সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

জীবনবোধ : আফরোজা অদিতি


প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৫৫

আপডেট:
৪ মে ২০২০ ১৩:১৩

 

স্ট্যান্ডে পৌঁছানোর এক সেকেন্ড আগেই হুস করে বেরিয়ে গেল বাসটি। একেবারে চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল। দৌড়ে ধরার চেষ্টা করেনি; জানে পারবে না, তাই করেনি। পরবর্তী বাসের জন্য অপেক্ষা করে জরিনা। কলেজ থেকে বের হতে দেরি হয়েছে আজ; একজনের কাছে নোট চেয়েছিল তার জন্য ছিল অপেক্ষা। নোট তো পেলই না মাঝখান থেকে বাস মিস করল! আধঘন্টা হয়ে গেল আসছে না বাস; আজ বোধকরি আর আসবে না। শুধু শুধু দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট! সময় নষ্ট করতে ওর ভালো লাগে না। অথচ ইচ্ছা না করলেও, ভালো না লাগলেও সময় নষ্ট করতে হয়, হয়ে যায়! সব থেকে বেশি সময় নষ্ট হয় ট্রাফিকে।

স্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে সামনের ফুটপাতে এসে দাঁড়ায়; রিকশা নিবে। কিছু টাকা গচ্ছা এই আর কি! বাড়তি টাকা খরচ করার মতো টাকা নেই, থাকে না ওর কাছে; আজও নেই বাসায় গিয়ে দিতে হবে! রিকশা দাম করছে এমন সময় খুব চকচকে এক বাজাজ এসে ব্রেক করে একেবারে ওর গা ঘেঁষে; ভয় পেয়ে সরে দাঁড়ায়। ওর ভয় পাওয়া দেখে একটু হেসে হাত নাড়ে ছেলেটি। তারপর নেমে সামনে এসে হাসে। হাসি দেখে ওকে দেখে চেনা চেনা মনে হয় সুমিতার। কিন্তু কোথায় দেখেছে কিছুতেই মনে করতে পারছে না! এত্ত ভুলো মন হয়ে গেল কী করে ওর ভেবে খুব রাগ হতে লাগল নিজের ওপর।

 ‘অ্যাই মিতা, বাস পাওনি, পৌঁছে দিবো তোমাকে।’ না-চেনা অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সুমিতা। রাগও হচ্ছে, চেনা নেই জানা নেই পুরো নামে না ডেকে ডাকছে অর্ধেক নামে! সাহস কত্ত বড়! ওকে কথা বলতে না দেখে আবার বলে ছেলেটি, ‘কী হলো চিনতে পারছো না, আমি শোভন। সেই যে রিপনের জন্মদিনে আলাপ হলো তোমার সঙ্গে।’ এবারে মনে পড়ে সুমিতার। ওর মামাতো ভাই রিপন। ওর বন্ধু শোভন। আলাপ হয়েছিল রিপন ভাইয়ের জন্মদিনে। গান গায়, গান গেয়েছিল রিপন ভাইয়ের জন্মদিনে। ওদের বাড়ি খিলগাঁয়ে। বাবা নামকরা উকিল। অর্থের অভাব নেই। খিলগাঁয়ে একটি বাড়ি ছাড়াও আরেকটি আছে যাত্রাবাড়িতে। শুধু বাড়ি নয় আছে ধানি জমি, মিল। ফ্লাওয়ার মিল বা ছ-মিল ঠিক মনে করতে পারছে না।

‘কি চিনতে পেরেছ? না কি...’ মাথা ঝাঁকিয়ে লাজুক হেসে বলে, ‘সরি, শোভন ভাই, এবারে চিনতে পেরেছি! হঠাৎ দেখায় মনে করতে পারছিলাম না, সরি!’ দুঃখ প্রকাশ করে সুমিতা। ‘যাক আর সরি বলতে হবে না। এখানে তো বাসের জন্য অপেক্ষা করছে, চল পৌঁছে দেই, সন্ধ্যা লেগে যাচ্ছে!’ ‘না না, ঠিক আছে, রিকশাতে যাবো ঠিক করেছি। আর রিকশা ঠিক করে ফেলেছি, আজ যাই।’ সুমিতার কথায় কণ্ঠে দুঃখভাব ফুটিয়ে তোলে শোভন। বলে, ‘ রিপন হলে কি এভাবে কষ্ট দিতে পারতে! তুমি আমকে বিশ্বাস করতে পারছো না।’ জিভ কেটে একটু হেসে বলে সুমিতা, ‘আজ থাক শোভন ভাই, বাই!’ শোভনকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রিকশায় উঠে রিকশাওয়ালাকে যেতে বলে সুমিতা।

দিন দশেক পর। বাসস্ট্যান্ডে শোভেনের সঙ্গে আবারও দেখা হয় সুমিতার। বলে, ‘এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তোমাকে দেখে দাঁড়ালাম; চলো পৌঁছে দেই।’ ‘না না আপনি কেন কষ্ট করবেন।’ কুন্ঠিত কন্ঠে বলে সুমিতা। ‘না, আজ আর তোমার আপত্তি শুনছি না।’ রাস্তার মাঝে এতক্ষণ কথা বলা ঠিক নয় ভেবে গাড়িতে ওঠে। কিন্তু ওদের এই দেখা, বাজাজ নিয়ে এখানে আসা, ওকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া সবই যে শোভনের ইচ্ছাকৃত তা বুঝতে পারে না সুমিতা। এরপর প্রায়ই দেখা বাড়ি পৌঁছে দেওয়া চলতে থাকে। তারপরে এমন হয় যেন সুমিতাকে বাড়ি পৌঁছানো ছাড়া আর কোন কাজ নেই শোভনের।

এরপর একদিন হঠাৎ মাঝপথে থেমে যায় বাজাজ। ‘থামলেন কেন শোভন ভাই।’ সুমিতা বলে। ওর কথা শুনে শোভন ওর হাত ধরে নিজের দিকে হালকা আকর্ষণ করে বলে, ‘এখনও তো সন্ধ্যা নামেনি চল না একটু গল্প করি। না, না তোমার কোন কথা শুনবো না।’ দুজনে বাজাজ থেকে নেমে তিন নেতার মাজারে বসে। সুমিতার ফাস্ট ইয়ার চলছে। সদ্য কলেজে ঢুকেছে; কিশোর মন পাপড়ি মেলতে শুরু করেছে, যৌবনের রঙ লেগেছে দেহে, মনে। চোখে যা দেখে সবই সুন্দর! ভালোলাগা আর প্রেমের মাঝে ডুবতে ভালো লাগে যে বয়সে সুমিতার এখন সেই বয়স!

সুহাস আর সুমিতা দুই ভাইবোন। ওদের বাবার নিউমার্কেটে একটি শাড়ির দোকান আছে। শোভনদের মতো ধনী পরিবার না হলেও সচ্ছল সংসার ওদের। সুহাস ইউনিভার্সিটিতে পড়ে; পড়ার ফাঁকে বাবাকে সাহায্য করে। একদিন ‘ইউনি’ থেকে দোকানে যাওয়ার শোভনের সঙ্গে দেখে ফেলে সুমিতাকে। চিন্তিত হয়! কাজে মন দিতে পারে না। বাবাকে বলার কথা চিন্তা করে; কিন্তু সবটা না জেনে তো বলা যায় না;তাই বলতেও পারে না। পরদিন ছুটি। কলেজ বন্ধ আর ইউনি-ও। সকালে দোকানে যাওয়ার আগে প্রশ্ন করে সুমিতাকে। ‘ঐ ছেলেটা কে সুমি?’ ‘কোন ছেলেটা ভাইয়া।’ বোনের কথায় বিরক্ত হয় সুহাস। সেই বিরক্ত কণ্ঠে প্রকাশ পায়। ‘দেখ, সুমি ভান করবি না। তুই জানিস ভান করা পছন্দ করি না আমি। আমি শোভনের সঙ্গে ঘুরতে দেখেছি তোকে। ঐ ছেলে ভালো নয়।’ সুমিতা সব কথা বলে সুহাসকে। তারপর মুখ নিচু করে বলে,‘ওকে ভালোবাসি ভাইয়া, ও খুব ভালো ছেলে...।’ আরও কিছু বলতে যায় কিন্তু থামিয়ে দেয় সুহাস। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, ‘ওর সঙ্গে আর মিশবে না তুমি। ও একজন মাস্তান, চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ওকে চাঁদা চাইতে দেখেছি আমি। মারামারির জায়গায় হকিষ্টিক হাতে দেখেছি।’ ‘ভাইয়া, কাকে না কাকে দেখেছ! ও খুব ভালো ছেলে, ওরকম ছেলে হলে বুঝতাম। তাছাড়া ওকেই বিয়ে করবো।’ এবারে রেগে যায় সুহাস। বলে, ‘বিয়ে করা তো দূরে থাক, ওর সঙ্গে মিশবেও না তুমি।’ সুমিতা ঘাড় গোঁজ করে জবাব দেয়,‘তুমি বললেই হলো, মিশবো না; ওর সঙ্গেই মিশবো আর ওকেই বিয়ে করবো।’ বেত্তমিজ মেয়ে বলে ঠাস করে চড় মরে সুমিতাকে। সুমিতা মা,মা বলে মাকে ডেকে কাঁদতে থাকে।

সুহাস বোকা বনে যায়। সুমিতা অন্যায় করে আবার মাকে ডাকতে পারে আর কাঁদতে পারে এ ধারণাই ছিল না ওর। ওদিকে ঘরে আসে মা। মাকে কিছু বলতে পারে না সুহাস। মেয়েকে জিজ্ঞেস করেও কোন জবাব পায় না মা। মা কোন জবাব না পেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যান। সুমিতার কলেজে যাতায়াত বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে শোভনের সঙ্গে মেলামেশা। আনন্দে থাকে সুমিতা। সুহাসের নিষেধ শোনে না। বাবাকে বলে উঠতে পারে না সুহাস।

মাস ছয়েক পর। একদিন বৃষ্টিভেজা গোধূলী আলোয় তিন নেতার মাজারে সুমিতা অপেক্ষা করছে শোভনের। প্রায় ঘন্টা পার করে এলো শোভন। অনেকদিন দেখা হয়নি; অনেকবার ফোন করার পর আজ এসেছে। এসেই হম্বিতম্বি শুরু করে শোভন। ‘ডেকেছ কেন?’ অসহিষ্ণু কণ্ঠ শোভনের। ‘আমার অনেক কাজ, দেরি করতে পারবো না, তাছাড়া, এভাবে অযথা সময় নষ্ট করতে পারি না আমি।’ ওর কথা শুনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে সুমিতা। অনেক কষ্টে দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলে, ‘আমাদের বিয়ে হওয়া দরকার, নইলে...।’ কথা শেষ করতে পারে না সুমিতা। আর বিয়ের কথা শুনে কঠিন কণ্ঠে সুহাস বলে, ‘কি বললে বিয়ে, বিয়ে করবো এখন; সুমিতা বিয়ের কথা ভাবছি না তো এখন।’ ‘ভাবছো না কেন? এখন তো ভাবতে হবে, আমি মা হতে...’ কথা শেষ না হতেই উঠে দাঁড়ায় শোভন। সুমিতা ব্যস্ত হয়। ‘একটু বসো, কথা শুনে যাও, আমি কী করবো বলে যাও।’ ‘তুমি কী করবে আমি কি জানি! কিছু করার না থাকলে এখানে বসে থাকো।’ সুমিতা অপমানিত হয়। চোখ ভেসে যায় জলে। বুকের মাঝে তেপান্তরের একরাশ শূন্যতা প্রবেশ করে! কী করবে এখন! কী করার আছে! ভাবনার খেই হারিয়ে যায় বারবার। শোভন যে আর পছন্দ করছে না ওকে বুঝতে পেরেছে অনেক আগেই। তবুও আশা ছিল মনে...

