দ্যা প্রফেট (অষ্টম অনুচ্ছেদ) : কাহলীল জীবরান
প্রকাশিত:
১৩ জানুয়ারী ২০২১ ২১:৪৬
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ২২:৩১
-2021-01-13-15-43-38.jpg)
মূল: কাহলীল জীবরান
অনুবাদ: রোজীনা পারভীন বনানী
ষষ্ঠদশ
একজন বললেন, আমাদের অত্ন-জ্ঞান সম্বন্ধে বলুন।
তিনি উত্তরে বললেন:
তোমার হৃদয় নিঃশব্দে জানে দিন এবং রাত্রির গোপনীয়তাকে। কিন্তু তোমার কান তোমার হৃদয়ের জ্ঞানের শব্দ শোনার জন্য তৃষিত থাকে। তুমি সর্বদা তোমার চিন্তায় যা জান তাই শব্দের মাধ্যমে জানতে পার। তোমার স্বপ্নের নগ্ন শরীরকে তুমি আঙুল দিয়ে স্পর্শ করতে পার এবং এ সমস্ত তোমার ভালোর জন্যই করা উচিত।
তোমার আত্মার লুকানো ঝরনা-উৎসের পানিকে অবশ্যই চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কুলকুল ধ্বনিতে সাগরের দিকে প্রবাহিত হতে হবে; তোমার অসীম গভীরতায় লুকানো সম্পদ তোমার চোখে উৎভাসিত হবে।
কিন্তু তোমার সেই অজানা সম্পদ ওজন করার কোন মাপকাঠি যেন না থাকে এবং তোমার জ্ঞানের গভীরতা জানার জন্য কোন লাঠি বা শব্দের রেখা অনুসন্ধান করোনা। কারন সত্তা একটা সীমাহীন এবং পরিমাপহীন সমুদ্র।
কখনো বলবে না, “আমি সত্যকে অবলোকন করেছি”। বরং বলবে, “আমি একটি সত্যকে অবলোকন করেছি”।
কখনো বলবে না, “আমি আত্মার পথকে অবলোকন করেছি”। বরং বলবে, “আমি আমার নিজের পথে হাঁটতে যেয়ে আত্মার সাক্ষাৎ পেয়েছি”।
কারণ আত্মা সব পথেই যাতায়াত করে। আত্মা কখনো এক রেখায় চলাচল করে না, অথবা কোন খাগড়ার ডাঁটার মতও জন্মায় না। অগণিত পাঁপড়িসমৃদ্ধ পদ্মের মত আত্মা নিজেই প্রস্ফুটিত হয়।
সপ্তদশ
তারপর একজন শিক্ষক বললেন, আমাদের শিক্ষাদান সম্পর্কে বলুন। তখন তিনি বললেন:
তোমার জ্ঞানের ভোরে আধাঘুমন্ত অবস্থায় যা আছে তা ব্যাতীত কোন মানুষ তোমার কাছে কোন কিছুই প্রকাশ করতে পারে না। যে শিক্ষক মন্দিরের ছায়ায় হাঁটছেন, তাঁর অনুসারীদের মাঝে, তিনি তাঁর জ্ঞানকে দান করেন না বরং তাঁর বিশ্বাস এবং ভালোবাসার ক্ষমতাকে দান করে থাকেন।
যদি তিনি কার্যতই জ্ঞানী হন তাহলে তিনি তোমাকে তাঁর জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করার আদেশ করবেন না, বরং তোমার নিজের মনের ভিতর প্রবেশ করার জন্য নেতৃত্ব দেবেন। একজন জ্যোতির্বিদ মহাশূন্য সম্পর্কে তার বোধকে তোমার কাছে বলতে পারে, কিন্তু সে তার বোধ তোমাকে দিতে পারে না।
একজন সংগীতজ্ঞ তার সুরে মহাশূন্যের ছন্দকে তুলে ধরতে পারে, কিন্তু সে তোমাকে সেই কান দিতে পারে না যা ছন্দকে উপভোগ করে, অথবা সেই স্বর যা প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে এবং যে সংখ্যাবিজ্ঞানে দক্ষ সে ওজন এবং পরিমাপের এলাকা সম্বন্ধে বলতে পারে, কিন্তু সে তোমাকে ঐ দিকে পরিচালিত করতে পারে না।
কারণ একজন মানুষের অন্তর্দৃষ্টি তার ডানাকে কখনো অন্য একজনকে ধার দেয় না। যেভাবে তোমরা প্রত্যেকে ঈশ্বরের জ্ঞানের রাজ্যে একাকী দাঁড়িয়ে আছ, ঠিক সেই ভাবে তোমাদের প্রত্যেকে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় জ্ঞানে এবং পৃথিবীর বোধ্যম্যতায় একাকী।।
অষ্টাদশ
একজন যুবক বললেন, আমাদের বন্ধুত্ব সম্বন্ধে বলুন।
তিনি উত্তর দিলেন, বললেন:
তোমার প্রয়োজনের উত্তরই তোমার বন্ধু। তোমার বন্ধুই তোমার ক্ষেত যে ক্ষেতে তুমি ভালবাসার বীজ বপন কর এবং কৃতজ্ঞতার সংগে ফসল সংগ্রহ কর এবং সে তোমার আহার এবং তোমার বাসগৃহ।
তুমি ক্ষুধা নিয়ে তার কাছে যাও এবং শান্তির জন্য তাকে খোঁজো। যখন তোমার বন্ধু তার মনের কথা তোমাকে বলবে তখন ভয়ে নিজের মনে ‘না’ বলতে ভয় পেয়ো না অথবা ‘হ্যাঁ” বলতে অরাজী হয়ো না।
যখন সে নিঃশব্দ থাকে তখনও তোমার হৃদয় তার হৃদয়ের কথা শোনা থেকে বিরত হয় না। কোন শব্দ ছাড়াই, বন্ধুত্বে, সমস্ত চিন্তা, সমস্ত কামনা, সমস্ত বাসনা জন্মগ্রহণ করে এবং বিভক্ত হয়ে যায়, উষ্ম প্রশংসা-ধ্বনিসহ আনন্দের সাথে।
যখন তুমি তোমার বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নেবে, তুমি দুঃখ পেয়ো না; তার ভিতরের যে জিনিসটি তুমি সবচেয়ে বেশী ভালবাস সেই সম্বন্ধে তার অনুপস্থিতিতে স্পষ্ট হয়ে নাও, যেমনি ভাবে যে পাহাড়ে চড়ে সে সমভূমিতে থাকা অবস্থায় পাহাড় সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে নেয়।
বন্ধুত্বে আত্মার গভীরতা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকবে না। ভালোবাসা সামান্য কিছু খোঁজে কিন্তু নিজস্ব রহস্য উদঘাটন ভালোবাসা নয়, বরং সন্মুখে নিক্ষিপ্ত একটা জাল: এবং শুধু অলাভজনক জিনিষই ধরা পড়ে।
এবং তোমার সর্বোত্তম জিনিষগুলো যেন তোমার বন্ধুর জন্য হয়। যদি সে তোমার স্রোতের ভাঁটা সম্বন্ধে জানে, তাকে তোমার জোয়ার সম্বন্ধেও জানতে দাও। তোমার বন্ধু কে যে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকে হত্যার জন্য তোমাকে অন্বেষণ করতে হবে?
বেঁচে থাকার জন্য সর্বদা তাকে অন্বেষণ কর। সে তোমার প্রয়োজনকে পূর্ণ করতে পারে কিন্তু তোমার শূন্যতাকে নয় এবং সুমধুর বন্ধুত্বে থাকবে উচ্চ হাস্যধ্বনি, এবং আনন্দের অংশীদারিত্ব। সামান্য জিনিষের শিশির বিন্দুতে হৃদয় তার ভোরবেলাকে অন্বেষণ করে আবার সতেজ হয়।
রোজীনা পারভীন বনানী
ঝিনাইদহ, বাংলাদেশ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: