ডেঙ্গু পরিস্থিতি

ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি রোগী দুই লাখ ছাড়াল


প্রকাশিত:
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৮

আপডেট:
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:১৩


দেশে গত এক দিনে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে এক হাজার ৭৯৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। একই সময় ডেঙ্গুতে মারা গেছে আটজন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমন তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল ভর্তি রোগী নিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির ফলে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত এক মাসে ভারি বৃষ্টিপাতের তুলনায় থেমে থেমে বৃষ্টি ছিল বেশি। এডিস মশা প্রজননের জন্য এই বৃষ্টিটাই সবচেয়ে বেশি উপযোগী। সব মিলিয়ে বলা যায়, বৃষ্টিপাত একেবারে না কমা পর্যন্ত এডিস মশা কমার সম্ভাবনা নেই।


বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা—এই ত্রিমুখী সমস্যার কারণে ডেঙ্গুর এই প্রবল প্রাদুর্ভাব থেকে খুব সহজে মুক্তি পাচ্ছি না।’ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি নতুন রোগীদের নিয়ে চলতি বছর ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুই লাখ ৯৮১। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৭৫। এর আগে কোনো বছর ডেঙ্গুতে এত মানুষের মৃত্যু হয়নি।


২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর গত বছর ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে ভর্তি হয় ৬২ হাজার ৩৩৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি রোগী সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৯ সালে। সে বছর মোট রোগী ছিল এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন দুই হাজার ৭৩২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মারা গেছে প্রতিদিন ১৩ জনের বেশি। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের কারণে মাল্টিপল অর্গান ফেইলিওর হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ শতাংশ রোগীর। হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মধ্যে মৃত্যু ৮৭ শতাংশের। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশের মৃত্যু ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১৯ হাজার ১২৯ জন রোগীর মধ্যে পাঁচ হাজার ১৮২ জন বা ২৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরের। এরপর চার হাজার ১৭২ জন বা ২১.৮০ শতাংশ ঢাকা মহানগরের বাইরে, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। চট্টগ্রাম বিভাগে দুই হাজার ৯৮১ জন বা ১৫.৫৮ শতাংশ, বরিশালে দুই হাজার ৭৪৩ জন বা ১৪.৩৩ শতাংশ ও খুলনায় দুই হাজার ১৭৭ জন বা ১১.৩৮ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মশা কমানোর জন্য এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা আমরা নিতে পারছি না। এর সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টি তো নিয়মিতই হচ্ছে। ভারি বৃষ্টি হলে কয়েক দিনের জন্য মশা কমে আবার বেড়ে যায়। বলা যায়, বৃষ্টি কমে যাওয়ার চার সপ্তাহ পর্যন্ত মশা বাড়তে থাকবে, এরপর হয়তো কমবে। বৃষ্টি অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে বলা হচ্ছে। সুতরাং ডেঙ্গু রোগী কমার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ৮২ হাজার ৪৭১ জন ঢাকার মহানগর ও এক লাখ ১৮ হাজার ৫১০ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকার মহানগরে ৬৩১ জন ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৩৪৪ জন।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top