নির্জনতা : ডা: মালিহা পারভীন
প্রকাশিত:
৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:১৯
আপডেট:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৪১

প্রতিদিন ভর দুপুরে এক যুবক সাইকেলের বেল বাজিয়ে পাড়ার গলিতে দু তিনবার ধীরে চক্কর দিয়ে যায়।
মোড়ের মাথার ল্যাম্প পোস্টে একটা মরচে ধরা ডাকবাক্স ঝুলে আছে। কতদিন তা খোলা হয়নি জানা নেই কারো। তবে পাড়ার লোক কেউ কেউ দেখেছে একটা ছেলে প্রতিদিন দুপুরে সাইকেল চালিয়ে এসে এই বাক্সে একটি নীল খাম ফেলে দিয়ে যায়।
তবে আজ সাইকেলের শব্দ শোনা যাচ্ছে না। কেননা ছেলেটি হেঁটে এসে রাস্তার উপর একতলা সাদা বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ালো ।
প্রতিদিনের মতন এ বাড়ির সদ্য কৈশোর পার হওয়া মেয়েটিও স্নান সেরে ভেজা চুলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। মেয়েটি অপেক্ষা করে প্রিয় শব্দের।
নিজের সাথে বোঝাপড়ার পর অবশেষে ছেলেটা মেয়েটার মুখোমুখি আজ। পরনে তার লাল পাঞ্জাবি। হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ, নীল খাম। নাম না জানা প্রতিদিন দেখা সেই মেয়েটির গায়েও আজ লাল জামা, সাদা ওড়না। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলেটি।
অবশেষে হাতের গোলাপ বাড়িয়ে দেয় মেয়েটির দিকে। মেয়েটি নিস্পলক তাকিয়েই থাকে । হাত বাড়িয়ে গ্রহন করে না ছেলেটার ভালবাসার নৈবেদ্য।
বেশ খানিকক্ষন অপেক্ষা ক'রে ছেলেটি ফিরে যায় উপেক্ষার যন্ত্রণা নিয়ে।
ফাল্গুনের মিহি রোদে প্রতিদিনের মতন মেয়েটি দাঁড়িয়েছিল আজোও। চুল শুকাতে শুকাতে সে কান পেতে ছিল চেনা শব্দ শোনার। আজ সব সুনসান। চেনা সেই সাইকেলের ঘন্টা, ডাকবাক্সে চিঠি পড়াার শব্দ কিছুই নেই -- তবে কি আসেনি সে, কোথাও কেউ নেই !!
জন্মান্ধ মেয়েটি রেলিং এ ঝুঁকে আকুল ডেকে উঠে 'কোথায় , কোথায় তুমি আজ ?' সেই ডাক মধ্য দুপুরের নির্জনতায় শুধু ভেসে বেড়ায়।
জন্মবধির সেই ছেলেটির কানে তা একেবারেই পৌঁছায় না।
ছেলেটি ফিরে যাচ্ছে নিজের ছায়া, পথে প'রে থাকা ঝরা পাতা মাড়িয়ে। হাতে তার মলিন গোলাপ, সুগন্ধি মাখা নীল চিঠি।
দুরে কোথাও তখন কোকিল ডেকে উঠে। মেয়েটির চোখ ভিজে যায়।
আজ ছিল বিশ্ব ভালবাসা দিবস।
ডা: মালিহা পারভীন
কবি ও কথা সাহিত্যিক
সেগুনবাগিচা, ঢাকা
বিষয়: ডা: মালিহা পারভীন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: