বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াল
প্রকাশিত:
১৬ মে ২০২০ ২০:০১
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ১৮:৫২

প্রভাত ফেরী: যত বেশি নমুনা পরীক্ষা চলছে, তত বাড়ছে সংক্রমণ সংখ্যা। সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার দুই মাসের মাথায় এসে যেন সর্বোচ্চ গতি পেয়েছে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব সংখ্যাকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭৫৮। এপ্রিলের শেষ সাত দিনের তুলনায় এই সংখ্যা ছিল ৩৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৪৩৮। মে মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় এই সংখ্যা ৩৫ দশমিক ৩১ ভাগ বেশি। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহের পর থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করে। টানা দুই সপ্তাহ সেই প্রবণতা অব্যাহত ছিল। তবে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে মৃত্যুর সংখ্যাও ব্যাপক পরিমাণে বেড়ে যায়।
তীব্র ছোঁয়াচে এই ভাইরাসে গত ৭ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত নয় দিনে মৃত্যু হয়েছে ১২০ জনের। অর্থাৎ এ সময় গড়ে প্রতিদিন ১৩ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়। মৃত্যুর তালিকায় শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ কেউ বাদ পড়েনি। শুক্রবার করোনাভাইরাসে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০২ জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৫। একই সময়ে বাংলাদেশ একজন বাতিঘর হারিয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে ১৫ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯৮ জনের। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর খোঁজ মেলার পর গত দুই মাসে আর কখনও এক দিনে এত নতুন রোগী শনাক্ত হয়নি।
শুক্রবার দুপুরে নিয়মিত অলনাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ঢাকায় ২০টি ল্যাবে ও ঢাকার বাইরে ২১টি ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় এই ৪১টি ল্যাবের মধ্যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে নয় হাজার ৫৪০টি। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫৮২ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ১২টি।
স্বাস্থ্য বুলেটিনের শুরুতে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, করোনাভাইরাসে বাংলাদেশ একজন বাতিঘরকে হারাল। ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, এবারই প্রথম পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু বেশি হয়েছে। মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ সাত জন, নারী আট জন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সের মধ্যে দুই জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে তিন জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আট জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে এক জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এক জন রয়েছেন। ঢাকা সিটিসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ২৭৯ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছে তিন হাজার ৮৮২ জন।
ঢাকায় করোনা আক্রান্তের হার কিছুটা কমেছে, বেড়েছে চট্টগ্রামে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তে ঢাকা বিভাগের ধারেকাছেও নেই দেশের অন্য বিভাগগুলো। তবে ঢাকা বিভাগে আক্রান্তের হার একটু কমেছে। এ বিভাগে আক্রান্ত ৮০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এখন আক্রান্তদের ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগে। অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ঢাকা মহানগরী ও এ বিভাগের জেলাগুলোয় করোনায় আক্রান্তে শতকরা হার একটু কমেছে। এর শতকরা হার ৮০ শতাংশের নিচে নেমেছে। আক্রান্তদের ৭৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ এখন ঢাকা বিভাগে। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৫৮ দশমিক ১১ শতাংশ এবং বিভাগটির জেলাগুলোতে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জেই সর্বাধিক আক্রান্ত।
নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে আমাদের আক্রান্ত বেড়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ এ বিভাগে। তারপরেই রয়েছে ময়মনসিংহ, সেখানে এর হার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। এরপর রংপুর বিভাগে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ, সিলেটে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং বরিশালে ১ দশমিক ১০ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে এসেছে ২৫৯ জন। মোট আইসোলেশনে আছে দুই হাজার ৭৪৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে এসেছে দুই হাজার ৭৯৭ জন। অদ্যাবধি কোয়ারেন্টাইনে এসেছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছে ৪৬ হাজার ৮০৫ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, সারা দেশে ৬৪ জেলায় ৬১৭টি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত। তৎক্ষণিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের সেবা দেওয়া যাবে ৩১ হাজার ১৬৫ জনকে। সারা দেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ৮ হাজার ৬৩৪টি। ঢাকার ভেতরে রয়েছে ২ হাজার ৯০০টি। ঢাকা সিটির বাইরে শয্যা হয়েছে ৫ হাজার ৭৩৪টি। এছাড়া আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে ৩২৯টি, ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১০২টি।
২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত আরও ১৯৮ পুলিশ : করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। তাই এই বাহিনীটির সদস্যরা সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৯৮ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত বাহিনীটিতে মোট দুই হাজার ১৪১ জন সদস্যের মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হলো। এ সময়ে সুস্থ হয়ে আরও ৩৫ জন পুলিশ সদস্য হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। সর্বমোট ৩৩৩ জন পুলিশ সদস্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। শুক্রবার কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল ছাড়াও রাজধানী এবং বিভাগীয় শহরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন বেসরকারি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত পুলিশের সাত সদস্য করোনা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। তারা হলেনÑ ডিএমপির কনস্টেবল জালাল উদ্দিন খোকা (৪৭), এএসআই শ্রী রঘুনাথ রায় (৪৮), কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৪০), এএসআই মো. আব্দুল খালেক (৩৬), কনস্টেবল মো. আশেক মাহমুদ (৪৩), এসআই সুলতানুল আরেফিন (৪৪) এবং এসবির এসআই নাজির উদ্দীন (৫৫)।
বিষয়: করোনা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: