একটি বিয়ের গল্প : আহসান হাবীব


প্রকাশিত:
১২ মে ২০২১ ১৯:৫৩

আপডেট:
১১ এপ্রিল ২০২২ ২৩:০৩

 

অফিস ছুটির পর দুই বন্ধু পার্কে এসে বসল। সামাজিক দূরত্ব রেখেই বসল। যে কারণে দুজনকে অসামাজিক বন্ধু বলে বোধ হচ্ছিল। একজন হাসান অন্য জন শফিক। হাসানকে কিঞ্চিৎ চিন্তিত দেখাচ্ছিল।
- ভাবছি একটা বিয়ে করবো। হাসান বললো।
- বিয়েতো মানুষ একটাই করে। তা কি রকম বিয়ে করবি?
- মানে?
- মানে মানবিক বিয়ে নাতো! ঠাট্টার সুরে বলে শফিক
- মানবিক বিয়ের কথা আজকাল ফেসবুকে খুব শোনা যাচ্ছে। তবে না আমার বিয়েটা মানবিক না, আমারটা হবে পারমানবিক বিয়ে।
- কি বলছিস? আৎকে উঠে শফিক।
- ঠিকই শুনেছিস পারমানবিক বিয়ে!
- সেটা কিরকম?
হাসান উত্তর দিল না, মুচকি হাসল শুধু।
শফিকের কেমন সন্দেহ হল। হাসানের ব্রেন মিনিমামাম ৪০% ড্যামেজ হয়েছে। পর পর দুবার করোনা আক্রান্ত হয়ে ভাগ্যগুণে সুস্থ্য হলেও ব্রেনটা গেছে। করোনা হলে মানুষের ফুসফুস ড্যামেজ হয়। হাসানের হয়েছে ব্রেন ড্যামেজ।
‘আমার মনে হয় তোর পারমানবিক বিয়ের আগে একজন নিউরোলজির ডাক্তার দেখা।’ কথাটা বলতে গিয়েও বললো না। বললো
- বিয়ে যে করবি পাত্রীটা কে?
- একটা মেয়ে
- সবাইতো মেয়েদেরই বিয়ে করে
- না, ছেলেকেও করে, আমার বোন একটা ছেলেকে বিয়ে করেছে।
- উফ হেয়ালী না করে বল না পাত্রীটা কে?
- আমাদের অফিসের মিস মিলি খান। দ্বিতীয়বার আৎকে উঠল শফিক। এখন মনে হচ্ছে ৪০% না ব্রেন ৬০% ড্যামেজ হয়েছে হাসানের।
- তুই শিওর মিস মিলি খানকে বিয়ে করবি?
- ওভার সিওর
- মিলি খান জানে? 
এই প্রশ্নের উত্তর দিল না হাসান, নিশ্চুপ রইল। একটু ইতস্তত করে শফিক বললো ‘আমি যদ্দুর শুনছি মিস মিলি খানের তিনজন প্রেমিক আছে।’
- ঠিকই শুনেছিস আমি ওর তিন নম্বর প্রেমিক। ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাও বলতে পারিস।

আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে সপ্তাহ খানেক পর সত্যি সত্যিই একদিন হাসান বিয়ে করে বসল অফিসের সুন্দরী রিসেপসনিস্ট মিস মিলি খানকে, পারমানবিক বিয়েই বটে! অফিসে ছোট খাট একটা পারমানবিক বোমা ফাটলেও বোধ হয় অন্যরা এত অবাক হত না। ভিতরে ভিতরে সবাই তাজ্জব হয়ে গেল। এটা কিভাবে সম্ভব? হাসানের মত চুপচাপ গোবেচারা লোক কিভাবে এই সুন্দরীকে পটাল? শফিকের আর সহ্য হল না একদিন হাসানকে ধরেই বসল। কলিগ হলেও তারা বন্ধু বটে, এই প্রশ্ন সে করতেই পারে।
- আচ্ছা দোস কি করে এটা সম্ভব করলি?
- মানে?
- মানে তুই সিরিয়ালে তিন নম্বর প্রেমিক হয়েও মিস মিলি খানকে কিভাবে ম্যানেজ করলি? মানে বিয়ে করলি?
- সত্যি শুনতে চাস?
- অবশ্যই
- আসলে প্রথম দুই প্রেমিক প্রেম নিবেদনের সময় একটা ভুল করেছে। যে ভুলটা আমি করিনি।
- ভুলটা কি?
- ভুলটা হচ্ছে ওরা দুজনই ফুলস্কেপ কাগজে কবিতা লিখে প্রেম নিবেদন করেছে।
- আর তুই?
- আমি কোনো প্রেমপত্র পাঠাইনি। আমি পাঠিয়েছিলাম যৌতুকের লিস্ট।
- কি বলছিস? তোর সাহসতো কম না!!
- হ্যাঁ এ জন্যই ও আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে। সাহসী ছেলে ওর পছন্দ!

হাসান কবীর আর মিলি খান এখন হানিমুনে কক্সবাজারে। অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে দুজন। আর ব্যর্থ প্রেমিক দুজনও ছুটি নিয়েছে ১৪ দিনের (৭+৭)। তারা কোথায় গিয়েছে অবশ্য জানা যায় নি। খুব সম্ভব ভাষান চড়ে। রোহিঙ্গাদের দুঃখ দুর্দষা দেখে যদি নিজেদের দুঃখ একটু লাঘব হয়।।

 

লেখক: আহসান হাবীব
কার্টুনিস্ট/ সম্পাদক
উম্মাদ, স্যাটায়ার কার্টুন পত্রিকা
 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top