পা ধরছি, তবুও ওরা ফেরি ছাড়ে নাই
প্রকাশিত:
৩০ জুলাই ২০১৯ ১৭:৪০
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০১:১৪

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা থেকে নেয়া হচ্ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্সের গতি রোধ করে ৩ ঘণ্টা আটকে রাখে শিমুলিয়া ঘাটের ফেরি কর্তৃপক্ষ। কারণ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মন্ডল ঢাকায় ফিরবেন। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর সচিব আসার পর ছাড়া হয় ফেরি। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তিতাসের।
নিহত তিতাসের স্বজনরা বলেন, দেরি হলে ছেলেটি মারা যেতে পারে, এই আশঙ্কার কথা বারবার বলেছিলেন তারা। কিন্তু তাদের কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি। তিতাসকে বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়তে ভেজা চোখে অনেক কাকুতি মিনতি করেছেন। পায়ে পড়েছেন! তবুও মন গলেনি ঘাটের দায়িত্বরতদের। তারা যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডলের গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন। তার জন্য প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি থামিয়ে রাখেন। এমন কি প্রতিকার মেলেনি জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ কল করেও।
স্থানীয় পুলিশ, সেনাবাহিনীর লোকজন, পুলিশ আইজিপিকে বলেও কোনো সাড়া মেলেনি। তাছাড়া পুলিশের মাধ্যমে সেই ভিআইপিকে অবস্থার কথা জানায় তিতাসের স্বজনরা। কিন্তু তিনি কোন ভ্রুক্ষেপই করেন নি।
জানা যায়, নড়াইল কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। প্রথমে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে আইসিইউ সম্বলিত অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল। এরপর রাত আটটার দিক মাদারীপুরের কাঠালবাড়ী ১নং ফেরি ঘাটে পৌঁছে অ্যাম্বুলেন্সটি। রাত ৯ টার দিক কুমিল্লা নামের ফেরিটি শিমুলিয়া থেকে কাঠালবাড়ি ঘাটে এসে গাড়ি আনলোড করছিল। এ সময় ওই রোগীর লোকজন ঘাটে কর্মরতদের তাদের রোগীর অবস্থা বললেও যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডলের গাড়ি না আসা পর্যন্ত ফেরি ছাড়তে রাজি হয়নি।
এই ঘটনার পর থেকে তিতাসের মা সোনামণি ঘোষের কান্না থামছেই না। তিনি বলছিলেন, ‘তোমাগো কাছে বললে কি আমার পোলারে পামু? ওরা আমার পোলারে মেরে ফেলছে। আমি ফেরিওয়ালাগো পায় ধরছি, তবুও ওরা ফেরি ছাড়ে নাই। ফেরি ঠিক মতোন গেলে হয়তো পোলাডা বাঁইচা যাইত। আমাগো কান্না ওদের অন্তর গলে নাই।’
এ ব্যাপারে তিতাসের মামা বিজয় ঘোষ বলেন, ‘ফেরির লোকদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে ভিআইপি আসবে। আমাদের রোগী যে মরে যাচ্ছে, সেদিকে তাদের কোনো নজর নেই। কোনো সহযোগিতা না পেয়ে দিলাম ৯৯৯ কল। কিন্তু সেখানেও কোনো কাজ হলো না।’
এদিকে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে ঘাটে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের দাবি, তাদের কাছে রোগীর স্বজনরা রোগীর অবস্থা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়। এ বিষয় বিআইডব্লিউটিএ-এর চেয়ারম্যান খোঁজ নিয়েছেন বলে কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আব্দুস সালাম দাবি করেন।
এদিকে যুগ্ম সচিবের গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি ছাড়তে তিন ঘণ্টা দেরি হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সেই স্কুলছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শাহনওয়াজ দিলরুবা খানের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম।
তাছাড়া তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সোমবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: