সিডনী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

এডভেঞ্চার কক্সবাজার : নুজহাত কবীর আরিয়া


প্রকাশিত:
২ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৫০

আপডেট:
১৩ এপ্রিল ২০২০ ০১:১৮

ফাইল ছবি

 

‘‘নাহ! কোথাও নেই বাবা মা !” রোদেলা চিন্তায় অস্থির হয়ে গেল। সে যে বাবা-মাকে একটা ফোন দিবে তারও কোন উপায় নেই। বৃষ্টি ধীরে ধীরে আরো বেড়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউগুলোও আরো বড় হয়ে ভেজা বালুতে ধাক্কা খাচ্ছে। রোদেলা ভিজে একাকার। তার চোখ থেকেও টপটপ পানি পড়া শুরু করে দিল। তার মনে হলো সে জীবনেও আর বাবা মার কাছে পৌছাতে পারবে না। কিন্তু পরে সে ভাবলো এভাবে হাল ছাড়লে হবেনা। সে কাঁপতে কাঁপতে ভেজা বালু দিয়ে হেটে হোটেল সি পার্লে পৌছালো। হোটেলের লবির দিকে এগোতে এগোতে ভাবলো যে এইভাবে বাবা মা তাকে ছেড়ে কিভাবে চলে যেতে পারে !

রোদেলা ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার এসেছে ঘুরতে পরিবারের সাথে। উঠেছে হোটেল সাইমনে। হোটেলে ঢুকেই সবার আনন্দে দাঁত বের হয়ে গেল। এত সুন্দর! এত বড়! ওরা চেক-ইন করে রুমে গিয়ে বিশ্রাম করে দুপুরের খাবার খেয়েই সমুদ্রে নেমে গেল। সন্ধায় সুন্দর সুর্যাস্ত দেখে হোটেলে ফিরলো। রাতের খাওয়ার সময় ঠিক হলো পরদিন সকাল সকাল কক্সবাজার ঘুরতে বের হবে।

সকালে তড়িঘড়ি উঠে (তাও ১০টায়) রেডি হয়ে ডাইনিং হলে নাস্তা করেই হোটেলের ঠিক করা গাড়িতে বেরিয়ে পড়লো। যাওয়ার পথে দেখলো হিমছড়ির রাস্তায় সুন্দর যায়গাগুলো। রাস্তার একপাশে পাহাড় অন্যপাশে সমুদ্র, ঝাউবন। বৃষ্টির জন্য কোথাও নামতে পারলো না। পথে পড়লো হোটেল রয়েল টিউলিপ সি পার্ল। সবাই মিলে সেখানে সুইমিংপুলে ঝাপাঝাপি করছিলো আর রোদেলার বাবা ছবি তুলছিল। তখনই রোদেলার মনে হলো গিয়ে একটু সমুদ্র দেখে আসি। ঐ তো কাছেই সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। সে বাবা মাকে বলল, তারাও বেশ আগ্রহ দেখাল ও বলল তারা আসছে। রোদেলা এগিয়ে গেল সমুদ্রের পাড়ে। দাড়িয়ে ভাবলো যে কি সুন্দর দৃশ্য! এখানে বন্ধুদের সাথে আসতে পারলে কি ভালো হতো। আহ, কি সুন্দর বাতাস। এভাবে অনেকক্ষণ সময় গড়িয়ে গেল, কিন্তু বাবা মা আর এলো না।

রোদেলা হাটতে হাটতে হোটেলে গিয়ে বাবা মা আর ওর ভাই অমি, কাউকেই পেল না। হোটেল লবির ডেস্কে গিয়ে  বলল, ‘‘আমার বাবা মাকে পাচ্ছি না। একটা ফোন করতে পারি?” মেয়েটা অবাক হয়ে ফোন এগিয়ে দিলো। রোদেলা বাবাকে ফোনে পেল না..., নেটওয়ার্ক প্রবলেম। মায়ের ফোন...বন্ধ।এখন রোদেলা ভয় পেয়ে গেল। ভাবা শুরু করলো এখন কি করবে? হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, ডেস্কেও মেয়েটাকে বললো, ‘‘আচ্ছা আমাকে হোটেল সাইমনে নামিয়ে দিয়ে আসা যায়? আপনাদের কোন ভ্যান কি ফ্রি আছে?” মেয়েটি বিরক্ত হয়ে কোথাও ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো। ফোন রেখে বললো ‘‘সরি! সব ভ্যান পর্যটকদের নিয়ে বাইরে আছে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।”

রোদেলা চিন্তিত ও ক্লান্ত হয়ে হোটেল লবির সোফায় ভেজা কাপড়ে বসে পড়লো। এসির বাতাসে ঠান্ডা লেগে হাঁচি দিতে লাগলো। যতবার হাঁচি দেয় ততবার সবাই অবাক হয়ে তাকায়। কান্তিতে চোখ বুজে আসলো। ‘‘রোদেলা! রোদেলা!” মা ডাকছে না? সে সাথে সাথে চোখ খুলে দেখলো মা ছুটে আসছে। পেছনে বাবা আর ভাই অমি। রোদেলা মাকে দেখেই কেঁদে দিল, আর দৌড়ে জড়িয়ে ধরলো। ‘‘তোমরা কোথায় ছিলা? আমি তো ভেবেছিলাম তোমাদের আর খুজেই পাবো না।” মা কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘‘ধুর বোকা মেয়ে। আমরা তোকে বীচে না পেয়ে পুরো হোটেল খুজতে গিয়েছিলাম। আবার লবিতে এসে দেখি তুই এখানে।”

রোদেলারা পরদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে প্লেনে উঠলো। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকলো তার হারিয়ে যাওয়া পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের দিকে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top