নীল পাহাড়ের চূড়ায় (পর্ব দুই) : শাহান আরা জাকির পারুল
প্রকাশিত:
২৬ নভেম্বর ২০২০ ২২:১৮
আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ০৭:৫৫

কথা ছিল ঐ নীল পাহাড়ের চূড়ায় বসে আমরা আবার ফিরে যাব আমাদের অতীতে ! তুমি গাইবে আর আমি শুনবো ! আমি তোমার হাতে হাত রেখে, কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে নিরালায় চেয়ে চেয়ে দেখব তোমার মুখখানি ! আকাশজোড়া ভালোবাসা ঢেলে দেব নীল পাহাড়ের চূড়ায় বসে !
জান, আমি কিন্তু তোমাকে সবখানেতেই দেখতে পাই ! এইযে দেখো আমি দিব্বি আমার শুন্য বেলকুনিতে বসে আছি ! মনে হচ্ছে তুমি পাশেই আছো !
একটু আগে গিটার এর ওস্তাদ এর সাথে চা নাস্তা খেতে খেতে দেখি তুমি মুচকি হেসে আমার পাশে বসে গেলে! অনামিকায় চাপ দিয়ে কি যেন বললে ! আমি তোমার হাতখানি ধরতেই ওস্তাদমশায় বলে উঠলেন ---আপু ঐ সোফাটায় আপনার পাশে সবসময় রাতুল ভাইয়া বসতেন! কেন যেন আজ হঠাৎ মনে হলো রাতুল ভাইয়া আপনার পাশেই বসে আছেন !
আমিতো ভিমরি খেয়ে গেলাম! আমার অদৃশ্য অনুভূতি ওস্তাদ মশায় ঠিক এসময়েই কিভাবে উপলব্দি করলেন? ওস্তাদের দুচোখের কোনে জল চিক চিক করছে ! আমার দুগাল বেয়ে রাশি রাশি অশ্রু ঝরে যাচ্ছে !
ওস্তাদ মশায় বলেই যাচ্ছেন একনাগাড়ে…
রাতুল ভাই শুধু আমার কলিগ ছিলেন না আপু ! আমার রুজি রোজগারের পথ সেইতো করে দিয়েছিলেন ! কেন যেন আজ তাকে খুব মনে পড়ছে !
আমি অবাক হয়ে ওস্তাদের মুখের দিকে চেয়ে থাকলাম !
কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ! আমিই বললাম, ঠিক আছে ভাইয়া আজ আপানি বাসায় গিয়ে রেস্ট করুন ! সামনের সপ্তাহে আবার দেখা হবে !
উনি চোখ মুছতে মুছতে 'আচ্ছা' বলে চলে গেলেন !
যাবার সময় আবার বলে গেলেন, কেন যে আজ খুব বেশি মনে পড়ছে আপু রাতুল ভাইয়ের স্মৃতি !
আবার এই কথা শুনে আমার বরফ গলা ভালবাসা যেন ঝর্ণা হয়ে প্লাবিত হতে থাকলো ঐ নীল পাহাড়টায়!
নীল পাহাড়ের গল্প আমি রাত দিন আপনমনে বিড়বিড়িয়ে তোমার সাথে শেয়ার করি !
তুমি কি তা জান? আমার মতো করে তুমি কি দেখতে পাও আমায় ? আমার না খুব জানতে ইচ্ছে করে! জানতে ইচ্ছে করে, তুমি কি ঐ নীল পাহাড়ের চূড়ায় লুকিয়ে আছো ? নাকি সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে রাক্ষস খোক্ষস এর দেশে তুমি রাজকন্যের খোঁজে পংখীরাজে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ ? সেই রাজকন্যেটি নিশ্চই আমি ! অন্য কেউ হতেই পারেনা !
কত্ত সাধনা করে তুমি নাকি আমায় পেয়েছিলে ! আমাদের বিয়ের দিনটি বছর ঘুরে এলেই, আদর ভরে নতুন করে আমায় তুমি মনে করিয়ে দিতে ! অনেকের বলতে শুনি, তাদের জন্মদিন, বিয়েরদিনটি, কোনদিক দিয়ে আসে আর যায় টেরই পায়না !
আমি অবাক হয়ে ভাবি, তাই কি হয় ! এই দেখো তুমিতো কাছে নেই আমার ! তবু কেমন অজান্তেই যেন তুমি জানান দিচ্ছ আমায় ! দেখতে দেখতে কতটা দিন, মাস, বছর, যুগ পেরিয়ে গেলো ! বলতো ? হয়তো পেরিয়ে যাবে শতাব্দী! তুমি আমায় এমনি করে জানান দেবে ছায়া হয়ে ! আমি চোখ মুদে, কিংবা আবিষ্ট জাগরণে খুঁজবো তোমায় !
এই দেখো, আমার ও যেন কি ঘটে যাচ্ছে আজকাল খুব বেশি ! আসলে, কদিন পরই তোমার কাছে আসবার আমার সেই উড়াল দেবার দিনটি ঘনিয়ে আসছে তো !
মনে হয় সেজন্যেই হয়তোবা…
চলবে
শাহান আরা জাকির পারুল
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক
বিষয়: শাহান আরা জাকির পারুল
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: