সিডনী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার ১৪ বছর আজ


প্রকাশিত:
১৭ আগস্ট ২০১৯ ২২:০২

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০২:১৭

সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার ১৪ বছর আজ

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: আজ ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৪ বছর। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট চালানো ওই সিরিজ বোমা হামলার জন্য দায়ী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। জেএমবি বর্তমানে কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও দলটির সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গড়ে তোলা নব্য জেএমবি এখনও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর অনুসারী নব্য জেএমবি নিজেদের শক্তির জানান দিতে মাঝে মধ্যেই হামলার চেষ্টা করছে। চলতি বছরই তারা চারটি ঘটনায় পুলিশকে টার্গেট করে বোমা পুঁতে রেখেছিল। যার দুটি বিস্ফোরিত হয়ে কয়েকজন আহতও হয়েছেন। সর্বশেষ ‘ইসলামিক স্টেট অব বেঙ্গল’ নামে একটি ভিডিওতে তারা হামলার হুমকি দিয়েছে। নব্য জেএমবির বাইরে এখনও সক্রিয় রয়েছে আনসার আল ইসলাম নামের একটি জঙ্গি সংগঠন। এরা গোড়া থেকেই আল কায়েদার দর্শন অনুসরণ করে আসছে। 



২০০৫ সালের এই দিনে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলার প্রায় পাঁচশ স্থানে একই সময়ে বোমা হামলা চালায়। এতে প্রাণ হারান দু’জন, বোমার সিপ্লন্টারের আঘাতে আহত হন শতাধিক মানুষ। তাদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন আজও। 



ওই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় মোট ১৬১টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১০২টি মামলা নিষ্পত্তি হলেও ৫৯টি মামলার বিচার কাজ এখনো শেষ করা সম্ভব হয়নি। সবশেষ চলতি বছরের জুলাই মাসে ফরিদপুরের একটি মামলায় ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ১৫৯টি মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ছিল প্রায় চারশ। এর মধ্যে ৩৩৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় মোট ২৭ আসামিকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে আট জনের ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে। 



সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলায় মোট ১৮টি মামলা হয়। এর মধ্যে চারটি মামলার বিচার নিষ্পত্তি হয়েছে। পাঁচটি মামলা এখনো বিচারাধীন, বাকি ৯টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বিচার নিষ্পত্তি হওয়া চার মামলায় ৩৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। 



জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আবু গণমাধ্যমকে জানান, সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ঢাকায় ১৮টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও কয়েকটি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। চার্জশিট দেওয়া মামলাগুলোর মধ্যে দু’টি মামলায় রায়ও হয়েছে। বাকি কয়েকটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে শিগগিরই মামলাগুলোয় শেষ করে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে যাবে বলে জানান তিনি। 



আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলাকে তারা ‘সাউন্ড ব্লাস্ট’ নামে আখ্যায়িত করেছে। যেসব জায়গায় সিরিজ বোমা হামলা হয়েছে, প্রতিটি জায়গায় তারা ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন’ শিরোনামে লিফলেট ফেলে যায়। 



সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমেই মূলত নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। এরপর তারা বিভিন্ন জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এসব ঘটনায় সারাদেশে মোট ৩২২টি মামলা দায়ের হয়েছে, চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ২৮৯টি মামলার। এর মধ্যে ১১৫ মামলার বিচার কাজ শেষ হয়েছে, ২৫ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, আট মামলার তদন্ত কাজ চলছে। বিচার শেষ হওয়া ১১৫ মামলার মধ্যে ৯৫ মামলায় আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৫১ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৮৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। 



জেএমবির বিভিন্ন জঙ্গি হামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন ফেলে ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক সোহেল আহমেদ চৌধুরী ও জগন্নাথ পাড়ে হত্যার ঘটনা। ওই সময় বোমা হামলাকারী জেএমবি সদস্য ইফতেখার হাসান আল মামুন হাতেনাতে ধরা পড়ে। এ দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাত জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে আল মামুন ছাড়া বাকি ছয় জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। 



২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে সারাদেশে নিজেদের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতির তথ্য জানান দিলেও আরও আগে থেকেই জেএমবি জঙ্গি হামলা চালিয়ে আসছে। ২০০১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার গুড়পুকুরের রক্সি সিনেমা হল ও সার্কাস মাঠে বোমা হামলা চালায় তারা। এরপর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত হামলায় জড়িত ছিল জেএমবি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা চালিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় জেএমবির নব্য ধারা (নব্য জেএমবি)। 



জঙ্গি প্রতিরোধে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ অপরাধী আর জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া এক নয়। ভ্রান্ত হলেও জঙ্গিরা একটি সুনির্দিষ্ট মতাদর্শ মেনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালায়। তাদের মোটিভেটও করা হয় সেভাবে। সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করা যায় না। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করে থাকেন। জঙ্গিবাদ নিয়ে কর্মকর্তাদের সম্যক ধারণা থাকতে হয়।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top