এখন বুঝতে পারছে শোভনের সঙ্গে এরকম অবাধ মেলামেশা করা উচিত হয়নি। খবরের কাগজে এতো কিছু ঘটনা, এত্ত খবর পড়েও এভাবে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া উচিত হয়নি ওর! শুধু কী খবরের কাগজ, ফেসবুকে কি দেখেনি! এ কথা ভাবতেই একটা ভয়ের ¯রাতে সুমিতার শিরদাঁড়া বেয়ে শিরশির বরে নিচের দিকে নামতে থাকে। কোন ভিডিও ক্যামেরা লুকিয়ে রাখেনি তো, ছবি তোলেনি তো! চিন্তা শক্তি হারিয়ে যায় সুমিতার। অনেকটা সময় আনমনা বসে থাকে। কী করবে ভাবতে থাকে, স্থিার করতে পারে না। কিছু খেতে পারছে না, খেলেই বমি হয়ে যাচ্ছে। দুদিন বমি হয়েছে। মায়ের কথার সদুত্তর দিতে পারেনি। মা,বাবা, ভাই কারোর সঙ্গে কথা বলতে পারে না। মায়ের চোখ; মাকে এড়াতে পারে না। মা শুধু একটি কথাই বলছে, ‘আমাদের দিকে একটু খেয়াল রাখা দরকার ছিল তোমার।’ মায়ের কথা শুনে আর একটা কথা মনে পড়ে; যদি ভিডিও ধারণ করে থাকে এবং তা ফেসবুকে ভাইরাল করে থাকে তাহলে! ও কী করবে! পরক্ষণেই মনে হয় “মি টু” আন্দোলন এখন জোরদার এর মধ্যে কী এই পথে পা বাড়াবে শোভন। এই রকম নানান চিন্তায় এলোমেলো হয়ে থাকে সুমিতা। সবকিছু এলোমেলো লাগে। সাতদিন বাড়ি থেকে বের হয় না।

সাতদিন পর কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে সুমিতা। যানজটে আটকে আছে ওর রিকশা। যানজটে আটকে থাকতে বিরক্ত লাগছে; নেমে যাওয়ার পথ খুঁজতে খুঁজতে একটি বিয়ের গাড়ির দিকে চোখ পড়ে। বরের বেশে সেখানে শোভনকে দেখতে পায় সুমিতা। ও বিশ্বাস করতে পারে না, শোভন এত্ত তাড়াতাড়ি বিয়ের পিড়িতে বসবে বা বসতে পারে! কলেজে না গিয়ে হাইকোর্টের মাজারে যায়! মাজার জিয়ারত করে, জটিলা বিবির মাজারে টাকা দেয় তারপর তিন নেতার মাজারের নিচে সিড়িতে বসে থাকে। শূন্যতা ঘিরে থাকে ওকে! দিন যাবে, মাস যাবে। সময় তার নিয়মে চলবে, আর এ এমনি জিনিস যা লুকিয়ে রাখতে চাইলেও লুকিয়ে রাখা যাবে না,যায় না। আজ বাড়ি জেনেছে, কাল জানবে পাড়া-পড়শি, পরশু সকলে। এই লোক-সমাজে মুখ দেখতে পারবে না। শুধু ও নয়, ওর জন্য বাবার মাথা নিচু হয়ে যাবে, নিচু হয়ে যাবে মা,ভাই। নিজের মাথা নিচু হতে পারে কিন্তু পরিবারের মুখে কালি দিতে পারে না কিছুতেই। ওর চোখ থেকে ঝরে পড়ে অশ্রু। নিজের অজান্তে পেটে হাত চলে যায়।

প্রথম সন্তান নিয়ে অন্য রকমের চিন্তা থাকে মেয়েদের। নারীর তিন জগতের মধ্যে এটি একটি। প্রথম সন্তানের জন্মের মধ্য দিয়ে এই জগতে পা রাখে মেয়েরা। ও তো এর ব্যতিক্রম নয়! এটি ওর প্রথম সন্তান। না হোক বিয়ে কিন্তু ভালোবাসা তো আছে। তাছাড়া ও বিশ্বাস করে প্রতিটি জন্ম সে বিয়ে ভুক্ত হোক আর বিয়ে বহিভর্’ত হোক কখনও অবৈধ নয়; সব জন্মই বৈধ! এটি ওর প্রথম সন্তান। প্রথম সন্তান নিয়ে কতো আশা থাকে, থাকে আকাক্সক্ষা, ভালোবাসা। ওরও আছে কিন্তু তা পূরণ হলো না! কেন? কার দোষে? হাতের ওপর চোখ থেকে ঝরে পড়ে জল। বাস্তবে ফিরে আসে ও।

এই বাচ্চাটির তো কোন দোষ নেই। সব কলঙ্ক ধারণ করে জন্ম দিলো কিন্তু ওকে খাওয়াবে কী আর নিজেই বা জীবন ধারণ করবে কী ভাবে! যা হোক একটা কাজ জুটিয়ে নিয়ে জন্ম দিবে ওকে; কিন্তু! আবারও একটা কিন্তু এসে ওর চিন্তার মধ্যে ঢুকে পড়ে। এই বাচ্চা জন্ম দিলেই তো হবে না; ও কার পরিচয়ে বড় হবে! এই সমাজে তো বাপ দাদার বংশ পরিচয়ই মূখ্য, অন্য সব গৌণ। ওর সিদ্ধান্তে চিড় ধরে। বুক ভেঙে কান্না আসে। দুই মাস দশদিনের একটি জীবন আছে ওর মধ্যে, ওর আত্মা, ওর শরীরের অংশ! বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনা-না আনা নিয়ে তোলপাড় চলে মনের মধ্যে, মাতৃত্বের সঙ্গে, ওর অস্তিত্বের সঙ্গে। কী করবে আত্মহত্যা না ভ্রুণ হত্যা! দুটোই সমান অপরাধ। আত্মহত্যা অর্থ জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া, আর ভ্রুণ হত্যা অর্থ একটি নিষ্পাপ মানুষ খুন করা দুটিই সমান অপরাধের; তবে পার্থক্য একটাই নিজেকে খুন করলে কোন দায়ভার বহন করতে হবে না, কিন্তু ভ্রুণ হত্যায় দায়ভার সারা জীবনের! যতোদিন বাঁচবে এ অপরাধের বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে ওকে।

সুমিতা নিজের পেটের ওপর হাত রাখে। সন্তানের অস্তীত্ব অনুভবের চেষ্টা করে। না-দেখা সন্তানের সঙ্গে কথা বলে, ‘সোনামনি, তোমার নাম দিলাম সৃষ্টি; তুমি রাগ করো না! সৃষ্টি, আমি তোমার বেকুব মা, নিজের অজান্তে ধারণ করেছি তোমাকে! এই পৃথিবীর বুকে তোমাকে আনতে পারতাম কিন্তু তোমাকে সামাজিক পরিচয়ে বড় করতে পারতাম না। কোন পরিচয়ে বড় করতাম বলো? আমার এই অক্ষমতা তুমি ক্ষমা করো!

তিন নেতার মাজার থেকে নেমে জটিলা বিবির মাজারে তিনটি টাকা ফেলে-“এ হলো আমি,তুমি সে” অন্যভাবে হলো “ঈশ্বর, মোহাম্মদ আর তার উম্মত; বুঝলে!” নিজের মনেই কথাগুলো বলে একটা রিকশা নেয়। বাড়ি যাওয়ার পথে একটি নার্সিং হোমের সামনে দাঁড় করায় রিকশা...।

 

আফরোজা অদিতি
কবি ও কথা সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top