নীল পাহাড়ের চূড়ায় (পর্ব সাত) : শাহান আরা জাকির
প্রকাশিত:
১৩ জানুয়ারী ২০২১ ২১:১৮
আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ০৭:৪৭

নীলিমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু!
নীল পাহাড়টা আরো গাঢ় নীল রঙ ধারণ করছে ! হু হু বাতাস বইছে নীলিমার চারপাশ ! কি এতো ভাবছো বন্ধু ?
নীল পাহাড় ও বাতাস একসঙ্গে প্রশ্ন করে!
চমকে ওঠে নীলিমা!
শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলে, এই দেখোনা, প্রতিটি দিন এক একেকটা দুঃসহ খবর দেখছি পত্রিকার পাতায় !
- কেন, আজ আবার কি ঘটেছে !
- দরিদ্র পরিবার এর একটি মেয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে কাজ করতো !
- এটাতো খুশির কথা!
- তাইতো হওয়া উচিৎ ছিল !
- তো কি হয়েছে বলোনা !
- বলছিতো! কোন কিছুতে এতো অস্থির হবেনা বুঝেছো ?
- বাতাস অমনই বন্ধু, তুমি বলো!
- ও কে বাই।
একটা ধুলিঝড়ে দমকা হাওয়ায় সড়ে গেলো বাতাস !
নীল পাহাড়টা আরো নীল হয়ে নীলিমার চোখ দুটো জুড়িয়ে দিয়ে বললো, তারপর কি হলো বলো বন্ধু, আমি আছি তোমার পাশে! তারপর ঐ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি! ঐ এলাকার বাসিন্দা প্রভাবশালী ব্যক্তির গুনধর বখাটে ছেলে একদিন সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে! ঘটনার পর তাকে দু'জন মহিলা উদ্ধার করেছিলেন ! তারা গণমাধ্যমের কাছে ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছিলেন !
-বাহ্ ,খুব সুন্দর কথা! এরপর কি হলো ?
-এরপর যা হবার তাই হলো !
-মানে !
-মানে, গতকাল ঐ দুই মহিলা,নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতকে বলেন, মেয়েটির ধর্ষণ ঘটনার বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না!
দুই সাক্ষীর এমন বক্তব্য শুনে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে আদালতে লুটিয়ে পড়ে!কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি বলতে থাকে, "আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে! পড়ালেখা, স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা- সবই বন্ধ হয়ে গেছে! প্রতিনিয়ত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে! নানা গঞ্জনা সইতে হচ্ছে! আসামিরা প্রভাবশালী! তারা হুমকি দিচ্ছেন! গরিব বলে কি বিচার পাব না ?
-বলো কি বন্ধু! কি মর্মান্তিক! এতো রীতিমতো বেঈমানি, বিশ্বাসঘাতকতা!
-এজন্যইতো বলি, নারীরাই নারীর দুশমন!
-একদম ঠিক! অপর পক্ষের কাছ থেকে নিশ্চই টাকা পয়সা খেয়ে চাপের মুখে সত্য গোপন করেছে ! এজন্য দায়ী কে জানো বন্ধু ?
-জানি ! দারিদ্রতা! দারিদ্র, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষদের খুব সহজেই অমানুষ করে দেয় !
নীলিমার দীর্ঘশ্বাস নীল পাহাড়কেও স্তব্দ করে!
(চলবে)
শাহান আরা জাকির পারুল
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক
বিষয়: শাহান আরা জাকির পারুল
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: