দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত শুরু, কানায় কানায় পূর্ণ ইজতেমা ময়দান

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ রোববার শেষ হচ্ছে এবারের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা। এই মোনাজাতে শরিক হতে দলে দলে এসেছেন লাখো মুসল্লি। এরই মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে ইজতেমা ময়দান। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা পরিচালনা করছেন দিল্লির মাওলানা সাদ অনুসারীরা।

শনিবার বাদ ফজর থেকেই মুসল্লিদের উদ্দেশে আম বয়ান শুরু হয়েছে। পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে এ বয়ান চলে রাত পর্যন্ত। এর আগে ১০ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এতে যোগ দেন মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা।

দ্বিতীয় পর্বে ৫৯টি দেশ থেকে ৩ হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছেন এবং দেশের ৬৪টি জেলার লাখ লাখ মানুষ অংশ নিচ্ছেন। আখেরি মোনাজাতে মুসল্লির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। শনিবার বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুরসালিন। তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান শেষে বিভিন্ন খিত্তায় নিজেদের মধ্যে বয়ান নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুস সাত্তার, বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা মোশারফ হোসেন ও বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জমশেদ।

হেদায়েতি বয়ান : আখেরি মোনাজাতের পূর্বে হেদায়েতি বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা জামশেদ। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরব্বি মাওলানা আশরাফ আলী জানান, হেদায়েতি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা জামশেদ।

বয়ানে যা বলা হলো : ইমান, আখলাক, দিনের ওপর মেহনত, ইসলামকে শক্তিশালী করা, সকল ভেদাভেদ ভুলে নিজের দেশ ও মুসলিম উম্মার শান্তি বৃদ্ধিতে ভ‚মিকা রাখা, নবী ওয়ালা কাজে দিন ও সময় ব্যয় করা। পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছাড়য়ে দেওয়া। ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করা। নামাজ রোজা ও আল্লাহর এবাদত করার ওপর বয়ান করা হয়।

যৌতুকবিহীন বিয়ে : শনিবার মূল বয়ান মঞ্চে যৌতুক বিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত না হলেও ইজতেমা ময়দানের বিশেষ কামরায় বর ও কনের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে শতাধিক বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা সাদ অনুসারিদের ২০২১ সালের বিশ্ব ইজতেমার সম্ভাব্য তারিখ রোববার আখেরি মোনাজাতের পূর্বে ঘোষণা করা হবে বলে জানান আয়োজক কমিটির মুরব্বি মনির হোসেন।

ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনই জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩৫ দেশ থেকে দেড় সহস্রাধিক মুসল্লি আসেন। ভাষাভাষি ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে রয়েছেন বিদেশি মেহমানরা।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শনিবার রাত থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মিরেরবাজার থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত, কামারপাড়া থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এবং বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

ইজতেমায় দ্বিতীয় পর্বে ৭ মুসল্লির মৃত্যু
বিশ্ব ইজতেমায় আসা আরও চার মুসল্লি মারা গেছেন। শনিবার পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে ৭ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- রংপুরের পীরগঞ্জ থানার ওসমানপুর এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে হুমায়ুন কবির (৬০), ঝিনাইদহ সদরের কালাহাট গোপালপুর এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে আ ফ ম জহুরুল আলম (৬৫), ঢাকার তুরাগ থানাধীন নলভোগ এলাকার ফজলুর রহমানে ছেলে ইলিয়াস মিয়া (৮৫) এবং গাইবান্ধার সাঘাটা থানার কামালেরপাড়া এলাকার ভিলু হাজীর ছেলে আব্দুর সোবাহান (৬৫)। দ্বিতীয় পর্বে এসে সুনামগঞ্জের গোয়ারাবাজার থানার চাঁনপুর এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে কাজী আলাউদ্দীন (৬২) মারা যান। বুধবার রাতে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় মারা যান মুসল্লি সুরুজ মিয়া (৬০)। একই রাতে টঙ্গী জংশনে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানা এলাকার মুসল্লি গোলজার। পুলিশ কন্ট্রোল রুম সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের সময় বন্ধ থাকছে যেসব সড়ক
ভোর ৫টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মহাখালী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা, মীরেরবাজার থেকে টঙ্গী ও আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাস সড়ক পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকছে। শনিবার সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আনোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইজতেমায় অংশ নেওয়া কয়েক লাখ মুসল্লি ছাড়াও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ইচ্ছুক অসংখ্য মুসল্লির যাতায়াতের সুবিধার্থে ভোর ৫টা থেকে বিমানবন্দর-গাজীপুরের জয়দেবপুর, চৌরাস্তা, মিরেরবাজার-টঙ্গী, আবদুল্লাপুর থেকে বাইপাস সড়কে আশুলিয়ায় ব্যারিকেড দিয়ে ইজতেমাসংলগ্ন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে।
তিনি আরও বলেন, ইজতেমায় যোগ দেওয়া বৃদ্ধ মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকবে। ইজতেমাস্থল থেকে চৌরাস্তামুখী ৩০টি এবং মহাখালীমুখী ৩০টি বাস চলাচল করবে। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ভালো রয়েছে। আশা করছি বাকি সময়টুকুও সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।

---