দেশে রাইড শেয়ারিং সেবায় চলছে প্রতারণা ও যাত্রী হয়রানি
প্রকাশিত:
২৩ জুন ২০১৮ ১০:৩৯
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০১:৩১

বছর তিনেক আগে রাজধানী ঢাকায় প্রথম চালু হয়েছিল মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বা রাইড শেয়ারিং সেবা। অল্প দিনেই মানুষের কাছে এ সেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাপভিত্তিক এ পরিবহন সেবায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। অতিরিক্ত ভাড়া দাবি, অ্যাপ নির্দেশিত সোজা পথে না গিয়ে বাঁকা পথে গন্তব্যে যাওয়া, যাত্রা শুরুর আগেই রাইড চালু করা, কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে অস্বীকৃতি, একই জায়গায় একেক রকম ভাড়া, প্রমোকোডের নামে কোম্পানির প্রতারণাসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহণকারীরা।
জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরে প্রায় এক ডজনেরও বেশি অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। উবার, পাঠাও, সহজ.কম, চলো, বাহন, গাড়ি ভাড়া, ডাকো, ওভাই, আমার বাইক, শেয়ার মটর সাইকেল, বিডি বাইক ও ইজিয়ার রাজধানীতে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন সেবা চালু করেছে। মোটরসাইকেলে চড়ার সময় যাত্রীদের হেলমেট ব্যবস্থা না করায় দুর্ঘটনারও শিকার হচ্ছেন অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে এ সেবা জনপ্রিয় হলেও হয়রানির ঘটনায় যাত্রীরা বিমুখ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যাত্রীরা বলছেন, ঢাকা শহরে চলাচলে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো প্রমোকোডের অফার দিয়ে থাকে। এ অফারে সর্বোর্চ্চ ৭০ ভাগ পর্যন্ত ছাড়ের অফার দেওয়া হয়। চমকপ্রদ এই সুবিধা প্রদানের কোড দিলেও বাস্তব চিত্র তার উল্টো। কোনো রাইডারই সেই প্রমোকোড অনুযায়ী রাইড দিতে চায় না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রাইড সেবা গ্রহণকারীরা।
মোটরসাইকেলে যাতায়াতে কোনো ধরনের ছাড়ে যাত্রী বহন করতে রাইডারদের অনীহা থাকায় যাত্রীরা কোম্পানিগুলোর এ অফারকে প্রতারণা বলছেন অনেকে। এ ছাড়া দুই চাকার এ বাহনে যাতায়াতে ভাড়াও বেশি হওয়ায় যাত্রীরাও অতিষ্ঠ। তারা বলছেন, উবার ও পাঠাওসহ অ্যাপভিত্তিক রাইড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যধিক ভাড়া আদায় করছে। এ ভাড়ায় যাতায়াত করতে কষ্ট হচ্ছে ব্যবহারকারীদের।
যমুনা ফিউচার পার্কে যেতে পরিবাগ থেকে পাঠাওয়ের রাইডে উঠেন আকিল উদ্দিন। তার অভিযোগ, অজুহাত দেখিয়ে চালক তাকে ফার্মগেট-বনানী-বিশ্বরোড হয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে নিয়ে যায়। ২০ মিনিটের পথ উনি আমাকে নিয়ে পৌঁছান ৭০ মিনিটে। তাও আমার কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু বিপত্তিটা বাধল যখন ভাড়া দিতে গেলাম। অ্যাপসে ভাড়া দেখাল ১৫২ টাকা, আমি ১৫৫ টাকা দিলে তিনি বলেন, ‘ভাই এইটা কী দিলেন। ৩২০ টাকা দিলেও আমার পোষাবে না’। অনেক বাকবিতণ্ডার পর অনেকটা মানসম্মানের ভয়ে বাইকারকে ৩২০ টাকা দিতে বাধ্য হই। আকিল বলেন, পাঠাওয়ে অভিযোগ করেছি কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।
আবু তালেব নামে পাঠাওয়ের একজন সেবা গ্রহীতার অভিযোগ, রাইডার রাইড শেষে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে বলে, ‘অ্যাপে ভুল রিডিং শো করে, কিন্তু আসলে আমি যেখানে গিয়েছি, সবসময় একই দূরত্ব দেখায় ও একই টাকা দেখায়। সে নামার পর নানা টালবাহানা শুরু করে ও খারাপ ব্যবহার করে। উবারের একজন চালকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন এনামুল হাফিজ নামে একজন। তিনি বলেন, সিএনজি চালকরা যখন অতিরিক্ত ভাড়া নিত, তখন উবার খুব ভালো ছিল। এখন উবার-পাঠাওয়ের ভয়ে সিএনজি চালকরা ভাড়া যখন কমাইলো, এখন উবার অতিরিক্ত ভাড়া নেয়। উবার আমাদের পেয়ে বসেছে। সবসময় অতিরিক্ত সুবিধা খোঁজে। শামীমা নাসরিন নামের একজন অভিযোগ করেন, কিছু দিন আগে বনানী থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যেতে উবারে অনুরোধ পাঠান। কিন্তু চালক নতুন বাজার থেকে বনানী আসতে অস্বীকৃতি জানান। চালক দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ তার।
জানা গেছে, শুধুমাত্র ‘পাঠাও’ অ্যাপসের ব্যবহারকারীর সংখ্যা লাখেরও বেশি। তবে প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করতে চায় না ‘পাঠাও’। সম্প্রতি তাদের একটি ক্যাম্পেইনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রমজান মাসের ১০ দিনে ১০টির বেশি রাইড ব্যবহার করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা ২৫ হাজার। অর্থাত্ মাত্র ১০ দিনে রাজধানীর ২৫ হাজার মানুষ ২ লাখ ৫০ হাজার বার মোটরসাইকেল ডেকে চড়েছেন। আর প্রতি রাইড থেকে পাঠাও ২০ ভাগ কমিশন কেটে নেয়। সে হিসেবে দিনে কয়েক লাখ টাকা আয় করছে পাঠাও।
যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাড়তি ভাড়ার কারণে ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি নাখোশ পাঠাও এর উপর। রানা নামের এক রাইড সেবা গ্রহণকারী বলছেন, পাঠাও চালকরা প্রমোকোডের ছাড়ে যেতে চায় না। এছাড়া অ্যাপে অনুরোধ গ্রহণ করেও আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রেখে পরে তা বাতিল করাসহ নানা হয়রানি করা হয়। জানতে চাইলে পাঠাও এর মার্কেটিং বিভাগের প্রধান সাঈদা নাবিলা মাহবুব ইত্তেফাককে বলেন, প্রমোকোড কোন রাইডার যাত্রী বহন করলে তাকে কোম্পানি থেকে প্রমোকেড এর টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় রাইডাররা নগদ টাকার আশায় প্রমোকোড এর অফার দিয়ে যেতে চায় না। তাহলে কেন এই অফার দেওয়া হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব রাইডাররা যে যাচ্ছে না, তা না, কিছু রাইডার হয়ত নগদ টাকা পাওয়ার জন্য প্রমোকোড দিয়ে যাচ্ছেন না। অধিকাংশ রাইড গ্রহণকারীরা সুবিধা পাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন। সূত্র: ইত্তেফাক
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: