ব্রন্টিত্রয় : সিদ্ধার্থ সিংহ
প্রকাশিত:
৩ অক্টোবর ২০২০ ২২:০১
আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:৩১

বোনের একটা খাতা হঠাৎ এসে পড়ল বড়দির হাতে। খাতা খুলে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বড়দি দেখলেন, তাতে অনেকগুলো কবিতা লেখা। সেগুলো পড়ে তিনি চমকে উঠলেন। তাঁর বোন এত ভাল কবিতা লেখে! তাঁকে ডেকে এনে প্রচুর প্রশংসা করলেন তিনি।
ইতিমধ্যে তাঁদের অগোচরে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের আর এক বোন। তিনি চুপটি করে সব শুনছিলেন। কবিতা লেখা যে খুব একটা খারাপ কাজ নয়, এটা জেনে তিনি তাঁর দিদিকে এত দিন যেটা বলতে পারেননি, সেটাই খুব ধীরে ধীরে নির্ভয়ে বললেন, আমিও কবিতা লিখি।
দিদি ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন, তুইও?
--- পরে দেখবি?
বড়দি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, যা, নিয়ে আয়।
সেই বোন তখন এক দৌড়ে ভেতরঘর থেকে পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখা তাঁর লেখা কবিতার খাতাটা নিয়ে এলেন।
সেগুলো পড়ে দিদি তো একেবারে মুগ্ধ। দু'জনের প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ হয়ে গেলেন তিনি। অবশেষে দুই বোনের কাছে লজ্জা মিশ্রিত গলায় সেই দিদিও স্বীকার করলেন, আমিও মাঝেমধ্যে একটা-দুটো কবিতা লিখি জানিস তো...
--- তাই নাকি? তা হলে এত দিন বলোনি কেন? দুই বোনই একসঙ্গে জিজ্ঞেস করে বসল।
দিদি বললেন, যে কারণে তোরা বলিসনি, সেই একই কারণে।
দু'বোনকেই তিনি সে দিন পাঠ করে শোনালেন তাঁর একে পর এক কবিতা। বোনেরা তাঁদের দিদির কবিতা শুনে একদম স্তম্ভিত।
আগেই ক্ষয় রোগে মারা গিয়েছিলেন তাঁদের বড় ভাই আর এক বোন। মা-হারা বাকি তিন বোনই বাবার কঠিন শাসনে বড় হচ্ছিলেন তাঁদের মাসির কাছে। নির্জন প্রকৃতি আর ঢালাও বইপত্র ছাড়া তাঁদের আর কোনও সঙ্গী ছিল না।
মেয়েরা কবিতা লিখছে শুনলে বাবা যদি ক্ষেপে যান! তাই বাবার কাছে এটা গোপন রাখার জন্য তিন বোনই বেছে নিলেন তিন-তিনটি ছদ্মনাম। অবশেষে তিন বোনের কবিতা এক মলাটে বন্দি করে জমানো কিছু টাকা দিয়ে বড়দি প্রকাশ করলেন একটি যৌথ কবিতার বই--- 'পোয়েমস বাই কারার, এলিস অ্যান্ড অ্যাকটন বেল'।
শুধু কবিতাতেই নয়, উপন্যাসেও তাঁরা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। লিখতেন ছোট গল্প, মুক্তগদ্য এবং প্রবন্ধও।
পি-রেফেলাইট যুগের অন্যতম প্রধান মহিলা কবি ও গদ্যশিল্পী শার্লট ব্রন্টি, এমিলি ব্রন্টি এবং অ্যান ব্রন্টি--- এই তিন বোনই পরবর্তিকালে বিশ্বসাহিত্যে 'ব্রন্টিত্রয়' নামে খ্যাত হন।
সাহিত্যের ইতিহাসে এমন আর একটিও পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে-পরিবারের তিন বোনের, তিন জনই কবিতা ও গদ্যে এমন যশস্বিনী।
সিদ্ধার্থ সিংহ
কলকাতা
বিষয়: সিদ্ধার্থ সিংহ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: