স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জন্য যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলওয়ে
প্রকাশিত:
১২ মে ২০২০ ২০:৪০
আপডেট:
৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২৩
প্রভাত ফেরী: করোনার প্রকোপ ঠেকাতে সবার শুরুতে বন্ধ করা হয় রেল যোগাযোগ। ইতিমধ্যে খুলতে শুরু করেছে শপিংমলসহ পোশাক কারখানাসমূহ। এ অবস্থায় ঈদকে উপলক্ষ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়ে যাত্রবাহী ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে পুনরায় ট্রেন চলাচল চালু করা যায়, তা নিয়ে ইতোমধ্যে স্টেশনগুলোতেও প্রস্তুতি চলছে। এরই অংশ হিসেবে রাজশাহী রেলস্টেশনে টিকেট কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গোল গোল করে বৃত্ত করে দেওয়া হয়েছে। ট্রেন চালু হলে যাতে করে স্টেশনে আসা যাত্রীরা টিকেট কাটার জন্য তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান করতে পারে, সেজন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে ট্রেনের ভেতর শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ৭০-৭৫ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করা হবে। সেই অনুসারে টিকেটও বিক্রি করা হবে।
সম্প্রতি রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও-ঢাকা) মো. শওকত জামিল মোহসীন স্বাক্ষরিত বিভিন্ন স্টেশনে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের শর্তে ঈদুল ফিতরের আগে সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচলের অনুমতি আসতে পারে। এতে আরও বলা হয়, অনবোর্ড পরিচালিত ট্রেনগুলোর দরজা-জানালা, হাতল, সিট, হেড বেল্ট কাভার, টয়লেট, মেঝে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানকে খাবারের গাড়ি সুষ্ঠুভাবে পরিচ্ছন্ন করে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মানসম্মত খাবার পরিবেশন করতে হবে। এছাড়া ট্রেনে ভ্রমণকালে প্রত্যেক যাত্রীকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহারে স্টেশনগুলোর মাইকে ঘন ঘন ঘোষণা দিতে হবে, বড় অক্ষরে লিখে সাঁটিয়ে দিতে হবে কাউন্টারের সামনে। ইস্যু করা টিকেটের ওপর ‘ট্রেনে ভ্রমণকালে প্রত্যেক যাত্রীকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে’ মোটা সিল মেরে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। সর্বোপরি স্টেশনের দায়িত্ব পালনকালে প্রত্যেক কর্মচারীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কর্মকর্তারা জানান, সরকারের নির্দেশনা পেলেই যেকোনো সময় যাত্রীবাহী ট্রেন চালাবে রেল কর্তৃপক্ষ। ঈদুল ফিতরের আগেই সীমিত পরিসরে ট্রেন চলতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি সূত্র বলছে, কবে থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হবে সেই বিষয়ে এখনও সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পাকা কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে ঈদের আগে চালুর বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও কিছু কিছু মালবাহী ট্রেন চালু রাখা হয়। এসব ট্রেন দিয়ে মূলত সরকারের খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এরপর দেশের কোথাও যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট না হয় সেজন্য গত ১ মে থেকে দেশে পণ্যবাহী ট্রেন চালু করা হয় সব ধরনের শাকসবজি ও অন্যান্য পণ্য এই ট্রেনে পরিবহন করার জন্য। আগে বিভিন্ন মেইল ও লোকাল ট্রেনে যাত্রীবাহী বগির সঙ্গে এক বা একাধিক লাগেজ ভ্যান যুক্ত করে দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হতো। এখন এসব ভ্যান জোড়া দিয়ে আস্ত একটা পার্সেল ট্রেন বানিয়ে চালানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি রেলওয়ের এক বৈঠকে শুরুতে আন্তঃনগর ট্রেনের সব আসনের টিকেট বিক্রি না করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী পরিবহন করার জন্য কিছু আসন ফাঁকা রেখে রেখে টিকেট বিক্রির চিন্তা করা হচ্ছে। একটি বগিতে এবং পুরো ট্রেনে কী পরিমাণ টিকেট বিক্রি করলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাবে, এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মেকানিক্যাল বিভাগের পরিচালক মিজানুর রহমানকে। এ ছাড়া যেসব ট্রেনের টিকেট অনলাইনে বিক্রি করা হয় সেসব ট্রেনের শতভাগ টিকেট অনলাইনে বিক্রির বিষয়টিও পরিকল্পনায় আছে, যাতে স্টেশনে টিকেট কাউন্টারে ভিড় না হয়। এমনকি ট্রেনে টিকেট চেকিং বন্ধ রাখারও পরামর্শ এসেছে। তবে এই বিষয়গুলো শুধু আন্তঃনগর ট্রেনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। কারণ মেইল বা লোকাল ট্রেনে এই ব্যবস্থা কার্যকর করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া সব ট্রেনে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ সুরক্ষাসামগ্রী রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিষয়: করোনা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: