সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

ম্যারেজ মিডিয়ার ফাঁদ : মিনা মাশরাফী


প্রকাশিত:
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:২০

আপডেট:
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:৩০

 

ষাটোর্ধ রায়হান সাহেব ‘ম্যারেজ মিডিয়া বন্ধন’ সেন্টার ধানমন্ডি গেলেন পাত্রীর খোঁজে। রিসেপসনিস্ট লম্বা সালাম দিয়ে সাদরে অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে বসালেন, “এখানে বসেন স্যার”।

কিছুক্ষন পর একজন এসে ১টা ফর্ম রায়হান সাহেবের হাতে দিয়ে বললেনঃ এটা পূরন করে দিন। আরো বললেন, “পাত্র না পাত্রী চাই স্যার, আপনার ছেলে নাকি মেয়ের জন্য?”
রায়হান সাহেব একটু হেসে বললেন, “আমার জন্য”।

“ঠিক আছে স্যার সব রকমই পাবেন। বায়োডাটাসহ ফর্মটা পূরন করে কাউন্টারে টাকা জমা দিয়ে এখানেই বসুন। একটু পর এসে নিয়ে যাব আপনাকে ম্যানেজার স্যারের রুমে”।

এ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার  অবাক হলেন না। এই মিডিয়ায় কাজ করার পর থেকে হরহামেশাই এরকম নানান অভিজ্ঞতায় ঝুলি ভর্তি। মনে মনে খুশী হলেন এসব কেসে কমিশনও ভাল পাওয়া যায়।

ম্যানেজারের রুমে নিয়ে গিয়ে  বললেন, “স্যার  ইনি মি: রায়হান কানাডা প্রবাসী। বাংলাদেশী পাত্রীর জন্য ফর্ম পূরন করে ১০,০০০/ ফি সহ জমা দিয়েছেন”।
ম্যানেজার হ্যান্ডশেখ করে, “প্লিজ টেক ইওর সিট”। এরপর ইন্টারকমে ২ কাপ কফি অর্ডার করলেন।
ম্যানেজারের টেবিলে চট্ট জলদি ছবি ও বায়োডাটা উপস্থাপন করা হলো। রায়হান সাহেব দেখে বাছাই করে ৪টি ছবি  বায়োডাটা সহ পছন্দ করে দিলেন।
ম্যানেজার  জানালেন, “আপনার বায়োডাটা ছবিসহ  কথা বলে রাখবো যে রাজী হবে তাদের একজনের সাথে আগামীকাল বিকাল ৩টায় পান্থপথ ‘বসুন্ধরা’ ফুড কোডে .. আমাদের লোকের সাথে পাঠিয়ে দেব .. ইন্টারভিউ নেবেন। পছন্দ না হলে পরে আর ও দেখাবো”।

পর দিন সময়মত ‘বসুন্ধরা’ ৮ তলা ফুড কোডে হাজির হলেন রায়হান সাহেব। ফোনটা বেজে উঠতেই রায়হান সাহেব সচকিত হয়ে এদিক ওদিক তাঁকাতেই দেখতে পেলেন ৪ নং টেবিলে বিউটি পার্লারে পলিশ করা সুদর্শনা একজন ৩০-৩২ বয়সী নারী সাথে বন্ধনের এসিসটেন্ট সহ বসে আছেন। তিনি এগিয়ে যেতেই নারী এসিসটেন্ট উঠে দাঁড়িয়ে.... “বসুন স্যার কথা বলুন .. কথা শেষ হলে আমাকে ফোন দেবেন”। এরপর
খাবার অর্ডার করে আলোচনা শেষ করে  ফোন নম্বরসহ কুশল বিনিময় করে বিদায় হলেন আজকের মত।

পর পর ক’দিন ঘোরাঘুরি বেড়ানোর পর অনেক অর্থ ব্যয় করে এনগেজমেন্ট হয়ে গেল পারিবারিক ভাবে। বিয়ের তারিখ ঠিক হবে । তার আগে দেখা করে পাত্রী দাবী করলো তার মেয়েকেসহ নিয়ে যেতে হবে। রায়হান সাহেব রাজী হলেন। এরপর আবার ঘুরতে যেয়ে দাবী করে বসলো দেশে ১টা ফ্লাট কিনে দিতে হবে। রায়হান বললেন, মিরপুরে আমার ফ্লাট আছে। দু’জনের যৌথ নামে করে নেব। খুশী হলো না, বায়না ধরলো গুলশানে তাঁকে একার নামে ফ্লাট কিনে দিতে হবে। এবার খুশী ...তবে একসেট হীরার গয়না সেট আজই চাই। তাও দিলেন। বিয়ের তারিখ ঠিক হলো ৫০,০০০০০ পন্চাশ লাখ মোহরানা। বিয়ে করে রায়হান সাহেবের যাবার সময় হলো বউ নেয়ার। প্রস্তুতি শুরু করবেন।
কানাডা গিয়ে ফোন করেন, বউ ভীষন ব্যাস্ত, পরে কথা বলবো বলবো করে যখন কথা হলো.. আর একটা দাবী তা হলো কানাডায় বউকে বাড়ী কিনে দিলে সে যাবে নতুবা যাবে না ।

অবশেষে বিচ্ছেদ নিয়ে মোহরানা আদায়। অত:পর নতুন প্রবাসী পাত্রর খোঁজে ম্যারেজ মিডিয়ায় পুন: যাতায়াত শুরু হয়ে গেল নতুন করে।


মিনা মাশরাফী
কবি ও কথা সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top