নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহবান
প্রকাশিত:
৩১ জুলাই ২০১৯ ০৫:৫৫
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০১:৩৪

নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অন্যান্য দুর্ব্যবহারের মারাত্মক অভিযোগগুলোর জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের জবাবদিহিতা করতে হয় খুব অল্প। এসব নির্যাতন বন্ধে জাতিসংঘের কমিটি এগেইনস্ট টর্চারের যে সুপারিশ করেছিল তা বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, ওই কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা উচিত বাংলাদেশ সরকারের। নির্যাতন বিরোধী বিদ্যমান আইন প্রয়োগ করা উচিত এবং নির্যাতন বন্ধ করতে সরকার সিরিয়াস এ বিষয়ে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের কাছে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে। পাশাপাশি বর্তমানে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা যেসব নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন তা সরকারকে স্বীকার করতে হবে এবং এর দায় নিতে হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ব্যাপক নির্যাতনের বিষয়টি তারা প্রামাণ্য আকারে ধারণ করেছে জানিয়ে এইচআরডব্লিউ লিখেছে, আটক ব্যক্তিদের লোহার রড, বেল্ট, লাঠি দিয়ে প্রহার করা হয়। বন্দিদের বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়। ওয়াটারবোর্ডিং বা ডুবিয়ে মেরে ফেলার আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এরপর প্রহার করা হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দিদের গুলি করা হয়। বিশেষ করে পায়ের নিচে গুলি করা হয়। একে ইংরেজিতে ‘নীক্যাপিং’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তবে কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বলে থাকে, ক্রসফায়ারের সময় আত্মরক্ষার সময়ে এসব ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার অ্যান্ড আদার ক্রুয়েল, ইনহিউম্যান অর ডিগ্রেডিং ট্রিটমেন্ট অর পানিশমেন্টের অধীনে বাংলাদেশ বিষয়ে জাতিসংঘের কমিটি এগেইনস্ট টর্চার জেনেভায় পর্যালোচনা করবে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত।
সংস্থাটির দাবি- নির্যাতনের এসব তথ্য প্রকাশ করার জন্য মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ, অধিকারকর্মী এমন কি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালায় কর্তৃপক্ষ। ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার অনুমোদন করার পর ওই কমিটির অধীনে প্রথমবারের মতো পর্যালোচনার অধীনে আসতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ।
দেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো যে ভয়াবহ আকারে নির্যাতন চালায় তা স্বীকার করে নেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হলো ইউএন কমিটি এগেইনস্ট টর্চার-এ বাংলাদেশের উপস্থিতি বলেও দাবি তাদের।
মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর তদন্তকারীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ এখনও নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন চালায়। ওই আইন পাস হওয়ার পর নির্যাতন বিষয়ক ১৬০ টি ঘটনা প্রামাণ্য আকারে ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
প্রতিবেদনে আরও বলেছে, আইনটি প্রয়োগ করার পরিবর্তে এই আইনটিকে সংশোধন করতে সরকারের কাছে বার বার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তারা দাবি করেছে এই আইনকে কম নিষেধাজ্ঞামূলক করার জন্য। এর ফলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা নির্যাতন বন্ধের বিষয়ে সিরিয়াস কিনা তা নিয়ে। নির্যাতন বন্ধ বিষয়ক ওই আইনের ১২ নম্বর ধারা বাতিল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০১৫ সালে একটি প্রস্তাব জমা দেয় পুলিশ।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: