকবে-এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। তাই পরিতৃপ্তির নি:শ্বাস ফেলে মহাপ্রাণ রাজা দাহির যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেন।


জনা বন্দ্যোপাধ্যায়
অধ্যাপক, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top