সরকারের মুখোশ খুলে দেবার জন্য বিএনপি নির্বাচনে থাকতে চায়
প্রকাশিত:
২৯ জুন ২০১৮ ১৫:৩৫
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০১:৩০

নিউজ ডেস্ক
খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর এখন নজর বাকি তিন সিটি নির্বাচনের দিকে। বিএনপি মনে করছে, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনেও সরকার ফলাফল ‘ছিনিয়ে’ নেবে। তবু সরকারের মুখোশ খুলে দিতে তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে চায়।
আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই তিনটি নির্বাচনেও জয়ী হতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। তারা দেখাতে চায়, উন্নয়নের পক্ষে মানুষ নৌকায় ভোট দিচ্ছে ও দেবে।
আগামী ডিসেম্বরে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে তিন সিটির ভোট হবে আগামী ৩০ জুলাই। গতকাল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থীরা।
খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তবে এই দুটি নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করার অভিযোগ তোলে বিএনপি। দলটি মনে করছে, বাকি তিনটি সিটিতেও একই ধরনের নির্বাচন হবে। কিন্তু তারপরও তারা নির্বাচনে থাকবে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সিটি নির্বাচনগুলোর দিকে জনগণ, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা বিশেষ নজর রাখছে। প্রকাশ্যে সিল মারা, বিরোধী পক্ষের এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে না দেওয়া, পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করার ঘটনাগুলো সরকারের বিপক্ষেই যাচ্ছে। এটা নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও বিভিন্ন পক্ষ থেকে আসছে। তিন সিটির নির্বাচনেও যদি সরকার একই ধরনের কৌশল নেয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) আরও কলঙ্কিত হবে। এতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপির দাবি তা আরও জোরালো হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি সব নির্বাচনে থাকতে চায়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারের মুখোশ খুলছে। প্রকৃত অর্থে পুলিশ ও প্রশাসনের একটি অংশ নির্বাচন করছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সেভাবে মাঠে না থাকলেও হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, দলটি জাতীয় নির্বাচনের আগে বড় শহরগুলোর নির্বাচনে হারতে চায় না। খুলনা ও গাজীপুরের মতো বাকি তিন সিটিতেও তারা জয়ী হতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনেরা দেখাতে চায়, জনগণ তাদের উন্নয়নের পক্ষেই আছে। এর পাশাপাশি এই তিন সিটিতে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে আরও কোণঠাসা করে দিতে চায়। দলটি মনে করছে, রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে তাদের প্রার্থী অভিজ্ঞ এবং জনপ্রিয়। বরিশালে প্রার্থী নতুন হলেও পারিবারিকভাবে প্রভাব রয়েছে। সাংগঠনিকভাবেও প্রার্থীর অবস্থান ভালো। সব মিলিয়ে তিনটি শহরেই দলের প্রার্থীর জয় নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রত্যয়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, গত পাঁচ বছর সিটি করপোরেশনগুলোতে বিএনপির মেয়র থাকায় মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। এবার তারা মনে করছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, এই দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে উন্নয়ন হবে। স্থানীয় নির্বাচনে মানুষ স্থানীয় সমস্যাকেই গুরুত্ব দেয়। এ কারণেই মানুষ খুলনা ও গাজীপুরে নৌকায় ভোট দিয়েছে। সামনের নির্বাচনেও ভোট দেবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির অভিযোগ গতানুগতিক। তাদের অভিযোগ সত্য হলে তারা মাঠে প্রতিরোধ গড়ে তুলত।
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীনদের নতুন নতুন কৌশল দেখা গেলেও বিএনপিকে সেভাবে কৌশলী হতে দেখা যায়নি। নির্বাচনের আগে প্রচারে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে সরগরম থাকলেও ভোটের দিন কেন্দ্র বা তার আশপাশে তাঁদের দেখা যায়নি। বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেভাবে মাঠে থাকছেন না।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে। সামনের তিনটি নির্বাচনে কী হয়, তা পুরো জাতি দেখবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রধান দুটি দলের অসম প্রতিযোগিতা চলছে। মনে হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসন ক্ষমতাসীনদের হয়ে অংশ নিচ্ছে।
তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, বিএনপি অনেক ভোট পাচ্ছে। কিন্তু ভোটের দিন মাঠে তাদের দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, তারা পুরো মাঠ ছেড়ে দিচ্ছে। তারা বলছে, তাদের দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু তারা যদি মাঠে থাকত তাহলে বোঝা যেত তাদের মারা হচ্ছে কি না এবং সবাই তা দেখত।
উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল তিন সিটি করপোরেশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। তিন সিটিতে উৎসবমুখর পরিবেশে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
রাজশাহীতে গাড়িবহর নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হকসহ দলের নেতাদের মধ্যে শাহীন শওকত, তোফাজ্জল হোসেন, শফিকুল হক প্রমুখ দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন।
মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে বিএনপি দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছে।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগের ভুলত্রুটি শুধরে তাঁরা নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে নগরের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন।
রাজশাহীতে মেয়র পদে ছয়জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা হলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ওয়াসিউর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের শফিকুল হাসান।
বরিশালে গতকাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে সাদিক সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং জনগণ তাঁকে ভোট দেবে বলে তিনি আশাবাদী।
মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, গাজীপুর ও খুলনায় বিএনপিকে হাত-পা বেঁধে পানিতে সাঁতার কাটার ব্যবস্থা করেছিল সরকার। বরিশালেও তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
এ ছাড়া বরিশালে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন, জাতীয় পার্টির বরিশাল জেলা আহ্বায়ক বশির আহম্মেদ ‘বিদ্রোহী’, বাসদের মনীষা চক্রবর্তী, কমিউনিস্ট পার্টির এ কে আজাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওবায়দুর রহমান ও খেলাফত মজলিসের এ কে এম মাহাবুব আলম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নয়জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাঁরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী, সিপিবি-বাসদের কমরেড আবু জাফর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মোয়াজ্জেম হোসেন খান, স্বতন্ত্র বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, নগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের, মুক্তাদির হোসেন তাপাদার ও কাজী জসীম উদ্দিন।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: