শর্ত না মানা হলে ফিরতে চায় না রোহিঙ্গারা


প্রকাশিত:
২২ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৩৫

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০১:২৪

শর্ত না মানা হলে ফিরতে চায় না রোহিঙ্গারা

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: নিজ দেশে ফেরা নিয়ে আবারও সংশয় তৈরি হয়েছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের মধ্যে। শর্ত মানলেই কেবল মিয়ানমারে ফিরবে বলে জানিয়েছে তারা। এদিকে ২২ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা – ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের প্রত্যাবাসন কমিশন দল মিয়ানমারে ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের স্বাক্ষর নেওয়ার কাজ শেষ করেছে।



জানা গেছে, ২২ আগষ্ট প্রথম দফায় ৩ হাজার ৪শ ৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সাক্ষ্য নিয়েছে ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে গত দুই দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে মিয়ানমারের তদন্ত টিম।



রোহিঙ্গাদের ফেরা নিয়ে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ও বুধবার (২১ আগস্ট) দুই দিনে দুই শতাধিক রোহিঙ্গার মতামত নেওয়া সম্পন্ন হয়। তবে প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম থাকলেও ফেরার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যায়নি তাদের মধ্যে। সাক্ষাৎকারদাতারা জানায়, রোহিঙ্গা স্বীকৃতি ও ভিটেমাটি ফিরে না পেলে ফেরত যাবে না তারা। একই সঙ্গে নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রসঙ্গেটিও ঘুরছে তাদের মুখে মুখে।



সকালে টেকনাফের শালবাগানে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মতামত জানিয়েছে জি-টু ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ আনোয়ার (৩০)। ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কী কথা হলো জানতে চাইলে আনোয়ার জানান, ‘ন যাইয়ুম, ন যাইয়ুম (যাব না, যাব না)।’



মিয়ানমারে ফিরে যেতে এখন রাজি না জানিয়ে মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, ‘প্রাণে বেঁচে এখানকার ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছি, সেখানে গিয়ে আবার কেনো ক্যাম্পে থাকব, এটি হতে পারে না। সেদেশে জীবনের নিরাপত্তা, ভিটেমাটি, নির্যাতনের বিচার এবং রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে ফিরতে রাজি আছি।’



প্রত্যাবাসনের জন্য সাক্ষাৎকার দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেছেন, ‘দাবি মানা না হলে, আমরা ফিরে যাবো না। প্রয়োজনে এখানে গুলি করে মেরে ফেলেন, তবুও ওপারে যাবো না। কেননা, সেখানে আইডিপি ক্যাম্পে এখনও রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি ভালো হয়নি, রোহিঙ্গাদের বন্দি রাখা হয়েছে।



বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এবং বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) প্রতিনিধিদের কাছে মতামত দিয়েছে প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম থাকা দুইশ’ ওপর নারী-পুরুষ। এর আগের দিন ২১ জন মতামত দিয়েছিল।



একারণে আগামীকাল বৃহস্পতিবার যে ‘প্রত্যাবাসন’ হওয়ার কথা রয়েছে, সেটি অনেকটা অনিশ্চিতের মতো বলেও মনে করছেন রোহিঙ্গারা। এদিকে সরকারি কর্মকর্তারা প্রত্যাবাসনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে জানালেও চোখে পড়ার মতো তেমন কোনও প্রস্তুতি দেখা যায়নি। 



আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-এর চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘আমরা চাই, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। তবে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন হলে আমরাও সহযোগিতা করতে রাজি আছি। তবে এই মূর্হুতে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনও পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। কেননা এখন পর্যন্ত সেদেশে যেসব রোহিঙ্গারা রয়েছে, তারা বন্দি জীবন পার করছে।’



তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি সময়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বাধীন পরির্দশনে আসা প্রতিনিধিদল আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা হবে প্রত্যাবাসনের বিষয়।’ তার আগে প্রত্যবাসন হলে রোহিঙ্গারা যেতে চাইবে না বলেও তার ধারণা।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top