নীল পাহাড়ের চূড়ায় (পর্ব চার) : শাহান আরা জাকির 


প্রকাশিত:
১০ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:২৪

আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ০৮:১৩

 

সেদিন অফিস এ চায়ের আড্ডায় মৃত্যু প্রসঙ্গে জমজমাট সব ঘটনা একেকজন তার প্রিয়জনদের সম্পর্কে বলতে লাগলো! শারমিন বললো, তোমরা বিশ্বাস করো আর নাই করো,আমি বিশ্বাস করি মনেপ্রাণে।

মৃত্যুর আগে সব মানুষই একটু হলেও অজান্তেই সে বুঝতে পারে।

এই যেমন, আমার মা অনেক দিন থেকেই অসুস্থ ছিলেন! বাবা কোথাও গেলে দুদিন পরই মা'র জন্য অস্থির হয়ে যেতেন। কোথাও কাজে গেলে,এক সপ্তাহের জায়গায় তিনদিন না হতেই বাবা কাজ  ফেলে চলে আসতেন। 

আমরা কি ব্যাপার, জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হেসে বলতেন, তোমার মা পাগল ছাগল মানুষ বাপু। ডায়বেটিক, প্রেসার এর রুগী। ভাবলাম, যদি কিছু হয়।

আমরা অবাক হয়ে বাবার মুখের দিকে চেয়ে থাকতাম! বাসায় দুজন একসাথে থাকলে কিন্তু রাতদিন তাদের ঝগড়াঝাটি করেই কেটে যেত।

তো সেবার বাবা একইভাবে ঝটপট ঢাকা থেকে চলে এলেন। এসেই মা'র প্রেসার চেক করলেন। সন্ধেবেলা মায়ের হাত ধরে বাসার সামনে লোন এ পায়চারি করলেন। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার।

বাবাকে হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস টেনে বলতে শুনলাম। মাকে বলছেন, ইস, দেখো কেমন অন্ধকার। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা। না জানি কবরের মধ্যে আরো কত যে অন্ধকার।

মা নিশ্চুপ ছিলেন। পরদিন দুপুরে বাবার স্ট্রোক করলো । জ্ঞান থাকাবস্থায় তাঁর কোথায় কবর হবে, কেউ যেন কান্নাকাটি না করে সব বলে বিদায় নিলেন চিরতরে। 

আজ বাবা চলে যাবার বিশ বছর পূর্ন হোলো। জলজ্যান্ত সুস্থ বাবা আমার চলে গেলেন। আর অসুস্থ মা আমার এখনো বেঁচে আছেন বাবার স্মৃতি আগলিয়ে! তোমরা বলো এখন, বাবা কি সেদিন তার মনের অজান্তেই মৃত্যুদূতকে দেখতে পেয়েছিলেন।

রনি বললো, আমার আম্মুতো আরো বেশি বুঝতে পেরেছিলেন মনে হয়। ডিনার সেরে খাবার টেবিলে গল্প করতে করতে হঠাৎ বললেন, এই যে তোমরা আজ যেমন সব ভাইবোন একসাথে মিলেমিশে আছো, আমি না থাকলেও যেন এভাবেই থাকবে কেমন।

আমরা সবাই হঠাৎ মা'র মুখে এমন কথা শুনে এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। মা উঠে গিয়ে নামাজ পড়লেন!শুয়ে পড়লেন চুপচাপ। পরদিন ভোরবেলা মায়ের উঠতে দেরি হলো। আমরা ডাকাডাকি করে মায়ের ঘুম আর ভাঙাতে পারিনি। ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোক করেছিল!

তাহলে কি, মা সেদিন খাবার টেবিলেই মৃত্যুর কিছু আলামত দেখতে পেয়েছিলেন? এভাবে একে একে অনেকেই তাদের প্রিয়জনদের শেষ বিদায়ের ঘটনা বললেন।

নীলিমা খুব মন দিয়ে শুনে শুনে চোখের পানি ফেললো।

সে তার প্রিয়জনের চলে যাবার করুন মুহূর্তটি বলতে পারলোনা না কিছুতেই।

চলবে

 

শাহান আরা জাকির পারুল
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক
 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top